০৯:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে ভারত, দেখবে নিজস্ব স্বার্থ একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মৃত্যু কর্ণফুলী নদী: দুই শতকের ইতিহাস, জীববৈচিত্র্য ও ভবিষ্যতের টানেলে স্বপ্ন বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের হোটেলে হামলা ও নারীদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের পর যুবদল নেতা বহিষ্কার, কী জানা যাচ্ছে সালমান শাহ: চার বছরের রাজত্বে অমর এক নায়ক মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত দামে আগুন, ফুটিয়েও আতঙ্ক: বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকার অসহায় লড়াই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় নাগরিকদের পরিচয়, শোক, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে?

এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে?

ডেঙ্গু সাধারণত শহুরে রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এ বছর বাংলাদেশে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে—উপশহর ও গ্রামের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্তত ৪৫টি জেলার গ্রামীণ অঞ্চলে আগের বছরের তুলনায় বহুগুণ বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—কেন শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই রোগ গ্রাম-উপশহরে ছড়িয়ে পড়ল?

কারণ ১: অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ এবং আধা-শহুরে বিস্তার

এক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় আধা-শহুরে এলাকা গড়ে উঠেছে যেখানে আধাপাকা বাড়ি, বহুতল ভবন, বাজার, নতুন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এসব জায়গায় নিয়ন্ত্রিত নালা-নর্দমা বা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই।

  • জমে থাকা পানি ও নির্মাণাধীন জায়গায় পড়ে থাকা পাত্রে এডিস মশা অনায়াসে বংশ বিস্তার করছে।
  • গৃহস্থালি ব্যবহার্য পাত্র (ড্রাম, ট্যাংক, ফুলের টব) অব্যবস্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে।

কারণ ২: শহর থেকে মশা বা রোগীর চলাচল

  • ঢাকা ও বড় শহরগুলো থেকে ঈদ, উৎসব, ছুটি বা কাজের জন্য গ্রামের দিকে যাওয়া মানুষের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন যখন গ্রামে যান, তাঁকে কামড়ে নতুন এলাকায় এডিস মশা ভাইরাস বহন করতে শুরু করে।

কারণ ৩: স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতার ঘাটতি

  • গ্রামে এডিস মশা নিয়ে সচেতনতা তুলনামূলক কম।
  • অধিকাংশ মানুষ মনে করেন ডেঙ্গু ‘শহরের রোগ’; ফলে স্থানীয় পর্যায়ে লার্ভা ধ্বংস, পানি ঢেকে রাখা বা মশারি ব্যবহারের উদ্যোগ নেই।
  • অনেক এলাকায় পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান হয় না।

কারণ ৪: স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা সীমিত।
  • রোগ শনাক্তে দেরি হওয়ায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়, ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

কারণ ৫: জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তন

  • এ বছর বৃষ্টিপাতের ধরণ অস্বাভাবিক হয়েছে—বৃষ্টি থেমে গরম পড়ছে, আবার হঠাৎ বৃষ্টি হচ্ছে।
  • জমে থাকা পানির স্থায়িত্ব বেড়ে গেছে, যেখানে এডিস মশা জন্মায়।
  • তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন:
“শহুরে এডিস মশা এখন গ্রামীণ এলাকায়ও মানিয়ে নিচ্ছে। স্যানিটেশন সমস্যার কারণে তাদের বংশ বিস্তারের সুযোগ বেড়ে গেছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক অধ্যাপক মন্তব্য করেন:
“ডেঙ্গু এখন কেবল ঢাকা বা বড় শহরের রোগ নয়। মশার অভ্যাস বদলাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় লার্ভা ধ্বংসের কাজ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগ

  • জেলা-উপজেলায় সচেতনতামূলক মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ শুরু হয়েছে।
  • উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে।
  • স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সমাধান ও সুপারিশ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

  • বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না।
  • ড্রাম, ট্যাংক, ফুলের টব ঢেকে রাখতে হবে।
  • মশারি ব্যবহার করা এবং মশার ওষুধ স্প্রে করা উচিত।
  • ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা পর্যায়ে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে।

ডেঙ্গুর গ্রামীণ বিস্তার আমাদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। শহরে যেমন এডিস মশা মোকাবিলায় মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, গ্রাম-উপশহরেও এখন তেমনই সচেতনতা ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার সহযোগিতা ছাড়া এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়।

আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে ভারত, দেখবে নিজস্ব স্বার্থ

এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে?

০৪:১০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

ডেঙ্গু সাধারণত শহুরে রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এ বছর বাংলাদেশে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে—উপশহর ও গ্রামের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্তত ৪৫টি জেলার গ্রামীণ অঞ্চলে আগের বছরের তুলনায় বহুগুণ বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—কেন শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই রোগ গ্রাম-উপশহরে ছড়িয়ে পড়ল?

কারণ ১: অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ এবং আধা-শহুরে বিস্তার

এক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় আধা-শহুরে এলাকা গড়ে উঠেছে যেখানে আধাপাকা বাড়ি, বহুতল ভবন, বাজার, নতুন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এসব জায়গায় নিয়ন্ত্রিত নালা-নর্দমা বা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই।

  • জমে থাকা পানি ও নির্মাণাধীন জায়গায় পড়ে থাকা পাত্রে এডিস মশা অনায়াসে বংশ বিস্তার করছে।
  • গৃহস্থালি ব্যবহার্য পাত্র (ড্রাম, ট্যাংক, ফুলের টব) অব্যবস্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে।

কারণ ২: শহর থেকে মশা বা রোগীর চলাচল

  • ঢাকা ও বড় শহরগুলো থেকে ঈদ, উৎসব, ছুটি বা কাজের জন্য গ্রামের দিকে যাওয়া মানুষের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন যখন গ্রামে যান, তাঁকে কামড়ে নতুন এলাকায় এডিস মশা ভাইরাস বহন করতে শুরু করে।

কারণ ৩: স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতার ঘাটতি

  • গ্রামে এডিস মশা নিয়ে সচেতনতা তুলনামূলক কম।
  • অধিকাংশ মানুষ মনে করেন ডেঙ্গু ‘শহরের রোগ’; ফলে স্থানীয় পর্যায়ে লার্ভা ধ্বংস, পানি ঢেকে রাখা বা মশারি ব্যবহারের উদ্যোগ নেই।
  • অনেক এলাকায় পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান হয় না।

কারণ ৪: স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা সীমিত।
  • রোগ শনাক্তে দেরি হওয়ায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়, ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

কারণ ৫: জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তন

  • এ বছর বৃষ্টিপাতের ধরণ অস্বাভাবিক হয়েছে—বৃষ্টি থেমে গরম পড়ছে, আবার হঠাৎ বৃষ্টি হচ্ছে।
  • জমে থাকা পানির স্থায়িত্ব বেড়ে গেছে, যেখানে এডিস মশা জন্মায়।
  • তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন:
“শহুরে এডিস মশা এখন গ্রামীণ এলাকায়ও মানিয়ে নিচ্ছে। স্যানিটেশন সমস্যার কারণে তাদের বংশ বিস্তারের সুযোগ বেড়ে গেছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক অধ্যাপক মন্তব্য করেন:
“ডেঙ্গু এখন কেবল ঢাকা বা বড় শহরের রোগ নয়। মশার অভ্যাস বদলাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় লার্ভা ধ্বংসের কাজ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগ

  • জেলা-উপজেলায় সচেতনতামূলক মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ শুরু হয়েছে।
  • উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে।
  • স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সমাধান ও সুপারিশ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

  • বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না।
  • ড্রাম, ট্যাংক, ফুলের টব ঢেকে রাখতে হবে।
  • মশারি ব্যবহার করা এবং মশার ওষুধ স্প্রে করা উচিত।
  • ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা পর্যায়ে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে।

ডেঙ্গুর গ্রামীণ বিস্তার আমাদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। শহরে যেমন এডিস মশা মোকাবিলায় মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, গ্রাম-উপশহরেও এখন তেমনই সচেতনতা ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার সহযোগিতা ছাড়া এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়।