০৮:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে ভারত, দেখবে নিজস্ব স্বার্থ একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মৃত্যু কর্ণফুলী নদী: দুই শতকের ইতিহাস, জীববৈচিত্র্য ও ভবিষ্যতের টানেলে স্বপ্ন বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের হোটেলে হামলা ও নারীদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের পর যুবদল নেতা বহিষ্কার, কী জানা যাচ্ছে সালমান শাহ: চার বছরের রাজত্বে অমর এক নায়ক মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত দামে আগুন, ফুটিয়েও আতঙ্ক: বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকার অসহায় লড়াই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় নাগরিকদের পরিচয়, শোক, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে?

মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত

দেশে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী-আক্রমণ বা ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ভিন্নধর্মী বার্তা প্রকাশ পাচ্ছে।

সেনাপ্রধানের স্পষ্ট নির্দেশ: মব ভায়োলেন্স বন্ধ করুন

সেনাপ্রধান সামরিক কমান্ডার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সাফ জানিয়েছেন— “যেকোনো মূল্যে জনতাকে আইন হাতে তুলে নেওয়া বন্ধ করতে হবে।” সামরিক সূত্র জানায়, গত সপ্তাহের উচ্চ-পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে তিনি বলেন, “এটি দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি; কোনো অজুহাত চলবে না। প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরে সন্দেহভাজন চোর বা সন্ত্রাসী ভেবে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সেনাপ্রধানের বার্তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় ও সমন্বিত পদক্ষেপে প্রেরণা দিতেই ছিল।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বারবার হুঁশিয়ারি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন— “মব ভায়োলেন্স বরদাশত করা হবে না। যারা আইন হাতে তুলে নেবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

গত মাসের একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন— “এটি আমাদের সমাজের জন্য লজ্জাজনক। কাউকে অপরাধী মনে হলে পুলিশের হাতে দিন; নিজে বিচার করবেন না।” তিনি জেলা প্রশাসন ও থানাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।

অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভিন্ন সুর

তবে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (কার্যত প্রধান নির্বাহী) তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব বলেন—

“এটি আসলে মব ভায়োলেন্স নয়, একধরনের চাপ সৃষ্টি। এই মানুষগুলো একটি প্রেশার গ্রুপ; তারা চাপ দিতে চায়।”

সাংবাদিকরা “কোন প্রেশার গ্রুপ? কারা জড়িত?” জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত স্পষ্ট করেননি, শুধু বলেন— “এটিকে শুধু মব ভায়োলেন্স বললে হবে না; এখানে একটি চাপ তৈরি করা হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে।”

মানবাধিকার কর্মীরা সতর্ক করেছেন, ঘটনাকে ‘চাপ সৃষ্টি’ বলে ব্যাখ্যা করলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মত

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সরকারের ভেতরের দ্বন্দ্বপূর্ণ বার্তা সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। একদিকে সেনাপ্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া অবস্থান, অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা— এই দ্বৈত-সঙ্কেত মাঠপর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ঝাপসা করে দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ-বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন—

“যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কেউ এটিকে চাপ সৃষ্টি বলে ব্যাখ্যা দেন, তাহলে মাঠপর্যায়ে পুলিশ কঠোর হবে কি না— সেটিই প্রশ্ন।”

স্থানীয় পর্যায়ে আতঙ্ক

যেসব এলাকায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান—

“সবাই ভয়ে আছে। কেউ কিছু বলতেও চায় না। সন্দেহ দেখা দিলে দল বেঁধে মানুষ মারধর করে, পুলিশ পরে আসে। কেউ বলে মামলা হবে না, আবার কেউ শোনায় কড়া ব্যবস্থা হবে— কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”

মানবাধিকার সংস্থার দাবি

এক মানবাধিকার সংস্থা বলছে—

“মব ভায়োলেন্সকে কোনোভাবে বৈধতা দেওয়া যায় না। ‘চাপ সৃষ্টি’ বললে এর পেছনে রাজনৈতিক বা সামাজিক যুক্তি খোঁজা হয়, যা অপরাধীকে উৎসাহিত করে।”

তাদের দাবি, সরকারকে শূন্য-সহনশীলতার নীতি ঘোষণা করে পরিষ্কার ও একক বার্তা দিতে হবে।

সেনাপ্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের বিপরীতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর যখন ঘটনাকে ‘চাপ সৃষ্টি’ আখ্যা দেয়, তখন সরকারের বার্তা দ্বিধাবিভক্ত দেখায়। এর ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বার্তা একীভূত না হলে এ ধরনের বর্বরতা থামানো কঠিনই হবে।

আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে ভারত, দেখবে নিজস্ব স্বার্থ

মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত

০৫:৩০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

দেশে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী-আক্রমণ বা ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ভিন্নধর্মী বার্তা প্রকাশ পাচ্ছে।

সেনাপ্রধানের স্পষ্ট নির্দেশ: মব ভায়োলেন্স বন্ধ করুন

সেনাপ্রধান সামরিক কমান্ডার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সাফ জানিয়েছেন— “যেকোনো মূল্যে জনতাকে আইন হাতে তুলে নেওয়া বন্ধ করতে হবে।” সামরিক সূত্র জানায়, গত সপ্তাহের উচ্চ-পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে তিনি বলেন, “এটি দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি; কোনো অজুহাত চলবে না। প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরে সন্দেহভাজন চোর বা সন্ত্রাসী ভেবে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সেনাপ্রধানের বার্তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় ও সমন্বিত পদক্ষেপে প্রেরণা দিতেই ছিল।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বারবার হুঁশিয়ারি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন— “মব ভায়োলেন্স বরদাশত করা হবে না। যারা আইন হাতে তুলে নেবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

গত মাসের একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন— “এটি আমাদের সমাজের জন্য লজ্জাজনক। কাউকে অপরাধী মনে হলে পুলিশের হাতে দিন; নিজে বিচার করবেন না।” তিনি জেলা প্রশাসন ও থানাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।

অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভিন্ন সুর

তবে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (কার্যত প্রধান নির্বাহী) তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব বলেন—

“এটি আসলে মব ভায়োলেন্স নয়, একধরনের চাপ সৃষ্টি। এই মানুষগুলো একটি প্রেশার গ্রুপ; তারা চাপ দিতে চায়।”

সাংবাদিকরা “কোন প্রেশার গ্রুপ? কারা জড়িত?” জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত স্পষ্ট করেননি, শুধু বলেন— “এটিকে শুধু মব ভায়োলেন্স বললে হবে না; এখানে একটি চাপ তৈরি করা হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে।”

মানবাধিকার কর্মীরা সতর্ক করেছেন, ঘটনাকে ‘চাপ সৃষ্টি’ বলে ব্যাখ্যা করলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মত

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সরকারের ভেতরের দ্বন্দ্বপূর্ণ বার্তা সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। একদিকে সেনাপ্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া অবস্থান, অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা— এই দ্বৈত-সঙ্কেত মাঠপর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ঝাপসা করে দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ-বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন—

“যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কেউ এটিকে চাপ সৃষ্টি বলে ব্যাখ্যা দেন, তাহলে মাঠপর্যায়ে পুলিশ কঠোর হবে কি না— সেটিই প্রশ্ন।”

স্থানীয় পর্যায়ে আতঙ্ক

যেসব এলাকায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান—

“সবাই ভয়ে আছে। কেউ কিছু বলতেও চায় না। সন্দেহ দেখা দিলে দল বেঁধে মানুষ মারধর করে, পুলিশ পরে আসে। কেউ বলে মামলা হবে না, আবার কেউ শোনায় কড়া ব্যবস্থা হবে— কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”

মানবাধিকার সংস্থার দাবি

এক মানবাধিকার সংস্থা বলছে—

“মব ভায়োলেন্সকে কোনোভাবে বৈধতা দেওয়া যায় না। ‘চাপ সৃষ্টি’ বললে এর পেছনে রাজনৈতিক বা সামাজিক যুক্তি খোঁজা হয়, যা অপরাধীকে উৎসাহিত করে।”

তাদের দাবি, সরকারকে শূন্য-সহনশীলতার নীতি ঘোষণা করে পরিষ্কার ও একক বার্তা দিতে হবে।

সেনাপ্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের বিপরীতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর যখন ঘটনাকে ‘চাপ সৃষ্টি’ আখ্যা দেয়, তখন সরকারের বার্তা দ্বিধাবিভক্ত দেখায়। এর ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বার্তা একীভূত না হলে এ ধরনের বর্বরতা থামানো কঠিনই হবে।