বাংলাদেশের সকল বিভাগীয় শহর গত দুই দিন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী তিন দিন এলাকার উপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
গত দুই দিনের বৃষ্টিতে সৃষ্ট পরিস্থিতি
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম,খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর—সব বিভাগীয় শহরের সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমতল পানির স্তর দেখা গেছে।ঢাকার মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, নীলক্ষেত, গাবতলী, কারওয়ান বাজারসহ বহু এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামে পতেঙ্গা, বাকলিয়া, ষোলশহর ও আগ্রাবাদে জল জমে ঘরবাড়ি পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। খুলনায় শিববাড়ি, রূপসা, সোনাডাঙ্গা ও নিউ মার্কেট এলাকায় ড্রেন উপচে রাস্তা জলমগ্ন হয়েছে। বরিশালে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড, বগুড়া রোড, কাশিপুর ও রূপাতলী এলাকার সড়ক সম্পূর্ণ মাত দেখা গেছে।
সিলেট ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শঙ্কা
সিলেট অঞ্চলে সুরমা, কুশিয়ারা ও সোনা নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নীচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ায় লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ
- ঢাকায় স্কুলগামী শিশুরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে স্কুল যাচ্ছেন।
- অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে।
- দোকানপাট বন্ধ থাকায় দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষের আয় বন্ধ।
- যানজট ও জনদুর্ভোগ বাড়েছে।
- নৌযান চলাচলও স্তিমিত।
আগামী তিন দিনের পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। পাহাড়ি ঢল ও নদীভাঙন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও নেত্রকোণায়।
প্রশাসনের প্রস্তুতি
- পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করছে।
- স্থানীয় প্রশাসনকে নিচু এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
- সিটি কর্পোরেশনগুলোকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সংযোগ সচল রাখতে সতর্কতা জারি।
বিশেষজ্ঞদের মত
পরিবেশবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নদীর অব্যবস্থাপনার কারণে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা মহারোগে পরিণত হচ্ছে। তারা অনুরোধ করছেন, “অস্থায়ী পাম্প বসানো কোনো টেকসই সমাধান নয়; দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি।”
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার একটি দোকানদার:
“প্রতিবার বৃষ্টি হলে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। পানি ঢুকে সব নষ্ট হয়ে যায়, ক্রেতাও আসতে পারে না।”
চট্টগ্রামের এক বাসিন্দা:
“ঘর ভিজে যাচ্ছে, ছোট বাচ্চা নিয়ে কষ্টে আছি—কাউকে কেউ শোনে না!”
বাংলাদেশের শহরগুলোতে বৃষ্টি মানেই দুর্ভোগের চিত্র। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে সেই চিরচেনা দৃশ্য আবারও পুনরায় দেখা গেছে। এখনই টেকসই উদ্যোগ না নিলে, পরবর্তী তিন দিনের ভারি বর্ষণ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।