ভারতীয় গণিতবিদেরা ভাবতেন যে, একজন অজ্ঞ লোকও এই ত্রৈরাশিকের ব্যবহার করতে পারে।
ত্রৈরাশিক, ব্যস্তরাশি ও বহুরাশিক
ত্রৈরাশিকঃ ত্রৈরাশিক শব্দটি বহু আগে থেকেই ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে বাকশালীর পাণ্ডুলিপি, আর্যভটীয়, ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত, ত্রিশতিকা লীলাবতী প্রভৃতি গ্রন্থে ত্রৈরাশিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ অঙ্কের প্রশ্নে ত্রৈরাশিকের ব্যবহার অত্যন্ত সহজ ও সরল হওয়ায় ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে এটি অত্যন্ত আবশ্যকীয় এবং উচ্চ প্রশংসিত হয়ে স্থান পেয়েছে।
তাছাড়াও এর একটি সার্বজনীন প্রয়োগও কিছুটা এজন্য দায়ী। ভারতীয় গণিতবিদেরা ভাবতেন যে, একজন অজ্ঞ লোকও এই ত্রৈরাশিকের ব্যবহার করতে পারে। দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য সিদ্ধান্তশিরোমণির গোলধ্যায়ের প্রশ্নাধ্যায়র তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্লোকে এ সম্পর্কে সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন:
“অস্তি ত্রৈরাশিকং পাটা বীজং চ বিমলা মতিঃ।
কিমজ্ঞাতং সুবুন্ধীনামতো মন্দার্থযুচ্যতে। ৩৪ বর্গং বর্গপদং ঘনং ঘনপদং সন্ত্যজ্য যদ্ গণ্যতে তৎ ত্রৈরাশিকমের ভেদ বহুলং নান্যৎ ততো বিঘ্নতে। এতদ্ যদ বহুবাশ্মদাদিজড়ধী ধীবৃদ্ধিবুদ্ধ্যা বুধৈ-বিদ্ধচ্চত্রচকোরচাক্রমতিভিঃ পাটীতি তিন্নিম্মিতম্। ৪। নৈব বর্ণাত্মকং ন বীজানি পৃথক্ পৃথক্।একমেব মতির্বীজমনল্প কল্পনা যতঃ। ৫।”
অর্থাৎ ত্রৈরাশিকই পাটীগণিত, বিমলমতিই বীজগণিত। সুবুদ্ধি ব্যক্তিগণের কি অজ্ঞাত আছে? এজন্য অল্প বুদ্ধি ব্যক্তিগণের বোধের নিমিত্ত বলা হইতেছে। বর্গ, বর্গমূল, খন; ঘনমূল, ব্যতীত যাহা কিছু গণিত হয়, সকলই নানা ভেদ বিশিষ্ট ত্রৈরাশিক ভিন্ন কিছুই নহে। আমাদিগের ন্যায় অল্প বুদ্ধি ব্যক্তিগণের বিকাশের জন্মাই, চকোরের ন্যায় অতীব বুদ্ধিমান্ জ্যোতিবিদগণ, নানাবিধ প্রক্রিয়া ভেদ দ্বারা পাটীগণিত নির্মাণ করিয়াছেন। বীজ, বর্ণাত্মক নহে বা পৃথক্ পৃথক্ প্রক্রিয়াত্মকও নহে। একমাত্র বুদ্ধিই বীজ, তাহা হইতেই নানাবিধ কল্পনা হইয়া থাকে।
(চলবে)