বিশ্বজুড়ে বারকিন ব্যাগকে মর্যাদা ও বিলাসিতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এবার সর্বপ্রথম তৈরি হওয়া বারকিন ব্যাগটি নিলামে বিক্রি হয়েছে, যার মূল্য পড়েছে দশ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২১ কোটি টাকার বেশি।
এটিই এখন পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি হ্যান্ডব্যাগ।
কালো লেদারের এই হ্যান্ডব্যাগটি তৈরি করা হয়েছিলো ১৯৮৫ সালে, বিখ্যাত গায়িকা জেন বারকিনের জন্য। এই ব্যাগের জন্ম এক মজার ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
একবার জেন বারকিন লাক্সারি ফ্যাশন হাউজ হারমেসের তৎকালীন প্রধানের পাশে বসেছিলেন। সে সময় তিনি তার ব্যাগটি ঠিকভাবে সামলাতে না পারায় ব্যাগের জিনিসপত্র নিচে পড়ে যায়।
তখন তিনি পাশে বসা হারমেসের প্রধানকে বলেন, “তারা কেন বড় ব্যাগ বানায় না?”
তার কথা শুনে হারমেস প্রধান তখনই বিমানে থাকা একটি কাগজের সিক ব্যাগে (যেটি বিমানে যাত্রীদের বমি বা অসুস্থতার ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়) নতুন ব্যাগের নকশা আঁকেন।
আর বিমানে বসে তৈরি হওয়া সেই ডিজাইনার ব্যাগটি গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে নিলাম কোম্পানি সোদেবি’স-এর নিলামে বিক্রি হয়ে যায়।
ব্যাগটি কিনেছেন একজন জাপানি সংগ্রাহক। ব্যাগটির বিক্রিমূল্য এতটাই বেশি যে এটি আগের সমস্ত রেকর্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
এর আগে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিত ব্যাগটির মূল্য ছিল পাঁচ লাখ ১৩ হাজার মার্কিন ডলার।
১৯৯০ সালে জেন বারকিন এবং পরিচালক বার্ট্রান্ড ট্যাভার্নিয়ার
নিলাম হাউজ থেকে জানানো হয়, নিলামটি ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা। প্রায় ১০ মিনিট ধরে নয় জন অ্যান্টিক কালেক্টর বা সংগ্রাহক ব্যাগটি কেনার জন্য বিড করেছেন।
যারা দুষ্প্রাপ্য ও ঐতিহ্যবাহী জিনিস সংগ্রহ করেন, তাদেরকে বলা হয় অ্যান্টিক কালেক্টর।
কিন্তু এই ব্যাগটি কেন এত মূল্যবান?
সোদেবি’স-এর হ্যান্ডব্যাগ ও ফ্যাশনের প্রধান মর্গ্যান হালিমি বলেন, “এই চামড়ার ব্যাগটি এতটা মূল্যবান হয়ে ওঠার কারণ, একজন কিংবদন্তি ব্যক্তি এর ডিজাইন করেছিলেন। সেজন্যই এটি কিনতে অনেকেই আগ্রহী হন, নিলামে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা হয়, আর শেষ পর্যন্ত ব্যাগটি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বারকিন প্রোটোটাইপ (কোনও পণ্যের প্রথম মডেল) মানেই হচ্ছে একটি অসাধারণ গল্পের সূচনা বিন্দু, যা এটিকে এক আধুনিক প্রতীকে পরিণত করেছে। বারকিন ব্যাগ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত হ্যান্ডব্যাগগুলোর একটি।”
অ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ গায়িকা ও অভিনেত্রী জেন বারকিনের জন্য ব্যাগটি তৈরি করার পর হারমেস এটিকে অন্যান্যদের কাছেও বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন করে।
পরবর্তীতে এটি ফ্যাশন দুনিয়ায় এক বিশেষ গুরুত্ব পায় এবং বিলাসিতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
সোদেবি’স-এর নিলামে প্রথম তৈরি বারকিন ব্যাগ
এই ব্র্যান্ডের কিছু ব্যাগের দাম হাজার হাজার ডলার এবং কেউ কেউ একটি আসল বারকিন ব্যাগ কেনার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করেন।
এ যাবৎকালে যেসব সেলিব্রিটির হাতে এই ব্যাগটি দেখা গেছে, তাদের মধ্যে আছেন কেট মস, ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম এবং জেনিফার লোপেজ।
এই ব্যাগটির কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, এর সামনের ফ্ল্যাপে বা ঢাকনায় বারকিনের নামের আদ্যক্ষর ‘জে.বি.’ খোদাই করা আছে।
আরও আছে স্থায়ীভাবে লাগানো কাঁধের স্ট্র্যাপ, বেল্টে লাগানো একটি নেইল ক্লিপার।
জেন বারকিন সরাসরি যুক্ত ছিলেন, এমন দাতব্য সংস্থার স্টিকারও রয়েছে ব্যাগটিতে। যেমন, ‘ডক্টরস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ইউনিসেফ।
২০২৩ সালে ৭৬ বছর বয়সে জেন বারকিন মারা যান।
তিনি এক দশক ধরে এই ব্যাগটিকে নিজের কাছে রেখেছিলেন। পরে ১৯৯৪ সালে এইডস রোগীদের সহায়তার জন্য তহবিল তুলতে তিনি ব্যাগটি নিলামে দান করেন।
এরপর প্যারিসের এক বিলাসবহুল বুটিকের মালিক ক্যাথেরিন বেনিয়ার এটি কিনে নেন।
২৫ বছর ধরে ব্যাগটি তার সংগ্রহে ছিল এবং এত বছর পর ফের এটি নিলামে ওঠে।
সোদেবি’স জানায়, এর আগে সবচেয়ে দামি হ্যান্ডব্যাগ ছিল ‘হোয়াইট হিমালয়ান নিলোটিকাস ক্রোকোডাইল ডায়মন্ড রিটার্ন কেলি ২৮’, যা ২০২১ সালে বিক্রি হয়েছিলো।
বিবিসি নিউজ বাংলা