জলস্তরের সামগ্রিক চিত্র
ফ্লাড ফরেকাস্টিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং সেন্টার (FFWC)-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, ৯–১০ জুলাই বর্তমান সময়ে ৬৮টি নদীতে পানি বৃদ্ধি, ৪৭টি নদীতে পানি হ্রাস, এবং ৪টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনে পানি স্তব্ধ ছিল। নজরে রাখতে হবে, সব নদীর পানি এখনও ‘ডেঞ্জার লেভেল’ অতিক্রম করেনি, যদিও কিছু ছোট নদীতে আংশিক প্লাবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কোন কোন নদীতে পানি বাড়ছে?
গঙ্গা–পদ্মা মহাসিস্টেম
– গঙ্গা ও পদ্মার পানি গত কয়েকদিন ধরে ধরে বাড়ছে। FFWC-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই প্রবণতা আগামী পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ঝাড়খণ্ড ও বিহারের পাহাড়ি ঢলে উজানে বাড়তি পানির কারণে আশঙ্কা, তবে ঢাকার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র–যমুনা সিস্টেম
– ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার জলস্তর সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে আরও ২০–৩০ সেন্টিমিটার বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে; এরপর ধীরে ধীরে হ্রাসের পূর্বাভাস রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগ
– ফেনী জেলার মুহুরি ও সেলোনিয়া নদীর পানি একপ্রান্তে ‘ডেঞ্জার লেভেল’ অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। মুহুরিতে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বাড়েছে ৭৭ সেন্টিমিটার, আর সেলোনিয়ায় ৮১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি হয়েছে। এর ফলে ফু’লগাজী ও পার্শুরামের সমীর্ণা এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৪টি গ্রাম জলমগ্ন।
– ওই বিভাগের হালদা ও সাংগু নদীতেও পানি স্তর বাড়ছে, তবে এখনও ‘ডেঞ্জার লেভেল’র নিচে রয়েছে।
মসলিম মঞ্জুর ভিত্তিক নদীগুলো
– সিলেট বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা ও মনু নদীতে জুনের মাঝামাঝি ‘ডেঞ্জার লেভেল’ অতিক্রম করেছিল। কিন্তু জুলাইয়ে সুরমা নদীর পানি সাময়িকভাবে কমেছে, এবং কুশিয়ারা নদী স্থিতিশীল আছে। উভয় নদীই বর্তমানে বিপজ্জনক সীমার নিচে রয়েছে।
ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রমকারী নদী ও প্রভাব
নদী | জেলা | ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি | প্রভাব region |
মুহুরি | ফেনী | +৭৭ cm | ফু’লগাজী–পার্শুরাম: ১৪ গ্রাম প্লাবিত |
সেলোনিয়া | ফেনী | +৮১ cm | ফেনীর নিম্নাঞ্চলে বাঁধ ধস এবং সড়ক অবরুদ্ধ |
উপকূলীয় চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের বেশ কয়েকটি ছোট নদী–খালেও উচ্চসমুদ্র জোয়ারের প্রভাবে পানি বেড়ে ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি তৈরি করছে।
ঝুঁকি ও প্রস্তুতি
ফেনীর নিম্নাঞ্চল
মুহুরি ও সেলোনিয়ার ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রমের ফলে বাঁধ ভেঙে রাস্তা, স্থাপনা ও ফসলী জমি বন্যা কবলিত হয়েছে। জরুরি উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কাজ করছে।
উপকূলীয় ঝড়ঝাপটার দরকার
খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে উচ্চসমুদ্র জোয়ারকে নজরে রেখে পূর্বসতর্কতা দরকার; স্থানীয় প্রশাসনকে ছোট নদী-খাল মনিটরিং বাড়াতে হবে।
রাজধানীর পরিস্থিতি
গঙ্গা–পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র–যমুনা বৃদ্ধি ভয়ঙ্কর নয়, তবে হঠাৎ প্রবাহ বাড়লে ঢাকা ও আশপাশে প্লাবনের শঙ্কা আছে। ধাপে ধাপে পানি ছাড়লের পর সারাৎসার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB) ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা শক্তিকে জোরদার হতে হবে।
করণীয় পরবর্তী পদক্ষেপ
- ফেনী এবং আশেপাশ সবদিক থেকে জরুরি বাঁধ মেরামত ও শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
- স্থানীয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং চালিয়ে রেড, অরেঞ্জ ও গ্রীন এলার্ট শাখা অনুযায়ী জনসাধারণকে সতর্ক করতে হবে।
- FWFC-এর পরবর্তী সতর্কবার্তা (১০–১২ জুলাই) নিয়মিত পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সতর্কতা প্রচার করতে হবে।
- প্রাণী ও কর্মজীবীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উপকূলীয় জেলেরা মাছ শিকারে নেমে বিপদে পড়বেন না, এবং বিকল্প কাজের ব্যবস্থা নিতে হবে।