০৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩১)

মহম্মদ ইবন মুসার প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পূর্বে প্রথম আর্যভট “মূল” শব্দটি ব্যবহার করেন।

ভারতীয় ‘মূল’ শব্দটিতে আরবীয় প্রভাব একটি কল্পনা-প্রসূত মন্তব্য

বিখ্যাত গণিত ঐতিহাসিক সলোমন গাঁজ’ অ্যামেরিকান ম্যাথেমেটিক্যাল ম্যান্থলিতে একটি প্রবন্ধে বলেছেন, চীনারা মূল, তৃণলতা এবং গুন্মকে কুণ বলতেন। ভারতীয়রা গাছের শিকড়কে মূল বলতেন। মনে হয় এটি আরবীয় প্রভাব হেতু হয়েছে। প্রথমে এটি চীনাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে, তারপর চীনাদের কাছ থেকে ভারতীয়রা পায়।

গাঁজ এবং স্মীথ মনে করেন, ইংরাজীতে “root” শব্দটি আরবীয় শব্দ “Jadhr” শব্দ থেকে এসেছে। মূলত Jadhr শব্দটি বর্গভিত্তিক কোন ধারণা থেকে এসেছে। ৮২৫ খ্রীষ্টাব্দে মহম্মদ ইবন মুসা অল খোয়ারজমী তাঁর গ্রন্থে “jadhr” শব্দটির সংজ্ঞা অতি সহজভাবে দিয়েছেন। অনেক পণ্ডিত মনে করেন, কোন পূর্বসূরী হিক্র কর্তৃক খোয়ারজমী প্রভাবিত হওয়ার ফলে এটিকে তার গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পরবর্তী-কালে আরবরা এটির প্রকৃত অর্থ বিশ্বত হয়েছিলেন।

তারপর যখন মধ্যযুগে আরবীয় গ্রন্থগুলি ল্যাটিনে অনূদিত হয় তখন এটির ভুল অর্থ করা হয়। Radix শব্দটি এই ভুলের মাসুল হিসাবে jadhr শব্দটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হতে থাকে। প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন গাঁজ এবং স্মীথ এ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে ভারতীয় মূল এবং তৎসংক্রান্ত সম্বন্ধে যা বলেছেন তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ভারতীয় “মূল” শব্দটি সংখ্যা তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত আছে। মহম্মদ ইবন মুসার প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পূর্বে প্রথম আর্যভট “মূল” শব্দটি ব্যবহার করেন। তাছাড়াও আমরা পূর্বের পরিচ্ছদে দেখেছি বরাহমিহির, লল্প, ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীপতি, মহাবীর, দ্বিতীয় আর্যভট, দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য প্রমুখেরা মূল শব্দটি ব্যবহার করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন যে, ভারতীয়রা মূল শব্দটির কোন সংজ্ঞা দেন নি।

এবং প্রথম থেকেই বর্গ, ঘন প্রভৃতির সংজ্ঞা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন। এরা বলেছেন, দুটি সমরাশির গুণফল বর্গ, তিনটা সমরাশির গুণফল ঘন। এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করার পর ভারতীয় গণিতজ্ঞরা মূলাকর্ষণ (বর্গমূল ও ঘনমূল) করার সূত্র উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বলা যেতে পারে ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে মূল শব্দটি বিপরীত পদ্ধতির প্রত্যক্ষ সহযোগ এসেছে।

ব্রহ্মগুপ্ত কোন এক জায়গায় বলেছেন, “পদম্ কৃতির্যত তত’ অর্থাৎ কোন বর্গের মূল সেইটি, যেটি বর্গ করা হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি-ভারতীয়রা রাশির সঙ্গেই “মূল” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অতএব গাঁজের যে অনুমান, ভারতীয় মূল শব্দটিতে আরবীয় প্রভাব রয়েছে তা ভ্রমাত্মক।

(চলবে)

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩০)

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩০)

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩১)

১২:২১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

মহম্মদ ইবন মুসার প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পূর্বে প্রথম আর্যভট “মূল” শব্দটি ব্যবহার করেন।

ভারতীয় ‘মূল’ শব্দটিতে আরবীয় প্রভাব একটি কল্পনা-প্রসূত মন্তব্য

বিখ্যাত গণিত ঐতিহাসিক সলোমন গাঁজ’ অ্যামেরিকান ম্যাথেমেটিক্যাল ম্যান্থলিতে একটি প্রবন্ধে বলেছেন, চীনারা মূল, তৃণলতা এবং গুন্মকে কুণ বলতেন। ভারতীয়রা গাছের শিকড়কে মূল বলতেন। মনে হয় এটি আরবীয় প্রভাব হেতু হয়েছে। প্রথমে এটি চীনাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে, তারপর চীনাদের কাছ থেকে ভারতীয়রা পায়।

গাঁজ এবং স্মীথ মনে করেন, ইংরাজীতে “root” শব্দটি আরবীয় শব্দ “Jadhr” শব্দ থেকে এসেছে। মূলত Jadhr শব্দটি বর্গভিত্তিক কোন ধারণা থেকে এসেছে। ৮২৫ খ্রীষ্টাব্দে মহম্মদ ইবন মুসা অল খোয়ারজমী তাঁর গ্রন্থে “jadhr” শব্দটির সংজ্ঞা অতি সহজভাবে দিয়েছেন। অনেক পণ্ডিত মনে করেন, কোন পূর্বসূরী হিক্র কর্তৃক খোয়ারজমী প্রভাবিত হওয়ার ফলে এটিকে তার গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পরবর্তী-কালে আরবরা এটির প্রকৃত অর্থ বিশ্বত হয়েছিলেন।

তারপর যখন মধ্যযুগে আরবীয় গ্রন্থগুলি ল্যাটিনে অনূদিত হয় তখন এটির ভুল অর্থ করা হয়। Radix শব্দটি এই ভুলের মাসুল হিসাবে jadhr শব্দটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হতে থাকে। প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন গাঁজ এবং স্মীথ এ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে ভারতীয় মূল এবং তৎসংক্রান্ত সম্বন্ধে যা বলেছেন তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ভারতীয় “মূল” শব্দটি সংখ্যা তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত আছে। মহম্মদ ইবন মুসার প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পূর্বে প্রথম আর্যভট “মূল” শব্দটি ব্যবহার করেন। তাছাড়াও আমরা পূর্বের পরিচ্ছদে দেখেছি বরাহমিহির, লল্প, ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীপতি, মহাবীর, দ্বিতীয় আর্যভট, দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য প্রমুখেরা মূল শব্দটি ব্যবহার করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন যে, ভারতীয়রা মূল শব্দটির কোন সংজ্ঞা দেন নি।

এবং প্রথম থেকেই বর্গ, ঘন প্রভৃতির সংজ্ঞা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন। এরা বলেছেন, দুটি সমরাশির গুণফল বর্গ, তিনটা সমরাশির গুণফল ঘন। এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করার পর ভারতীয় গণিতজ্ঞরা মূলাকর্ষণ (বর্গমূল ও ঘনমূল) করার সূত্র উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বলা যেতে পারে ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে মূল শব্দটি বিপরীত পদ্ধতির প্রত্যক্ষ সহযোগ এসেছে।

ব্রহ্মগুপ্ত কোন এক জায়গায় বলেছেন, “পদম্ কৃতির্যত তত’ অর্থাৎ কোন বর্গের মূল সেইটি, যেটি বর্গ করা হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি-ভারতীয়রা রাশির সঙ্গেই “মূল” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অতএব গাঁজের যে অনুমান, ভারতীয় মূল শব্দটিতে আরবীয় প্রভাব রয়েছে তা ভ্রমাত্মক।

(চলবে)

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩০)

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩০)