গত ৭–১০ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চলাকালে ভারত শুধু পাকিস্তানের সঙ্গে লড়েনি; আড়ালে সক্রিয় ছিল চীন ও তুরস্কও। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ (ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাসটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর. সিংহ দিল্লিতে এক সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন। তাঁর ভাষায়, “এক সীমানা, কিন্তু শত্রু তিনটি”—এ সংঘাত থেকে ভারতের শিখনীয় বিষয়ও স্পষ্ট হয়।
তিন মুখোমুখি: পাকিস্তান, চীন ও তুরস্ক
- পাকিস্তান ছিল সামনের সারির প্রতিপক্ষ, সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়ে।
- চীন পাকিস্তানের প্রধান সহযোগী হিসেবে অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য ও কূট কৌশল দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ‘উধার করা ছুরি দিয়ে হত্যা’—নিজেরা সরাসরি না জড়িয়ে পাকিস্তানের হাত দিয়ে ভারতকে চাপে রাখা।
- তুরস্ক পাকিস্তানকে ‘বায়রাক্তার’সহ নানা ড্রোন, প্রশিক্ষিত অপারেটর ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে, যা সংঘাতে প্রত্যক্ষ ব্যবহৃত হয়।
‘লাইভ ল্যাব’-এ চীনা অস্ত্রের পরীক্ষা
সিংহ জানান, সাম্প্রতিক পাঁচ বছরে পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম চীনা। এ যুদ্ধকে চীন ব্যবহার করেছে তাদের জে-১০ ও জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান, পিএল-১৫ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও এইচকিউ-৯ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কর্মক্ষমতা সরাসরি পরীক্ষার ‘লাইভ ল্যাব’ হিসেবে। চীন পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা-তথ্যও জুগিয়েছে—ভারতীয় অস্ত্র মোতায়েন কোথায়, তা জানিয়ে।
পাকিস্তানের হঠাৎ যুদ্ধবিরতির কারণ
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিংহ বললেন, “একটি লুকোনো ঘুষি পাকিস্তানের ঘাড়ে ভর করেছিল—ওরা বুঝেছিল ঘুইয়ে এলে অবস্থা ভয়াবহ হবে।” ইঙ্গিত, ভারত বড় আকারের পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতি রেখেছিল, যা টের পেয়েই ইসলামাবাদ ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
তুর্কি ড্রোনের মাঠপরীক্ষা
সংঘাতে তুরস্ক-সরবরাহকৃত ‘বায়রাক্তার’ ড্রোন ও আরও একাধিক মডেল সক্রিয়ভাবে উড়েছে। প্রশিক্ষিত টিমসহ এগুলো সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে নামায় তুরস্ক, যা ভারতকে আকাশ প্রতিরক্ষা ও ড্রোনবিরোধী ব্যবস্থা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ভারতের শিক্ষণীয় বিষয়
সমন্বিত শত্রু মোকাবিলা: সীমান্তে পাকিস্তান থাকলেও পর্দার আড়ালে অন্য শক্তিও সক্রিয়—ভবিষ্যৎ সংঘাতে এ বাস্তবতা মাথায় রাখতে হবে।
আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালীকরণ: পরবর্তী দফায় শত্রু ভারতীয় জনপদকে লক্ষ্য করতে পারে; তাই দ্রুত আরও আকাশ প্রতিরক্ষা, কাউন্টার-রকেট-আটিলারি-ড্রোন ব্যবস্থা গড়া জরুরি।
স্বচ্ছ কৌশলগত বার্তা: “লাল রেখা পেরুলেই কড়া জবাব” এই বার্তা স্পষ্ট ছিল—এটি অব্যাহত রাখতে হবে।
সময়মতো থামার কৌশল: সিংহের ভাষ্যে, লক্ষ্য পূরণে পৌঁছেই যুদ্ধ থামানো ছিল ‘মাস্টারস্ট্রোক’; কারণ যুদ্ধ শুরু সহজ, নিয়ন্ত্রণ কঠিন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস নেতা জৈরম রমেশ মন্তব্য করেছেন, “চীন-পাকিস্তান সমন্বয় নিয়ে সংসদে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা দরকার।” আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনে দলটি এ দাবি তুলবে।
অপারেশন সিন্দুর দেখিয়েছে, আধুনিক যুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে এক দেশকে দেখালেও পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে একাধিক শক্তি। চীনের ‘লাইভ ল্যাব’ কৌশল ও তুর্কি ড্রোনের উপস্থিতি ভারতীয় নিরাপত্তা-পরিকল্পনাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। সতর্ক কূটনীতি, উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও স্পষ্ট রাজনৈতিক-সামরিক সমন্বয়ই আগামী দিনে ভারতের সুরক্ষার চাবিকাঠি।