বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী সাত দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানী ঢাকায় এরই মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টির এই ধারাবাহিকতা নগরীর কিচেন মার্কেটে বা নিত্যপণ্যের বাজারে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মধ্যেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা এবং বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বিশেষ করে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। এতে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকার কিচেন মার্কেটের বাস্তবতা
ঢাকার শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট কিচেন মার্কেট, মিরপুর-১ বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে অনেক পণ্য আনতে বিলম্ব হচ্ছে।
সবজির পাইকারি আড়তে বৃষ্টির দিনে গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়। গ্রামের হাট থেকে পণ্য ঠিকমতো না আসলে দাম বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে কিছু সবজির দামে হালকা ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। টমেটো, বেগুন, শিম, ঢেঁড়স ও কাঁচামরিচের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পরিবহন সংকট ও জলাবদ্ধতার প্রভাব
বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অনেক অংশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ট্রাক-ভ্যান চলাচল ব্যাহত হয়। বাজারে প্রতিদিন যে পরিমাণ পণ্য ঢুকতো, বৃষ্টির দিনে সেটা কমে যায়। এই সরবরাহ-সংকটই দামের ওপর চাপ তৈরি করে।
কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, “বৃষ্টি হলে গ্রাম থেকে মাল সময়মতো আসে না। রাস্তাঘাট কাদামাটিতে নষ্ট হয়ে যায়, ভ্যান-ট্রাক দেরি করে। তখন আমাদের দাম বেশি দিয়ে কিনতে হয়, তাই খুচরাতেও দাম বাড়ে।”
চালের বাজারে প্রভাব
যদিও চালের বাজারে বৃষ্টির কারণে তাত্ক্ষণিক বিরাট মূল্যবৃদ্ধি হয় না, তবে পরিবহন খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির মৌসুমে ধানের মাঠে জলাবদ্ধতা হলে নতুন মৌসুমের ধান উৎপাদনে প্রভাব পড়ে। তবে আগামী সাত দিনের বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি হবে কি না, তা নির্ভর করছে কতটা ভারী এবং কত সময় ধরে বৃষ্টি হয় তার ওপর।
তবে পরিবহন খরচ ও গুদামজাত চাল সরবরাহে সমস্যা হলে খুচরার দামে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি হতে পারে বলে অনেক ব্যবসায়ী সতর্ক করেছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও পণ্য সরবরাহে সম্ভাব্য প্রভাব
সবজি ছাড়া আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম, মাছ, মুরগি, দুধের বাজারও বৃষ্টির কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
মাছ বাজারে বৃষ্টির দিনে কম জেলেদের নৌকা আসে। ফলে তাজা মাছের সরবরাহ কমে এবং দাম কিছুটা বাড়ে।
দেশি মুরগির সরবরাহ কিছু ক্ষেত্রে খামারের কাদামাটি সমস্যার কারণে কমে যেতে পারে।
ডিম ও দুধের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাবের আশঙ্কা কম হলেও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেলে খুচরায় সামান্য প্রভাব পড়তে পারে।
সরকারি পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতি
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টির সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে অস্থিরতা রোধে বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করা হবে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দ্রুত সরাতে বিশেষ টিম মাঠে থাকবে যাতে বাজারগুলোয় পচা-গন্ধ বা পরিবহন জট কমানো যায়।
ক্রেতাদের করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী সাত দিনের বৃষ্টির খবর মাথায় রেখে দৈনন্দিন বাজারের পরিকল্পনা করা ভালো। নষ্ট না হওয়ার মতো পণ্য কিছুটা মজুত করা যেতে পারে। তবে একসাথে অতিরিক্ত কেনাকাটা করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।
আগামী সাত দিনের টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস ঢাকা শহরের কিচেন মার্কেটে প্রভাব ফেলতে পারে—বিশেষ করে সবজি ও দ্রুত নষ্ট হওয়ার পণ্যে। পরিবহন, জলাবদ্ধতা ও সরবরাহ-সংকটের কারণে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধি হবে কি না, তা নির্ভর করছে বৃষ্টির তীব্রতা ও অবস্থা কেমন হয় তার ওপর। প্রশাসনের তৎপরতা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথাযথ হলে সংকট অনেকটা নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।