তিনি কামরূপে!’ তিনি কুমাররাজার কাছে সংবাদ পাঠালেন যে, চীনের ভিক্ষুকে অবিলম্বে যেন পাঠানো হয়।
কুমার রাজা একদিন বললেন, ‘আমার নিজের যদিও কোনো গুণ নেই তবু বিশিষ্ট গুণী লোকদের সর্বদাই আদর করি। আপনার গুণের খ্যাতি শুনে আপনাকে নিমন্ত্রণ করতে সাহসী হয়েছিলাম।’
হিউএনচাঙ জবাব দিলেন, ‘আমার জ্ঞানের পরিমাণ খুব বেশি নয়। আমার সম্বন্ধে সুখ্যাতি শুনেছিলেন এ কথা জেনে আমি অপ্রতিভ হচ্ছি।’ কুমাররাজা বললেন, ‘কী চমৎকার কথা! ধর্ম ও বিদ্যানুরাগের ফলে নিজেকে সামান্য জ্ঞান করা আর বিপদসংকুল বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়ানো কম কথা নয়। আপনাদের দেশ ও রাজার গুণেই এটা সম্ভব হয়। মহাচীনের নৃপতির বিজয়যাত্রা সম্বন্ধে একটা চমৎকার গানের কথা শুনতে পাই। সেই স্থানই কি আপনার সম্মানময় জন্মভূমি?’
হিউএনচাঙ বললেন, ‘সত্য। ঐ গীতে আমাদের রাজারই গুণ বর্ণিত হয়।’
কুমাররাজা বললেন, ‘আপনি যে এদেশের অধিবাসী, তা আমি মনে করতে পারি নি। বহুদিন থেকেই আমি পূর্বদেশের (চীনের) বিষয় চিন্তা করেছি। কিন্তু মধ্যে বহু নদী পর্বত থাকায় সে দেশে যেতে পারি নি।’
হিউএনচাঙ বললেন, ‘আমার, নৃপতির পবিত্র গুণগুলির খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত ব্যাপ্ত আছে।’
এইভাবে মাস দেড়েক চলল। তার পর শীলাদিত্য হর্ষবর্ধন গঞ্জামের যুদ্ধ শেষ করে ফিরে এসে শুনলেন যে, হিউএনচাঙ আছেন কামরূপে। তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘আমি কতবার তাঁকে ডাকলাম, তিনি এলেন না, এখন শুনি তিনি কামরূপে!’ তিনি কুমাররাজার কাছে সংবাদ পাঠালেন যে, চীনের ভিক্ষুকে অবিলম্বে যেন পাঠানো হয়। কুমাররাজা জবাব দিলেন, ‘আমার মাথা দেব তবু ধর্মগুরুকে এখন পাঠাব না।’
এই জবাব শুনে শীলাদিত্য সক্রোধে তাঁর অনুচরদের বললেন,
‘কুমাররাজা আমাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে! একটা সামান্য ভিক্ষুর জন্যে সে এরকম ব্যবহার করে কেমন করে?’
তখন তিনি সংক্ষেপে বলে পাঠালেন, ‘এ দূতসহ পত্রপাঠ মাথাটা পাঠিয়ে দেবে।’
কুমাররাজা তখন নিজের নির্বুদ্ধিতা বুঝতে পেরে নিজেই তাঁর সৈন্যদল, কুড়ি হাজার হস্তী, ত্রিশ হাজার নৌকা নিয়ে হিউএনচাঙকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গার জোয়ারে শীলাদিত্যের কাছে চললেন। শীলাদিত্য এই সময়ে রাজমহলের কাছে গঙ্গার উত্তর তীরে কজঙ্গলে তাঁর প্রাসাদে ছিলেন। কুমাররাজা গঙ্গার উত্তর তীরে একটা স্কন্ধাবার নির্মাণ করে ধর্মগুরুকে সেখানে রেখে নিজে শীলাদিত্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। শীলাদিত্য তাঁকে দেখে মিষ্ট কথায়ই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘চীনের ভিক্ষু কোথায় আছেন?’
(চলবে)