গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশ ভারতের বাজার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাঁচা মরিচ আমদানি করেছে। বাজারে টানা কয়েক সপ্তাহের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই আমদানিতে কি সত্যিই সবুজ মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে, নাকি অস্থিরতা চলতেই থাকবে?
দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ
দেশীয় উৎপাদনশীলতা হঠাৎ কমে যাওয়া, আবহাওয়া জনিত সমস্যায় ফলন নষ্ট হওয়া এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় অসাধু মজুতদারদের দৌরাত্ম্য—এই তিনটি প্রধান কারণকে দায়ী করা হচ্ছে চলতি মরিচের দামের উর্ধ্বগতির জন্য। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে সবুজ মরিচের দাম ৩৫০–৪৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সাধারণ ক্রেতাদের ওপর এর প্রভাব ছিল খুবই নেতিবাচক।
ভারতীয় মরিচের আমদানি পরিকল্পনা
সরকার দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত থেকে মরিচ আমদানির অনুমোদন দেয়। বেসরকারি আমদানিকারকেরা দুই সপ্তাহে কয়েক শ টন মরিচ সীমান্ত দিয়ে দেশে এনেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম সহনীয় রাখতে।
মূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে কি?
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমিত সময়ের জন্য আমদানি করা মরিচ সাময়িকভাবে বাজারে চাপ কমাতে পারে। পাইকারি বাজারে কিছু জায়গায় দাম কমার ইঙ্গিতও মিলেছে—যেখানে ৩০০ টাকার নিচে দাম নেমেছে। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান একমাত্র দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা।
একজন সবজি আড়তদার বলেন, “আমদানি করা মরিচের মান কিছুটা ভিন্ন। কিছু ক্রেতা কিনতে আগ্রহী নয়। তবে যারা কিনছে, তাদের জন্য বিকল্প তৈরি হয়েছে, এতে দাম কিছুটা ঠেকানো যাচ্ছে।”
ভোক্তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
কিছু ক্রেতা বলছেন, ভারতীয় মরিচ আসায় বাজারে বিকল্প তৈরি হয়েছে, যার কারণে অতিমূল্য কমেছে। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, ভারতীয় মরিচের স্বাদ ও তাজা ভাব আলাদা হওয়ায় তারা স্বদেশি মরিচের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন।
দীর্ঘমেয়াদী সমাধান কি?
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মরিচ উৎপাদন পরিকল্পনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, কৃষকদের প্রণোদনা, বীজ উন্নয়ন এবং সঠিক সময়ে সেচ-সার সরবরাহ নিশ্চিত না করলে একই সংকট আবার ফিরে আসবে। সরকারের উচিত স্থানীয় উৎপাদকদের আরও উৎসাহ দেওয়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোর করা যাতে মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে।
স্বল্পমেয়াদে ভারতের মরিচ আমদানি কিছুটা দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হলেও, বাংলাদেশে সবুজ মরিচের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থায় টেকসই পরিবর্তন আনতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।