০৭:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
প্রাক্তন মালয়েশিয়ার নেতা মাহাথিরের ১০০তম জন্মদিন ইরানের “ছায়া ব্যাংকিং” তেলের অবৈধ বাণিজ্য নেটওয়ার্কে নিষেধাজ্ঞা যেভাবে শুরু হয়েছিলো গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা জঙ্গী হামলা সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া ও তাদের ওপর সংহিসতা চলমান দেশের ৬৮টি নদীতে পানি বেড়েছে আগামী সাত দিন অব্যাহত বৃষ্টি : ঢাকার কিচেন মার্কেটে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ কতটা বাংলাদেশের কবিতা কখন প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথী হয় জুলাইয়ের নেতৃত্বের বিলাসিতা ও শিক্ষার্থীদের হতাশা রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যৌথ অভিযানে অবৈধ অস্ত্রধারী কিশোর গ্যাং লিডারসহ গ্রেফতার ৩

চিম্ময়, মুরাদনগর, কুশল ও ক্রিতদাসের হাসি

  • স্বদেশ রায়
  • ১১:১৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • 268

আওয়ামী লীগ আমলে মৌলবাদীরা  কুমিল্লায় দুর্গাপূজা মণ্ডপে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিয়ে একটা কারসাজি করার পরে সেখানে বেশ কিছু হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর হয়। অনেক হিন্দু কুমিল্লা থেকে দ্রুত তাদের মেয়েদের ঢাকায় নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। এ নিয়ে সারা পৃথিবীতে একটা প্রতিক্রিয়া হওয়ার পরে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে সারাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি দেখানোর জন্য নেমে যায়। সে সময় তারা একটি অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করে: একজন হিন্দুকে ধুতি পরিয়ে তার গলায় কাঠের মালা দিয়ে, একজন মওলবী সাহেবকে টুপি ও লুঙ্গি পরিয়ে, আরেকজন বৌদ্ধকে গৈরিক পোশাক পরিয়ে ও একজন খ্রিস্টানকে স্যুট পরিয়ে সামনের সারিতে রেখে, পেছনে তাদের কর্মীদের দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি মিছিল বের করে প্রতিটি জেলায়।

ওই সময় আওয়ামী লীগের কয়েকটি জেলার প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি বা এমপি ছাত্রজীবন থেকে পরিচিত ও বন্ধু হওয়ায়, এবং তারা আমাদের মতো সিনিয়র সিটিজেন হওয়ায়, তাদেরকে ফোন করে বলি, “আচ্ছা, একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে, দীর্ঘ দিনের রাজনীতিবিদ হিসেবে তোমাদের মানুষকে এইভাবে ‘সং’  সাজিয়ে মিছিল করাতে কষ্ট লাগেনি? বাংলাদেশে বিনোদন হিসেবে ‘সং’ এর দীর্ঘ ইতিহাস আছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘সং’ নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অনেক কাজ হয়েছে। তাছাড়া যারা এসব বই পড়ার সময় পাননি, তারা তো অন্তত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্তের বহুরূপী পার্টটুকু পড়েছেন। সেখানে শ্রীনাথ বহুরূপীর বাঘ সাজার কাহিনী হয়তো মনে আছে। অনেকের জন্য মনে করিয়ে দিতে চাই, অসহায় শ্রীনাথের বহুরূপী হিসেবে বাঘের পোশাকটির লেজ কেটে রাখার হুকুম দেন পিসেমহাশয় (বাড়ির কর্তা); তখন পিসিমা অন্দরমহল থেকে বিরক্তির স্বরে বলেন, ‘রেখে দাও ওটা, তোমার অনেক কাজে লাগবে।’”

আসলে পিসেমহাশয় ক্ষমতার প্রতীক; সে তার ইচ্ছে হলে কখনও অসহায়ের লেজেও কাটে, কখনও মাথায়ও কাটে।

বাংলাদেশের হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অবস্থা আসলে শ্রীনাথের মতো। ক্ষমতাবানরা ইচ্ছে করলে তাদের লেজও কাটে, আবার দরকার হলে মাথাও কাটে। যেমন দরকার হয়েছে চিম্ময়কে জেলে রেখে দিয়েছে। কত জঙ্গী মুক্তি পেয়ে গেছে আর চিম্ময়ের দাবী শুধু তার সম্প্রদায়ের মানুষ এদেশে সম্মানের সঙ্গে থাকতে চায়। এ ভূমির তারা সন্তান, মালিকও; নিজ পূর্বপুরুষের মাটিতেই সহস্র বছর ধরে তারা বংশ পরম্পরায় জন্মগ্রহণ করছে। তাই এখানে বাস করা তাদের জন্মগত অধিকার। সেই সম্মানিত অধিকার চেয়েছিলো; বলেই তাকে আজ জেলে থাকতে হচ্ছে। জামিনটুকু পর্যন্ত মিলছে না।

আগের একটি লেখায় চিম্ময়ের আন্দোলন মার্টিন লুথার কিংয়ের আন্দোলনের ধারার সঙ্গে তুলনা করেছিলাম। যার অর্থ চিম্ময়ের উদ্দেশ্য এই দেশ ত্যাগ নয়। এখানে তার সম্প্রদায়কে সম্মানের সঙ্গে থাকার জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর ধরে সে আন্দোলনের ধারা সৃষ্টি করা। আর চিম্ময়ের আন্দোলনই কিন্তু মূলত বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ। মেটিকুলাস ডিজাইনাররা যে ১৯৪৭-এর বন্দোবস্ত চাচ্ছে তার কনসিকুয়েন্স কিন্তু ভিন্ন। ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তে গেলে নেহেরু-লিয়াকত প্যাক্ট ফিরে আসবে, তখন বাংলাদেশের হিন্দুদের বৈধভাবে তাদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে বৈধ পথে সম্পদ বিক্রির অর্থ নিয়ে ভারতে যাবার অধিকার ফিরে আসবে এবং ভারত সরকারও তাদেরকে নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। অপরদিকে ভারতীয় মুসলমানরাও সেভাবে বাংলাদেশে চলে আসতে পারবে (অবশ্য ভারতীয় মুসলমানরা সেখানে যদিও হিন্দুত্ববাদী সরকার থাকুক না কেন, তারা একটি উন্নত-মুখী অর্থনীতি ও রুল অফ ল’র দেশ ছেড়ে একটি অস্থিতিশীল দেশে আসবে না। এটাই বাস্তবতা; এটাই মানুষের ধর্ম, যে কারণে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরুরাও আমেরিকায় গিয়ে সংখ্যালঘু হতে চায়।)

অন্যদিকে আরেকটি বিষয় আছে, ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তে গেলে রুল অফ ল অনুযায়ী ভূমির মালিকানা নিয়ে বিস্তর সমস্যা হবে বাংলাদেশে। কারণ, শুধু আইনের বইয়ের পাতায় লেখা নয়, বাংলাদেশ হাইকোর্টের রায়ও আছে: প্রথম জরিপে যার নামে পর্চা ছিল, সে যদি বৈধভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর না করে, তবে যতবার ওই জমির মালিকানার কাগজপত্র তৈরি করে হস্তান্তর করা হোক না কেন, সরকার মূল মালিকের ওয়ারিশকে ওই জমি ফেরত দিতে বাধ্য। তাই ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তে গেলে সারাদেশ বাদ দিন- শুধু ঢাকা শহরের জমির মালিকানা নিয়ে কী অবস্থা হবে, সেটা মেটিকুলাসওয়ালারা ভেবে দেখতে পারেন। কারণ, কোনো আন্দোলনের বিজয় কখনও চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু রুল অফ ল চিরস্থায়ী। তাকে জোর করে বদলানোর কোনো পথ নেই। তাই শান্তিপূর্ণ সমাধান ও বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই চিম্ময়ের আন্দোলন বাংলাদেশের স্বার্থেই। অথচ তাকে দিনের পর দিন জেলে থাকতে হচ্ছে।

অবশ্য তাতে চিম্ময়ের ক্ষতি নেই। কঠিন তপস্যা ছাড়া কে হবে বিজয়ী হতে পেরেছে? আর যে তপস্যা করে, তার জন্য শুভকামনা থাকে অনেকেরই। চিম্ময়ের প্রতিও সেই শুভ কামনা আছে বিপুল সংখ্যক এদেশের সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু ও বিদেশী মানবতার পক্ষের মানুষের।

তারপরও একজন অত্যন্ত রেশনাল মানুষ—আমার চিম্ময়কে নিয়ে গত লেখাটা পড়ার পরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজে পাঠান, চিম্ময় তাঁর দলের নেতার সঙ্গে দেখা হলে কতটা তোষামোদী করত, সেটা তিনি আমাকে সাক্ষাতে জানাবেন। আমি তার মেসেজের উত্তরে কিছু লিখিনি। কারণ, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ে বসে যতক্ষণ না সংখ্যালঘুর প্রকৃত মানসিক অবস্থা জানা সম্ভব হয়, ততক্ষণ বোঝা যায় না সংখ্যালঘুকে কতভাবে ‘সং’ সাজতে হয়। সেটা তার আসলরূপ নয়, বেঁচে থাকার নানান অবলম্বন মাত্র। এবং রাষ্ট্র তাকে এতটা অসহায় করেছে যে তাকে এভাবে ‘সং’ সাজতে হচ্ছে।

যেমন পাঁচ আগস্টের পর থেকে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতন ও হামলা চলছে, তাতে যদি ভারতে ইন্দিরা গান্ধির মতো কোনো নেতা থাকতেন (যার মধ্যে গণতন্ত্র ও মানবতা ছিলো, স্বৈরতন্ত্রের বাইরে- অটল বিহারি বাজেপেয়ী যাকে অভিহিত করেছিলেন, তাঁর মধ্যে হিন্দুদের আরাধ্য দুর্গার একটা রূপ আছে) আর তিনি যদি বর্ডার খুলে দিতেন হিন্দুদের জন্য, তাহলে এতদিনে বাংলাদেশ প্রায় হিন্দুশূন্য হয়ে যেতো।

যেমন আমার এক সাংবাদিক বন্ধু সম্প্রতি গ্রামে গিয়েছিল, তার এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। তার কাছে তার এলাকার অবস্থা জানতে চাইলে সে যা বলল, তারা সারাংশ হলো: সে নিজেই একজনের জমি ৫ আগস্টের আগে কিনতে চেয়েছিল—১৫ লাখ টাকা করে শতাংশ চেয়েছিল।  বিক্রেতা হিন্দু ভদ্রলোক। এখন ওই ব্যক্তি যে দাম পায়, সে দামেই বিক্রি করে ভারতে চলে যেতে চায়। তাছাড়া তাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে যে পাঁকা রাস্তা গত সরকারের আমলে তৈরি হয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে বিকেলে ও সকালে যেভাবে স্কুটার (মোটরসাইকেল) নিয়ে সরকার সমর্থক বা আন্দোলনে বিজয়ী এক ধরনের যুবকরা মহড়া দেয়, তার ফলে যাদের বাড়িতে এডাল্ট মেয়ে আছে, তারা জমি বিক্রির চিন্তাও করছে না; কীভাবে দ্রুত ভারতে চলে যাওয়া যায় সেই চিন্তাই করছে। আর মুরাদনগর ঘটনার পরে এ দুশ্চিন্তা তাদের আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই বাস্তবতা অর্থাৎ পাঁচ আগস্ট বিকেল থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যা ঘটে চলেছে—তারপরও যখন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বা সরকারের দাওয়াতে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের হাসতে হচ্ছে, ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে সেলফি তুলতে হচ্ছে, আর সেখানে মাথা নাড়তে হচ্ছে তাদের বক্তব্য শুনে—এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই আমরা সমান নাগরিক। ওই মাথা নাড়া, ওই হাসি মূলত শুধু ‘সং’ সাজা নয়, মূলত ‘ক্রিতদাসের হাসি’।

আর ক্রিতদাস বলেই এতকিছুর পরেও এই সম্প্রদায়ের মানুষকে হাসিমুখে তাদের পূজা বা উৎসব করতে হচ্ছে। যারা সংখ্যাগুরু অথচ শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনো দেশের সংখ্যালঘুদের প্রকৃত মানসিকতা বোঝেন না, তারা বুঝতে পারবেন না এই ক্রিতদাসের হাসি কতটা চোখের জলের শুষ্ক সমষ্টি। যেমন অনেক মরুভূমির বালু লক্ষ বছরের হারিয়ে যাওয়া সাগর বা নদীর এক কান্না। এই হাসি তখনই বের হয় যখন মানুষের চোখে আর জল থাকে না। চোখ মূলত মরুভূমি হয়ে যায়।

যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুশল চক্রবর্তীকে যেভাবে ভিসির রুমে অপমান করেছে ছাত্ররা—এর পর যথাযথ ‘ক্রিতদাস’ হতে না পারলে বেঁচে থাকা যায় না; আত্মহত্যা করতে হয়। অথচ ছাত্রদের এত বড় অন্যায়ের জন্য কোনো শাস্তি নেই। কারণ, শাস্তি তাদের কে দেবে? প্রথমত দিতে পারতেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি), যার রুমে এটা ঘটেছে। কিন্তু ছাত্ররাই তাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তিনি মেধার জোরে ওই পদে আসেননি; ছাত্ররা তাকে সেখানে বসিয়েছে। অন্যদিকে সরকার প্রধান প্রথম দিনেই জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিও ছাত্রদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত; তার যোগ্যতায় সেখানে তিনি আসেননি। অর্থাৎ তার অবস্থাও ওই ভিসির মতো। শুধু তার নয়, গোটা সরকারের অবস্থা ওই ভিসির মতো।

আর ওই ছাত্ররা আন্দোলনের আগে ছাত্র ছিল; এখন তারা কারা, সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব জানে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের দুই কোটি হিন্দু কি ভবিষ্যতে ‘ক্রিতদাসের জীবন’ যাপন করবে (দুই কোটি অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাও নয়)? আগামী শারদীয় দুর্গাপূজায় তারা কি ‘ক্রিতদাসের হাসি’ মুখে ছড়িয়ে সরকারী কর্তাদের নির্দেশ মতো পূজা করবে- না, তারা, চিম্ময়, কুশল, মুরাদনগরের দ্রৌপদিসহ সারা দেশের নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মর্যাদা ও ভবিষ্যতের জন্য ভাববে—সেটা এখন বড় প্রশ্ন।

আর যাই হোক, অত্যাচারী যতই শক্তিশালী হোক, তবুও মনে রাখতে হবে আজ ২০২৫-এ এসে আর মানুষকে দীর্ঘক্ষণ ক্রিতদাস বানানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশের হিন্দুরাও একেবারে ঐতিহ্যহীন কোনো গোঁষ্টি নয়। রাজা প্রতাপাদিত্য থেকে শুরু করে সূর্যসেন ও বিনয়, বাদল ও প্রীতিলতার উত্তরাধিকার তারা; তাদের জন্যই নয়, পৃথিবীর তাবত নিপীড়িতদের জন্য আরো আছে রবীন্দ্রনাথের অমোঘ সত্য উচ্চারণ:

“মুহূর্তে তুলে শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে,
যার ভয়ে ভীতু তুমি সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনই সে পালাইবে ধেয়ে;
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার, তখনই সে
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে;
দেবতা বিমুখ তারে, কেহ নাহি সহায় তাহার।”

রবীন্দ্রনাথের এই সত্য মেনে, কোনো বিদেশের দিকে তাকিয়ে নয়, বাংলাদেশের হিন্দুকে তার ক্রিতদাস দশা থেকে মুক্ত হতে হবে তার নিজ উন্নত শিরের মাধ্যমে—“চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির,” সেখানে ক্রিতদাস দশা সকল রুদ্র প্রতাপের রুক্ষ চোখের বিপরীতে জয়ী হয়।

লেখক: রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, ও The Present World।

প্রাক্তন মালয়েশিয়ার নেতা মাহাথিরের ১০০তম জন্মদিন

চিম্ময়, মুরাদনগর, কুশল ও ক্রিতদাসের হাসি

১১:১৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

আওয়ামী লীগ আমলে মৌলবাদীরা  কুমিল্লায় দুর্গাপূজা মণ্ডপে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিয়ে একটা কারসাজি করার পরে সেখানে বেশ কিছু হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর হয়। অনেক হিন্দু কুমিল্লা থেকে দ্রুত তাদের মেয়েদের ঢাকায় নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। এ নিয়ে সারা পৃথিবীতে একটা প্রতিক্রিয়া হওয়ার পরে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে সারাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি দেখানোর জন্য নেমে যায়। সে সময় তারা একটি অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করে: একজন হিন্দুকে ধুতি পরিয়ে তার গলায় কাঠের মালা দিয়ে, একজন মওলবী সাহেবকে টুপি ও লুঙ্গি পরিয়ে, আরেকজন বৌদ্ধকে গৈরিক পোশাক পরিয়ে ও একজন খ্রিস্টানকে স্যুট পরিয়ে সামনের সারিতে রেখে, পেছনে তাদের কর্মীদের দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি মিছিল বের করে প্রতিটি জেলায়।

ওই সময় আওয়ামী লীগের কয়েকটি জেলার প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি বা এমপি ছাত্রজীবন থেকে পরিচিত ও বন্ধু হওয়ায়, এবং তারা আমাদের মতো সিনিয়র সিটিজেন হওয়ায়, তাদেরকে ফোন করে বলি, “আচ্ছা, একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে, দীর্ঘ দিনের রাজনীতিবিদ হিসেবে তোমাদের মানুষকে এইভাবে ‘সং’  সাজিয়ে মিছিল করাতে কষ্ট লাগেনি? বাংলাদেশে বিনোদন হিসেবে ‘সং’ এর দীর্ঘ ইতিহাস আছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘সং’ নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অনেক কাজ হয়েছে। তাছাড়া যারা এসব বই পড়ার সময় পাননি, তারা তো অন্তত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্তের বহুরূপী পার্টটুকু পড়েছেন। সেখানে শ্রীনাথ বহুরূপীর বাঘ সাজার কাহিনী হয়তো মনে আছে। অনেকের জন্য মনে করিয়ে দিতে চাই, অসহায় শ্রীনাথের বহুরূপী হিসেবে বাঘের পোশাকটির লেজ কেটে রাখার হুকুম দেন পিসেমহাশয় (বাড়ির কর্তা); তখন পিসিমা অন্দরমহল থেকে বিরক্তির স্বরে বলেন, ‘রেখে দাও ওটা, তোমার অনেক কাজে লাগবে।’”

আসলে পিসেমহাশয় ক্ষমতার প্রতীক; সে তার ইচ্ছে হলে কখনও অসহায়ের লেজেও কাটে, কখনও মাথায়ও কাটে।

বাংলাদেশের হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অবস্থা আসলে শ্রীনাথের মতো। ক্ষমতাবানরা ইচ্ছে করলে তাদের লেজও কাটে, আবার দরকার হলে মাথাও কাটে। যেমন দরকার হয়েছে চিম্ময়কে জেলে রেখে দিয়েছে। কত জঙ্গী মুক্তি পেয়ে গেছে আর চিম্ময়ের দাবী শুধু তার সম্প্রদায়ের মানুষ এদেশে সম্মানের সঙ্গে থাকতে চায়। এ ভূমির তারা সন্তান, মালিকও; নিজ পূর্বপুরুষের মাটিতেই সহস্র বছর ধরে তারা বংশ পরম্পরায় জন্মগ্রহণ করছে। তাই এখানে বাস করা তাদের জন্মগত অধিকার। সেই সম্মানিত অধিকার চেয়েছিলো; বলেই তাকে আজ জেলে থাকতে হচ্ছে। জামিনটুকু পর্যন্ত মিলছে না।

আগের একটি লেখায় চিম্ময়ের আন্দোলন মার্টিন লুথার কিংয়ের আন্দোলনের ধারার সঙ্গে তুলনা করেছিলাম। যার অর্থ চিম্ময়ের উদ্দেশ্য এই দেশ ত্যাগ নয়। এখানে তার সম্প্রদায়কে সম্মানের সঙ্গে থাকার জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর ধরে সে আন্দোলনের ধারা সৃষ্টি করা। আর চিম্ময়ের আন্দোলনই কিন্তু মূলত বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ। মেটিকুলাস ডিজাইনাররা যে ১৯৪৭-এর বন্দোবস্ত চাচ্ছে তার কনসিকুয়েন্স কিন্তু ভিন্ন। ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তে গেলে নেহেরু-লিয়াকত প্যাক্ট ফিরে আসবে, তখন বাংলাদেশের হিন্দুদের বৈধভাবে তাদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে বৈধ পথে সম্পদ বিক্রির অর্থ নিয়ে ভারতে যাবার অধিকার ফিরে আসবে এবং ভারত সরকারও তাদেরকে নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। অপরদিকে ভারতীয় মুসলমানরাও সেভাবে বাংলাদেশে চলে আসতে পারবে (অবশ্য ভারতীয় মুসলমানরা সেখানে যদিও হিন্দুত্ববাদী সরকার থাকুক না কেন, তারা একটি উন্নত-মুখী অর্থনীতি ও রুল অফ ল’র দেশ ছেড়ে একটি অস্থিতিশীল দেশে আসবে না। এটাই বাস্তবতা; এটাই মানুষের ধর্ম, যে কারণে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরুরাও আমেরিকায় গিয়ে সংখ্যালঘু হতে চায়।)

অন্যদিকে আরেকটি বিষয় আছে, ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তে গেলে রুল অফ ল অনুযায়ী ভূমির মালিকানা নিয়ে বিস্তর সমস্যা হবে বাংলাদেশে। কারণ, শুধু আইনের বইয়ের পাতায় লেখা নয়, বাংলাদেশ হাইকোর্টের রায়ও আছে: প্রথম জরিপে যার নামে পর্চা ছিল, সে যদি বৈধভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর না করে, তবে যতবার ওই জমির মালিকানার কাগজপত্র তৈরি করে হস্তান্তর করা হোক না কেন, সরকার মূল মালিকের ওয়ারিশকে ওই জমি ফেরত দিতে বাধ্য। তাই ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তে গেলে সারাদেশ বাদ দিন- শুধু ঢাকা শহরের জমির মালিকানা নিয়ে কী অবস্থা হবে, সেটা মেটিকুলাসওয়ালারা ভেবে দেখতে পারেন। কারণ, কোনো আন্দোলনের বিজয় কখনও চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু রুল অফ ল চিরস্থায়ী। তাকে জোর করে বদলানোর কোনো পথ নেই। তাই শান্তিপূর্ণ সমাধান ও বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই চিম্ময়ের আন্দোলন বাংলাদেশের স্বার্থেই। অথচ তাকে দিনের পর দিন জেলে থাকতে হচ্ছে।

অবশ্য তাতে চিম্ময়ের ক্ষতি নেই। কঠিন তপস্যা ছাড়া কে হবে বিজয়ী হতে পেরেছে? আর যে তপস্যা করে, তার জন্য শুভকামনা থাকে অনেকেরই। চিম্ময়ের প্রতিও সেই শুভ কামনা আছে বিপুল সংখ্যক এদেশের সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু ও বিদেশী মানবতার পক্ষের মানুষের।

তারপরও একজন অত্যন্ত রেশনাল মানুষ—আমার চিম্ময়কে নিয়ে গত লেখাটা পড়ার পরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজে পাঠান, চিম্ময় তাঁর দলের নেতার সঙ্গে দেখা হলে কতটা তোষামোদী করত, সেটা তিনি আমাকে সাক্ষাতে জানাবেন। আমি তার মেসেজের উত্তরে কিছু লিখিনি। কারণ, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ে বসে যতক্ষণ না সংখ্যালঘুর প্রকৃত মানসিক অবস্থা জানা সম্ভব হয়, ততক্ষণ বোঝা যায় না সংখ্যালঘুকে কতভাবে ‘সং’ সাজতে হয়। সেটা তার আসলরূপ নয়, বেঁচে থাকার নানান অবলম্বন মাত্র। এবং রাষ্ট্র তাকে এতটা অসহায় করেছে যে তাকে এভাবে ‘সং’ সাজতে হচ্ছে।

যেমন পাঁচ আগস্টের পর থেকে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতন ও হামলা চলছে, তাতে যদি ভারতে ইন্দিরা গান্ধির মতো কোনো নেতা থাকতেন (যার মধ্যে গণতন্ত্র ও মানবতা ছিলো, স্বৈরতন্ত্রের বাইরে- অটল বিহারি বাজেপেয়ী যাকে অভিহিত করেছিলেন, তাঁর মধ্যে হিন্দুদের আরাধ্য দুর্গার একটা রূপ আছে) আর তিনি যদি বর্ডার খুলে দিতেন হিন্দুদের জন্য, তাহলে এতদিনে বাংলাদেশ প্রায় হিন্দুশূন্য হয়ে যেতো।

যেমন আমার এক সাংবাদিক বন্ধু সম্প্রতি গ্রামে গিয়েছিল, তার এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। তার কাছে তার এলাকার অবস্থা জানতে চাইলে সে যা বলল, তারা সারাংশ হলো: সে নিজেই একজনের জমি ৫ আগস্টের আগে কিনতে চেয়েছিল—১৫ লাখ টাকা করে শতাংশ চেয়েছিল।  বিক্রেতা হিন্দু ভদ্রলোক। এখন ওই ব্যক্তি যে দাম পায়, সে দামেই বিক্রি করে ভারতে চলে যেতে চায়। তাছাড়া তাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে যে পাঁকা রাস্তা গত সরকারের আমলে তৈরি হয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে বিকেলে ও সকালে যেভাবে স্কুটার (মোটরসাইকেল) নিয়ে সরকার সমর্থক বা আন্দোলনে বিজয়ী এক ধরনের যুবকরা মহড়া দেয়, তার ফলে যাদের বাড়িতে এডাল্ট মেয়ে আছে, তারা জমি বিক্রির চিন্তাও করছে না; কীভাবে দ্রুত ভারতে চলে যাওয়া যায় সেই চিন্তাই করছে। আর মুরাদনগর ঘটনার পরে এ দুশ্চিন্তা তাদের আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই বাস্তবতা অর্থাৎ পাঁচ আগস্ট বিকেল থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যা ঘটে চলেছে—তারপরও যখন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বা সরকারের দাওয়াতে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের হাসতে হচ্ছে, ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে সেলফি তুলতে হচ্ছে, আর সেখানে মাথা নাড়তে হচ্ছে তাদের বক্তব্য শুনে—এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই আমরা সমান নাগরিক। ওই মাথা নাড়া, ওই হাসি মূলত শুধু ‘সং’ সাজা নয়, মূলত ‘ক্রিতদাসের হাসি’।

আর ক্রিতদাস বলেই এতকিছুর পরেও এই সম্প্রদায়ের মানুষকে হাসিমুখে তাদের পূজা বা উৎসব করতে হচ্ছে। যারা সংখ্যাগুরু অথচ শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনো দেশের সংখ্যালঘুদের প্রকৃত মানসিকতা বোঝেন না, তারা বুঝতে পারবেন না এই ক্রিতদাসের হাসি কতটা চোখের জলের শুষ্ক সমষ্টি। যেমন অনেক মরুভূমির বালু লক্ষ বছরের হারিয়ে যাওয়া সাগর বা নদীর এক কান্না। এই হাসি তখনই বের হয় যখন মানুষের চোখে আর জল থাকে না। চোখ মূলত মরুভূমি হয়ে যায়।

যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুশল চক্রবর্তীকে যেভাবে ভিসির রুমে অপমান করেছে ছাত্ররা—এর পর যথাযথ ‘ক্রিতদাস’ হতে না পারলে বেঁচে থাকা যায় না; আত্মহত্যা করতে হয়। অথচ ছাত্রদের এত বড় অন্যায়ের জন্য কোনো শাস্তি নেই। কারণ, শাস্তি তাদের কে দেবে? প্রথমত দিতে পারতেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি), যার রুমে এটা ঘটেছে। কিন্তু ছাত্ররাই তাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তিনি মেধার জোরে ওই পদে আসেননি; ছাত্ররা তাকে সেখানে বসিয়েছে। অন্যদিকে সরকার প্রধান প্রথম দিনেই জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিও ছাত্রদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত; তার যোগ্যতায় সেখানে তিনি আসেননি। অর্থাৎ তার অবস্থাও ওই ভিসির মতো। শুধু তার নয়, গোটা সরকারের অবস্থা ওই ভিসির মতো।

আর ওই ছাত্ররা আন্দোলনের আগে ছাত্র ছিল; এখন তারা কারা, সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব জানে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের দুই কোটি হিন্দু কি ভবিষ্যতে ‘ক্রিতদাসের জীবন’ যাপন করবে (দুই কোটি অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাও নয়)? আগামী শারদীয় দুর্গাপূজায় তারা কি ‘ক্রিতদাসের হাসি’ মুখে ছড়িয়ে সরকারী কর্তাদের নির্দেশ মতো পূজা করবে- না, তারা, চিম্ময়, কুশল, মুরাদনগরের দ্রৌপদিসহ সারা দেশের নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মর্যাদা ও ভবিষ্যতের জন্য ভাববে—সেটা এখন বড় প্রশ্ন।

আর যাই হোক, অত্যাচারী যতই শক্তিশালী হোক, তবুও মনে রাখতে হবে আজ ২০২৫-এ এসে আর মানুষকে দীর্ঘক্ষণ ক্রিতদাস বানানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশের হিন্দুরাও একেবারে ঐতিহ্যহীন কোনো গোঁষ্টি নয়। রাজা প্রতাপাদিত্য থেকে শুরু করে সূর্যসেন ও বিনয়, বাদল ও প্রীতিলতার উত্তরাধিকার তারা; তাদের জন্যই নয়, পৃথিবীর তাবত নিপীড়িতদের জন্য আরো আছে রবীন্দ্রনাথের অমোঘ সত্য উচ্চারণ:

“মুহূর্তে তুলে শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে,
যার ভয়ে ভীতু তুমি সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনই সে পালাইবে ধেয়ে;
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার, তখনই সে
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে;
দেবতা বিমুখ তারে, কেহ নাহি সহায় তাহার।”

রবীন্দ্রনাথের এই সত্য মেনে, কোনো বিদেশের দিকে তাকিয়ে নয়, বাংলাদেশের হিন্দুকে তার ক্রিতদাস দশা থেকে মুক্ত হতে হবে তার নিজ উন্নত শিরের মাধ্যমে—“চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির,” সেখানে ক্রিতদাস দশা সকল রুদ্র প্রতাপের রুক্ষ চোখের বিপরীতে জয়ী হয়।

লেখক: রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, ও The Present World।