ভারতের বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ বন্যা
ভারতের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে আসাম, বিহার, মেঘালয়, উত্তরবঙ্গের কিছু অংশ ইতিমধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। নদীগুলি উপচে গিয়েছে, গ্রাম, শহর, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ডুবে আছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, ফসল নষ্ট হয়েছে, অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি আরও কিছুদিন চলবে। এই বৃষ্টি হিমালয়ের পাদদেশীয় নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি করছে। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তা, মহানন্দা, করতোয়া সহ আরও অনেক নদী বাংলাদেশের দিকে নেমে আসে, তাই ভারতের বন্যা সরাসরি বাংলাদেশের জন্যও এক ভয়াবহ সংকেত।
বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি
বাংলাদেশ একটি নিম্ন প্রবাহের দেশ। ভারতের পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলের পানি ঢালু হয়ে বাংলাদেশের দিকে নামে। ফলে ভারতের যে নদীগুলি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, সেগুলির পানি বাংলাদেশের নদ-নদীতেও হু হু করে ঢুকে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভারতের বন্যার কারণে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলগুলিতে যে কোনো সময় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
কোন কোন অঞ্চল এখন ঝুঁকিতে
বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে –
- কুড়িগ্রাম
- লালমনিরহাট
- গাইবান্ধা
- রংপুর
- নীলফামারী
- জামালপুর
- শেরপুর
- টাঙ্গাইল
- সিরাজগঞ্জ
- বগুড়া
- সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের হাওর এলাকা
- ময়মনসিংহ অঞ্চলের কিছু এলাকা
ভারত থেকে নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে আসতে থাকলে এসব জেলার নদীর পানি বিপদসীমার উপরে চলে যাবে এবং বাঁধ ভেঙে বা নদীর ভাঙনে নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
বন্যা হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে
যদি ভারত থেকে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে –
- গ্রামীণ জনপদ প্লাবিত হবে
- হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে বা রাস্তার ধারে থাকবে
- বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট হবে
- শিশুরা,বৃদ্ধরা ও অসুস্থরা সবচেয়ে বেশি ভুগবে
- ডায়রিয়া,জ্বর, পানিবাহিত রোগ ছড়াবে
- শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে
- যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে– সড়ক, সেতু, কালভার্ট নষ্ট হবে
- কৃষিজমি ডুবে গিয়ে ফসল নষ্ট হবে
- মাছের খামার,হাঁস-মুরগি খামার নষ্ট হয়ে যাবে
- মানুষের খাবার,পোশাক, চিকিৎসা সরবরাহ কঠিন হয়ে যাবে
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
বন্যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় এক ধাক্কা। এর মধ্যে –
- কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্যার সময় ধান,শাকসবজি, পাট, সব নষ্ট হয়ে যাবে।
- মাছচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পল্লী অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে।
- গবাদিপশু মরবে বা হারিয়ে যাবে।
- ক্ষুদ্র ব্যবসা ধ্বংস হবে।
- ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারের বিপুল অর্থব্যয় হবে।
- রাস্তাঘাট,বাঁধ, সেতু, স্কুল-মাদ্রাসা, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কোটি কোটি টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হবে।
- বন্যা-পরবর্তী পুনর্গঠন পরিকল্পনা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই নানা সংকটে (ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ঋণ শর্ত) আছে। তার মধ্যে বড় পরিসরের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
সরকারের করণীয়
এখনই প্রস্তুতি না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
- নদী পর্যবেক্ষণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য নিয়মিত জনসমক্ষে দেওয়া
- আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা
- শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা করা
- সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টসহ উদ্ধার দল প্রস্তুত রাখা
- নদীর বাঁধ মেরামত বা শক্ত করা
- বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন করা
- কৃষকদের আগাম সতর্ক করা
ভারতে যে বন্যা চলছে তা বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকিকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল এই মুহূর্তে সরাসরি বিপদসীমার ধারে। সরকারের প্রস্তুতি, জনগণের সচেতনতা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ছাড়া এই সংকট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।