১১:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

দুঃসময়ে সবজি বিক্রেতার লড়াই: টিকে থাকার গল্প

বাজারের ভোরে তার দিন শুরু

রাজধানীর একটি ঘিঞ্জি বাজারের কোণায় বসে আছেন হাসান মিয়া। ভোরের আলো ফোটার আগেই তার দিন শুরু হয়। নীল রঙের ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো বাঁধাকপি, টমেটো, শিম, লাউ—সবজিগুলো আগের রাতেই তিনি কাওরান বাজার থেকে এনে রেখেছেন। এখন ক্রেতা ধরাই তার মূল লক্ষ্য। কিন্তু ক্রেতারাও দাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নেন।

“আগে এক লাউ ৫০–৬০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন ৮০–৯০ টাকায় এনেও ১০ টাকাও লাভ থাকে না। তবুও ক্রেতারা বলে, খুব বেশি দাম!”

সবজি বিক্রেতা

জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়জীবনযাত্রা কঠিন

হাসান মিয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সেখান থেকে প্রতিদিন আসা সম্ভব নয়। ঢাকায় বাজারের পাশে একটি ছোট্ট মেসে থাকেন চারজন মিলে। ঘরভাড়া, খাবার, যাতায়াত—সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

“চাল ৭০ টাকার উপরে, ডাল ১৫০ টাকার কাছাকাছি। মাছ তো খাই না মাসের পর মাস। নিজেরাই ঠিকমতো খাই না, বাচ্চার জন্য টাকা পাঠাতে পারি না,” আক্ষেপের সুরে বললেন হাসান মিয়া।

ক্রেতা কমবিক্রি নেইবাকি বাড়ছে

মূল সমস্যা শুধু দাম নয়। ক্রেতারাও আগের মতো নেই। অনেকে বাকি নেয়, ফেরত দেয় না। বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র; বড় পাইকারি দোকানদাররা সস্তায় বিক্রি করে।

“মোট ৫ হাজার টাকার মাল এনেছিলাম, দুই দিনে ৩ হাজার টাকাও উঠল না। মানুষ এখন এক কেজির বদলে আধা কেজি নেয়। অনেকে তো আসে না বাজারে, অনলাইনে অর্ডার দেয়,” বলেন তিনি।

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অভিযান

ঋণ আর ধার: নিয়মিত সঙ্গী

বাজারে দোকান বসাতে ভাড়া, প্রতিদিনের আড়ত খরচ, পরিবহন—সবকিছুর জন্য ধার করতে হয় তাকে। স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন; সুদে টাকা ফেরত দিতে হয়।

“মাসে ১০–১২ হাজার টাকা মেটাই শুধু ঋণের কিস্তি। আয় নেই তো কী করি? মাল বিক্রি না হলে তো ক্ষতি,” বললেন হাসান মিয়া।

তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে দোকান বন্ধ করেও লাভ নেই। অন্য কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই অভাবে পড়েও বাজারে বসে আছেন।

পরিবার আর স্বপ্ন

হাসান মিয়ার পরিবার গ্রামে—স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি রেখেছেন অনেক কষ্টে।

“বড় মেয়েটা বলল, বাবু, স্কুল ছেড়ে দেব। আমার পড়ার টাকা তুমি খাবার কেনায় দাও। শুনে রাতে ঘুমাতে পারিনি,” চোখে পানি জমে হাসান মিয়ার।

তিনি বলেন, “কেউ কি চায় মেয়েকে না পড়াতে? কিন্তু খাবার না থাকলে বই-খাতা কেনা যায়?”

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' বদলে 'জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ' প্রস্তাব : সংবাদ অনলাইন

সরকারের সহায়তা ও প্রত্যাশা

সবজি বিক্রেতাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সহায়তা নেই বলে আক্ষেপ করেন হাসান মিয়া। তিনি চান—ন্যায্য দামে আড়ত থেকে সবজি কেনার সুযোগ, কম সুদে ঋণ ও ছোট দোকানিদের জন্য বিশেষ সহায়তা।

“আমরা তো চুরি করি না; কষ্ট করে বেচি। আমাদের একটু সহায়তা দিলে বাঁচি,” বলেন তিনি।

শেষ কথায়

হাসান মিয়ার গল্প আসলে হাজারো সবজি বিক্রেতার গল্প। বাজারের দরদাম যতই উঠুক-নামুক, এই মানুষেরা প্রতিদিন নতুন করে লড়াই করেন বাঁচার জন্য। তাদের চোখে স্বপ্ন এখনও মরে যায়নি। শুধু চাই একটু সহায়তা আর ভালো দিনের আশা।

দুঃসময়ে সবজি বিক্রেতার লড়াই: টিকে থাকার গল্প

০৯:০১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

বাজারের ভোরে তার দিন শুরু

রাজধানীর একটি ঘিঞ্জি বাজারের কোণায় বসে আছেন হাসান মিয়া। ভোরের আলো ফোটার আগেই তার দিন শুরু হয়। নীল রঙের ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো বাঁধাকপি, টমেটো, শিম, লাউ—সবজিগুলো আগের রাতেই তিনি কাওরান বাজার থেকে এনে রেখেছেন। এখন ক্রেতা ধরাই তার মূল লক্ষ্য। কিন্তু ক্রেতারাও দাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নেন।

“আগে এক লাউ ৫০–৬০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন ৮০–৯০ টাকায় এনেও ১০ টাকাও লাভ থাকে না। তবুও ক্রেতারা বলে, খুব বেশি দাম!”

সবজি বিক্রেতা

জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়জীবনযাত্রা কঠিন

হাসান মিয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সেখান থেকে প্রতিদিন আসা সম্ভব নয়। ঢাকায় বাজারের পাশে একটি ছোট্ট মেসে থাকেন চারজন মিলে। ঘরভাড়া, খাবার, যাতায়াত—সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

“চাল ৭০ টাকার উপরে, ডাল ১৫০ টাকার কাছাকাছি। মাছ তো খাই না মাসের পর মাস। নিজেরাই ঠিকমতো খাই না, বাচ্চার জন্য টাকা পাঠাতে পারি না,” আক্ষেপের সুরে বললেন হাসান মিয়া।

ক্রেতা কমবিক্রি নেইবাকি বাড়ছে

মূল সমস্যা শুধু দাম নয়। ক্রেতারাও আগের মতো নেই। অনেকে বাকি নেয়, ফেরত দেয় না। বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র; বড় পাইকারি দোকানদাররা সস্তায় বিক্রি করে।

“মোট ৫ হাজার টাকার মাল এনেছিলাম, দুই দিনে ৩ হাজার টাকাও উঠল না। মানুষ এখন এক কেজির বদলে আধা কেজি নেয়। অনেকে তো আসে না বাজারে, অনলাইনে অর্ডার দেয়,” বলেন তিনি।

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অভিযান

ঋণ আর ধার: নিয়মিত সঙ্গী

বাজারে দোকান বসাতে ভাড়া, প্রতিদিনের আড়ত খরচ, পরিবহন—সবকিছুর জন্য ধার করতে হয় তাকে। স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন; সুদে টাকা ফেরত দিতে হয়।

“মাসে ১০–১২ হাজার টাকা মেটাই শুধু ঋণের কিস্তি। আয় নেই তো কী করি? মাল বিক্রি না হলে তো ক্ষতি,” বললেন হাসান মিয়া।

তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে দোকান বন্ধ করেও লাভ নেই। অন্য কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই অভাবে পড়েও বাজারে বসে আছেন।

পরিবার আর স্বপ্ন

হাসান মিয়ার পরিবার গ্রামে—স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি রেখেছেন অনেক কষ্টে।

“বড় মেয়েটা বলল, বাবু, স্কুল ছেড়ে দেব। আমার পড়ার টাকা তুমি খাবার কেনায় দাও। শুনে রাতে ঘুমাতে পারিনি,” চোখে পানি জমে হাসান মিয়ার।

তিনি বলেন, “কেউ কি চায় মেয়েকে না পড়াতে? কিন্তু খাবার না থাকলে বই-খাতা কেনা যায়?”

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' বদলে 'জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ' প্রস্তাব : সংবাদ অনলাইন

সরকারের সহায়তা ও প্রত্যাশা

সবজি বিক্রেতাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সহায়তা নেই বলে আক্ষেপ করেন হাসান মিয়া। তিনি চান—ন্যায্য দামে আড়ত থেকে সবজি কেনার সুযোগ, কম সুদে ঋণ ও ছোট দোকানিদের জন্য বিশেষ সহায়তা।

“আমরা তো চুরি করি না; কষ্ট করে বেচি। আমাদের একটু সহায়তা দিলে বাঁচি,” বলেন তিনি।

শেষ কথায়

হাসান মিয়ার গল্প আসলে হাজারো সবজি বিক্রেতার গল্প। বাজারের দরদাম যতই উঠুক-নামুক, এই মানুষেরা প্রতিদিন নতুন করে লড়াই করেন বাঁচার জন্য। তাদের চোখে স্বপ্ন এখনও মরে যায়নি। শুধু চাই একটু সহায়তা আর ভালো দিনের আশা।