০৭:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সক্ষমতা বিকাশে সকলের যৌথ দায়িত্ব ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া ও ভারত–শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক: পারস্পরিক কূটনীতির নতুন পাঠ পথ কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে বাংলাদেশের আইনে কী শাস্তি আছে এভারকেয়ারের কাছে হেলিকপ্টার মহড়া কাল, বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে জাপানের কাছ থেকে যা শিখতে পারে বাংলাদেশ জাপানে ঝিনুকের সংকট, শীতের প্রিয় খাবার ধরেছে ধাক্কা ইন্দোনেশিয়া–শ্রীলঙ্কা–থাইল্যান্ডে প্রাণঘাতী বন্যা: বিজ্ঞানীদের চোখে জলবায়ু সতর্কবার্তা নোটিফিকেশন জঞ্জাল সামলাতে অ্যান্ড্রয়েড ১৬–তে এআই সারাংশ ও নতুন কনট্রোল ১৯টি অ–ইউরোপীয় দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থগিত, অনিশ্চয়তায় হাজারো পরিবার ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা, প্রাণিজ কল্যাণ আইনে গ্রেপ্তার ১

চীনের তরুণদের স্বপ্নে ভাটা: স্টেথো আর পিয়ানোর বদলে স্ট্রিট ফুড আর লাইভস্ট্রিম

শেনচেনের এক ভোরবেলার নাস্তার দোকানের বাইরে মানুষের ছোট লাইন। দোকানের মালিক ঝাও লাওশি—সবার কাছে ‘শিক্ষক ঝাও’—চিয়াং ফান নামের জনপ্রিয় ভাপা চালের রোল ও গরম সয়া দুধ বিক্রি করেন। মাত্র ১৫ বর্গমিটার জায়গার দোকান, তবু ভেতরে রাখা একটি পিয়ানো চোখে পড়ে। নিয়ম সহজ: পিয়ানোতে একটি সুর বাজান, বিনা মূল্যে চিয়াং ফান পান।

কয়েক মাস আগেও ঝাও লাওশি দোকানটির উল্টো পাশে ছোট পিয়ানো স্কুল চালাতেন। সপ্তাহান্তে টানা দশ ঘণ্টা করে একে–একে শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন। হঠাৎ পরিবারগুলোর পক্ষে টিউশন ফি বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তার মূল কারণ, শেনচেনেও জন্মহার দশকজুড়ে কমছে বলে শিশুসংখ্যা কমে গেছে, আর চাকরির বাজারে ভাটা। অনেকে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বদলে গেলে ঝাও লাওশি নিজের গল্প নিয়ে টিকটকের চীনা সংস্করণ দোইইনে একটি ভিডিও দেন—শিরোনাম ‘আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি আসলে কী করতাম’। পিয়ানো শিক্ষক থেকে নাস্তার বিক্রেতা হয়ে ওঠার সেই ভিডিওতে কয়েক লাখ লাইক জমেছে।

চীনের অপর প্রান্তে বসবাস করেন শিয়াও গাও, একসময়ের ইনার মঙ্গোলিয়ার এক তৃতীয় সারির হাসপাতালের নিউরোসার্জন। আজ তিনি প্রতি রাতেই বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘাস জেলি (একটি জনপ্রিয় ডেজার্ট) বিক্রির ছোট স্টল বসান। সার্জন হতে তাঁর লেগেছে আট বছরের বেশি। অথচ অর্থনৈতিক মন্দায় সরকারি তহবিল সঙ্কুচিত হওয়ায় অনেক সরকারি হাসপাতাল বাজেট কমাতে গিয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে। বর্তমানে সদ্য যোগদান করা চিকিৎসকদের মাসিক বেতন অনেক স্থানে মাত্র দুই থেকে চার হাজার ইউয়ান—যে অঙ্কে ভাড়া গুণতেই কষ্ট হয়, অন্যান্য খরচ তো দূরের কথা।

ঝাও ও গাও নিঃসঙ্গ উদাহরণ নন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘আমি প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম আমি আসলে কী করতাম’ হ্যাশট্যাগে অসংখ্য তরুণ–তরুণী ভবিষ্যৎ–দুর্ভাবনা ও হতাশার কথা জানিয়ে মজার ছলে ভিডিও দিচ্ছেন। ওই ট্রেন্ড দুটি বিষয় সামনে এনেছে—এক, নতুন প্রজন্মের জন্য সন্তানের সংখ্যা কমে যাওয়ার ব্যাপক প্রভাব; দুই, দীর্ঘ পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের পরও ফল না পাওয়া এবং চাকরির স্বপ্নের অমিল।

২০০০–এর দশকের গোড়ায় জন্ম নেওয়া ‘জেনারেশন জেড’‑এর অনেককে ‘চাকরির দৌড়ে নেমে পড়ার বদলে শুয়ে থাকা পছন্দ’‑এর অভিযোগ শুনতে হয়েছিল। এবার তারা এবং তাদের পরের প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাচ্ছে—সমস্যা উদ্যোগে নয়, বরং সমাজ তাদের সামনে কী সুযোগ রাখছে, সেটিতেই।

হ্যাশট্যাগটি সাধারণ মানুষের অভাব–অভিযোগ থেকে শুরু হলেও কয়েক শ কোটি ভিউ পায় ‘তুয়ানবো’ বা লাইভস্ট্রিমারদের হাত ধরে। ‘তুয়ানবো’ প্ল্যাটফর্মে সাবেক টিভি সঞ্চালক থেকে পপ আইডল, এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও লাইভে এসে দ্রুত আয় করার চেষ্টা করেন। রোজ প্রায় বারো ঘণ্টা কাজ, মাসে মাত্র এক–দুটি ছুটি আর গুটি কয়েক বড় গ্রাহকের টিপসই আয়ের মূল ভরসা। লাইভের বাইরে কারও‑কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত চ্যাট চালিয়ে সম্পর্ক ধরে রাখাও চাকরির অংশ।

কিছু হোস্ট নিজেদের অতীত—লাইব্রেরিতে ঘাম ঝরানো মেধাবী ছাত্র বা আর্থিক পুনর্গঠনে চাকরি হারানো টিভি উপস্থাপক—দেখিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করেন। সার্জন, পিয়ানো শিক্ষক, সাবেক পপ আইডল, এমনকি সরকারি কর্মচারী—অনেকে এখন স্ট্রিট ফুড বিক্রি করেন, ভোজন ডেলিভারি দেন বা টিকটকে লাইভস্ট্রিম করেন।

ভিডিওগুলোর নিচে ঘুরেফিরে একই মন্তব্য: ‘চাকরির বাজার যে এত কঠিন, বুঝতেই পারিনি।’ এক কোটি বিশ লাখ নতুন স্নাতক—ইতিহাসে সর্বোচ্চ—এই বাজারে ঢুকছে, অর্থনীতি নিম্নমুখী, ফলে ট্রেন্ডটি আরও বিস্তারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শুধু অর্থনৈতিক মন্দাই নয়—ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নতুন শুল্ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্ভর পরিবর্তনও চাকরি সংকট বাড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া সাময়িক সহমর্মিতা জোগালেও, তরুণেরা তাঁদের স্বপ্ন আবার মনে করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে নীতি নির্ধারকদের কার্যকর সমাধানের ওপর।


জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সক্ষমতা বিকাশে সকলের যৌথ দায়িত্ব

চীনের তরুণদের স্বপ্নে ভাটা: স্টেথো আর পিয়ানোর বদলে স্ট্রিট ফুড আর লাইভস্ট্রিম

০৮:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
শেনচেনের এক ভোরবেলার নাস্তার দোকানের বাইরে মানুষের ছোট লাইন। দোকানের মালিক ঝাও লাওশি—সবার কাছে ‘শিক্ষক ঝাও’—চিয়াং ফান নামের জনপ্রিয় ভাপা চালের রোল ও গরম সয়া দুধ বিক্রি করেন। মাত্র ১৫ বর্গমিটার জায়গার দোকান, তবু ভেতরে রাখা একটি পিয়ানো চোখে পড়ে। নিয়ম সহজ: পিয়ানোতে একটি সুর বাজান, বিনা মূল্যে চিয়াং ফান পান।

কয়েক মাস আগেও ঝাও লাওশি দোকানটির উল্টো পাশে ছোট পিয়ানো স্কুল চালাতেন। সপ্তাহান্তে টানা দশ ঘণ্টা করে একে–একে শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন। হঠাৎ পরিবারগুলোর পক্ষে টিউশন ফি বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তার মূল কারণ, শেনচেনেও জন্মহার দশকজুড়ে কমছে বলে শিশুসংখ্যা কমে গেছে, আর চাকরির বাজারে ভাটা। অনেকে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বদলে গেলে ঝাও লাওশি নিজের গল্প নিয়ে টিকটকের চীনা সংস্করণ দোইইনে একটি ভিডিও দেন—শিরোনাম ‘আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি আসলে কী করতাম’। পিয়ানো শিক্ষক থেকে নাস্তার বিক্রেতা হয়ে ওঠার সেই ভিডিওতে কয়েক লাখ লাইক জমেছে।

চীনের অপর প্রান্তে বসবাস করেন শিয়াও গাও, একসময়ের ইনার মঙ্গোলিয়ার এক তৃতীয় সারির হাসপাতালের নিউরোসার্জন। আজ তিনি প্রতি রাতেই বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘাস জেলি (একটি জনপ্রিয় ডেজার্ট) বিক্রির ছোট স্টল বসান। সার্জন হতে তাঁর লেগেছে আট বছরের বেশি। অথচ অর্থনৈতিক মন্দায় সরকারি তহবিল সঙ্কুচিত হওয়ায় অনেক সরকারি হাসপাতাল বাজেট কমাতে গিয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে। বর্তমানে সদ্য যোগদান করা চিকিৎসকদের মাসিক বেতন অনেক স্থানে মাত্র দুই থেকে চার হাজার ইউয়ান—যে অঙ্কে ভাড়া গুণতেই কষ্ট হয়, অন্যান্য খরচ তো দূরের কথা।

ঝাও ও গাও নিঃসঙ্গ উদাহরণ নন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘আমি প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম আমি আসলে কী করতাম’ হ্যাশট্যাগে অসংখ্য তরুণ–তরুণী ভবিষ্যৎ–দুর্ভাবনা ও হতাশার কথা জানিয়ে মজার ছলে ভিডিও দিচ্ছেন। ওই ট্রেন্ড দুটি বিষয় সামনে এনেছে—এক, নতুন প্রজন্মের জন্য সন্তানের সংখ্যা কমে যাওয়ার ব্যাপক প্রভাব; দুই, দীর্ঘ পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের পরও ফল না পাওয়া এবং চাকরির স্বপ্নের অমিল।

২০০০–এর দশকের গোড়ায় জন্ম নেওয়া ‘জেনারেশন জেড’‑এর অনেককে ‘চাকরির দৌড়ে নেমে পড়ার বদলে শুয়ে থাকা পছন্দ’‑এর অভিযোগ শুনতে হয়েছিল। এবার তারা এবং তাদের পরের প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাচ্ছে—সমস্যা উদ্যোগে নয়, বরং সমাজ তাদের সামনে কী সুযোগ রাখছে, সেটিতেই।

হ্যাশট্যাগটি সাধারণ মানুষের অভাব–অভিযোগ থেকে শুরু হলেও কয়েক শ কোটি ভিউ পায় ‘তুয়ানবো’ বা লাইভস্ট্রিমারদের হাত ধরে। ‘তুয়ানবো’ প্ল্যাটফর্মে সাবেক টিভি সঞ্চালক থেকে পপ আইডল, এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও লাইভে এসে দ্রুত আয় করার চেষ্টা করেন। রোজ প্রায় বারো ঘণ্টা কাজ, মাসে মাত্র এক–দুটি ছুটি আর গুটি কয়েক বড় গ্রাহকের টিপসই আয়ের মূল ভরসা। লাইভের বাইরে কারও‑কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত চ্যাট চালিয়ে সম্পর্ক ধরে রাখাও চাকরির অংশ।

কিছু হোস্ট নিজেদের অতীত—লাইব্রেরিতে ঘাম ঝরানো মেধাবী ছাত্র বা আর্থিক পুনর্গঠনে চাকরি হারানো টিভি উপস্থাপক—দেখিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করেন। সার্জন, পিয়ানো শিক্ষক, সাবেক পপ আইডল, এমনকি সরকারি কর্মচারী—অনেকে এখন স্ট্রিট ফুড বিক্রি করেন, ভোজন ডেলিভারি দেন বা টিকটকে লাইভস্ট্রিম করেন।

ভিডিওগুলোর নিচে ঘুরেফিরে একই মন্তব্য: ‘চাকরির বাজার যে এত কঠিন, বুঝতেই পারিনি।’ এক কোটি বিশ লাখ নতুন স্নাতক—ইতিহাসে সর্বোচ্চ—এই বাজারে ঢুকছে, অর্থনীতি নিম্নমুখী, ফলে ট্রেন্ডটি আরও বিস্তারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শুধু অর্থনৈতিক মন্দাই নয়—ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নতুন শুল্ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্ভর পরিবর্তনও চাকরি সংকট বাড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া সাময়িক সহমর্মিতা জোগালেও, তরুণেরা তাঁদের স্বপ্ন আবার মনে করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে নীতি নির্ধারকদের কার্যকর সমাধানের ওপর।