শীতকালের প্রথমে সকলে কান্যকুজের দিকে চললেন। শীলাদিত্য গঙ্গার দক্ষিণ তীর ধরে আর কামরূপরাজ উত্তর তীর ধরে অগ্রসর হলেন।
হিউএনচাঙ হীনযান মত খণ্ডন করে একখানা গ্রন্থ লিখেছিলেন।
মহারাজা সেটা চেয়ে নিয়ে পড়ে খুব খুশি হলেন আর বললেন, ‘আমার ভিক্ষুদের মহাস্থবির, হীনযানী দেবসেন, বলেন যে তিনি একজন মহাপণ্ডিত আর অনায়াসে মহাযানমত খণ্ডন করতে পারেন-কিন্তু বিদেশী ভিক্ষুর আগমনবার্তা শুনে তিনি বৈশালীতে পালিরেছেন!’
এই সময়ে মহারাজার ভগ্নী (রাজ্যশ্রী) মহারাজের পিছনে বসেছিলেন। হীনযানশাস্ত্রজ্ঞা বলে তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনিও হিউএনচাঙের বিচার শুনে আনন্দে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে লাগলেন।
শীলাদিত্য বললেন, ‘ধর্মগুরুর লিখিত গ্রন্থ খুব ভালো। আমার আর অন্যদেরও এতে মহাযানের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস হয়েছে। কিন্তু অন্যদেশের লোক আর ভিন্ন মতাবলম্বীদের সন্দেহ নিরসন করবার জন্যে কান্যকুব্জতে একটা মহাসভা আহ্বান করা প্রয়োজন।’
শীতকালের প্রথমে সকলে কান্যকুজের দিকে চললেন। শীলাদিত্য গঙ্গার দক্ষিণ তীর ধরে আর কামরূপরাজ উত্তর তীর ধরে অগ্রসর হলেন।
উভয় রাজার সঙ্গেই জমকালো পরিচ্ছদে ভূষিত চতুরঙ্গ সেনা ছিল আর হাজার হাজার অনুচর ছিল- কেহ বা নদীতে নৌকায়, কেহ বা হাতীর পিঠে, ঢাক, ঢোল, বাঁশী, বীণার বাদ্যসহকারে সকলে অগ্রসর হয়ে নব্বই দিনে কান্যকুজে পৌঁছে গঙ্গার পশ্চিমতীরে সকলে বিশ্রাম করলেন।
সভাস্থলে রাজাজ্ঞায় আঠারো-উনিশটা দেশের রাজা, হীনযান ও মহাযানের শাস্ত্রজ্ঞ তিন হাজার ভিক্ষু, তিন হাজার ব্রাহ্মণ ও নিগ্রন্থ (জৈন) আর তা ছাড়া নালন্দার প্রায় এক হাজার ভিক্ষু আগে থেকেই এসেছিলেন। এইসব সমাগত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ প্রত্যেকে বিদ্বান্ ও তর্কে নিপুণ ছিলেন; আর প্রত্যেকের সঙ্গে বহু অনুচর কেহ বা হাতীতে, কেহ বা রথে, কেহ বা পাল্কীতে, কেহ বা চাঁদোয়ার ছায়ায় (পদব্রজে?) এসেছিলেন। দেশের গণ্যমান্য লোক, রাজকর্মচারী, সেনারাও উপস্থিত ছিলেন।
(চলবে)