০৬:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
জাপানে ঝিনুকের সংকট, শীতের প্রিয় খাবার ধরেছে ধাক্কা ইন্দোনেশিয়া–শ্রীলঙ্কা–থাইল্যান্ডে প্রাণঘাতী বন্যা: বিজ্ঞানীদের চোখে জলবায়ু সতর্কবার্তা নোটিফিকেশন জঞ্জাল সামলাতে অ্যান্ড্রয়েড ১৬–তে এআই সারাংশ ও নতুন কনট্রোল ১৯টি অ–ইউরোপীয় দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থগিত, অনিশ্চয়তায় হাজারো পরিবার ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা, প্রাণিজ কল্যাণ আইনে গ্রেপ্তার ১ জয়পুরহাটে বাড়িতে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ভাতিজি ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে ট্রাক–পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২ ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস–ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩ গাজীপুরের শ্রীপুরে অটোরিকশা গ্যারেজে আগুন, পুড়েছে ১৫ যানবাহন “‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ ‘টাইটানিক’–ধরনের হৃদয়ভাঙা, বলছেন সমালোচকেরা”

১৯টি অ–ইউরোপীয় দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থগিত, অনিশ্চয়তায় হাজারো পরিবার

অভিবাসন স্থগিতের নতুন ধাক্কা

ট্রাম্প প্রশাসন ১৯টি অ–ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা সব ধরনের অভিবাসন আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এতে গ্রিন কার্ড, নাগরিকত্ব, আশ্রয় এবং বিভিন্ন ভিসার প্রক্রিয়াও থেমে গেছে, বিশেষ করে যেসব দেশ আগে থেকেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ এই তালিকায় আছে, ফলে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করা অভিবাসীরা হঠাৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার পর নিরাপত্তা ঝুঁকি পুনর্মূল্যায়নের কথা বলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের চলমান সব আবেদন আপাতত স্থগিত রেখে পুনরায় নিরাপত্তা যাচাই করা হবে। অনেককে আবার সাক্ষাৎকারে ডাকা হচ্ছে, আর অনেকের নাগরিকত্ব গ্রহণ বা স্ট্যাটাস পরিবর্তনের নির্ধারিত তারিখ হঠাৎ বাতিল হয়েছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, অনেক পরিবার বহু বছরের অপেক্ষা ও বিচ্ছেদের পর নাগরিকত্বের শেষ ধাপের দোরগোড়ায় এসে এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করার শঙ্কায় ভুগছে। স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠনগুলো জানাচ্ছে, নানা ধরনের কাগজপত্র, কাজের অনুমতি আর ভ্রমণ পরিকল্পনা এখন সবাই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।

Trump administration pauses all immigration applications from 19 non-European  countries | CBC News

প্রশাসন এই সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে জননিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ হিসেবে তুলে ধরছে। তাদের দাবি, আগের যাচাই প্রক্রিয়ায় কিছু ঝুঁকিপূর্ণ আবেদনকারী ধরা পড়েনি, তাই উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ধরা হওয়া দেশগুলোর নাগরিকদের অতিরিক্ত যাচাই করা যৌক্তিক। সমালোচকদের মতে, এটি মূলত আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞারই সম্প্রসারিত রূপ, যা বাস্তবে আইনি অভিবাসন পথকেও সংকুচিত করছে। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তা ঝুঁকির বদলে পুরো জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

কূটনৈতিক ও ভেতরের চাপ

এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে কূটনৈতিক সম্পর্কেও নতুন প্রশ্ন উঠেছে। তালিকাভুক্ত কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দীর্ঘদিনের অংশীদার, আবার কোথাও মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও আছে। এসব দেশের নীতিনির্ধারকেরা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া না দিলেও, অঘোষিতভাবে অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য গৃহীত কড়া পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে সামরিক সমন্বয়, বাণিজ্য কিংবা জ্বালানি ইস্যুতেও নতুন চাপ তৈরি হতে পারে।

U.S. Pauses Immigration Applications From Nations on Travel Ban List - The  New York Times

দেশের ভেতরে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এই নীতি জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক এবং মুসলিমপ্রধান ও আফ্রিকান দেশগুলোকে অসামঞ্জস্যভাবে টার্গেট করছে। আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আদালতে হওয়া লড়াইয়ের উদাহরণ টেনে তারা বলছে, নিরাপত্তার অজুহাতে রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা আবারও সামনে আসছে। বিভিন্ন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রত্যেকটি বাতিল হওয়া সাক্ষাৎকার, স্থগিত হওয়া শপথ অনুষ্ঠান ও দাপ্তরিক চিঠিপত্র নথিভুক্ত করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে পরবর্তী আইনি লড়াইয়ে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

এদিকে ব্যবসায়ী মহল বলছে, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলসহ বহু খাতে দক্ষ কর্মী সংকট মোকাবিলায় যে অভিবাসী শ্রমশক্তির ওপর নির্ভরতা রয়েছে, তা এখন আরও ঝুঁকির মুখে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আশঙ্কা করছে, তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা ভিসা নবায়ন বা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে না পারলে পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যেতে পারে। ধর্মীয় নেতা ও শরণার্থী সহায়তা গোষ্ঠীগুলো বলছে, সন্ত্রাসী হামলার দায় কখনোই সাধারন অভিবাসীদের ঘাড়ে চাপানো যায় না। কংগ্রেস বিভক্ত থাকা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ আসতে পারে—এমন ইঙ্গিতের মধ্যে অনেক পরিবারই এখন দীর্ঘ রাজনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জাপানে ঝিনুকের সংকট, শীতের প্রিয় খাবার ধরেছে ধাক্কা

১৯টি অ–ইউরোপীয় দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থগিত, অনিশ্চয়তায় হাজারো পরিবার

০৫:০০:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

অভিবাসন স্থগিতের নতুন ধাক্কা

ট্রাম্প প্রশাসন ১৯টি অ–ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা সব ধরনের অভিবাসন আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এতে গ্রিন কার্ড, নাগরিকত্ব, আশ্রয় এবং বিভিন্ন ভিসার প্রক্রিয়াও থেমে গেছে, বিশেষ করে যেসব দেশ আগে থেকেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ এই তালিকায় আছে, ফলে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করা অভিবাসীরা হঠাৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার পর নিরাপত্তা ঝুঁকি পুনর্মূল্যায়নের কথা বলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের চলমান সব আবেদন আপাতত স্থগিত রেখে পুনরায় নিরাপত্তা যাচাই করা হবে। অনেককে আবার সাক্ষাৎকারে ডাকা হচ্ছে, আর অনেকের নাগরিকত্ব গ্রহণ বা স্ট্যাটাস পরিবর্তনের নির্ধারিত তারিখ হঠাৎ বাতিল হয়েছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, অনেক পরিবার বহু বছরের অপেক্ষা ও বিচ্ছেদের পর নাগরিকত্বের শেষ ধাপের দোরগোড়ায় এসে এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করার শঙ্কায় ভুগছে। স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠনগুলো জানাচ্ছে, নানা ধরনের কাগজপত্র, কাজের অনুমতি আর ভ্রমণ পরিকল্পনা এখন সবাই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।

Trump administration pauses all immigration applications from 19 non-European  countries | CBC News

প্রশাসন এই সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে জননিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ হিসেবে তুলে ধরছে। তাদের দাবি, আগের যাচাই প্রক্রিয়ায় কিছু ঝুঁকিপূর্ণ আবেদনকারী ধরা পড়েনি, তাই উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ধরা হওয়া দেশগুলোর নাগরিকদের অতিরিক্ত যাচাই করা যৌক্তিক। সমালোচকদের মতে, এটি মূলত আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞারই সম্প্রসারিত রূপ, যা বাস্তবে আইনি অভিবাসন পথকেও সংকুচিত করছে। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তা ঝুঁকির বদলে পুরো জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

কূটনৈতিক ও ভেতরের চাপ

এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে কূটনৈতিক সম্পর্কেও নতুন প্রশ্ন উঠেছে। তালিকাভুক্ত কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দীর্ঘদিনের অংশীদার, আবার কোথাও মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও আছে। এসব দেশের নীতিনির্ধারকেরা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া না দিলেও, অঘোষিতভাবে অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য গৃহীত কড়া পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে সামরিক সমন্বয়, বাণিজ্য কিংবা জ্বালানি ইস্যুতেও নতুন চাপ তৈরি হতে পারে।

U.S. Pauses Immigration Applications From Nations on Travel Ban List - The  New York Times

দেশের ভেতরে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এই নীতি জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক এবং মুসলিমপ্রধান ও আফ্রিকান দেশগুলোকে অসামঞ্জস্যভাবে টার্গেট করছে। আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আদালতে হওয়া লড়াইয়ের উদাহরণ টেনে তারা বলছে, নিরাপত্তার অজুহাতে রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা আবারও সামনে আসছে। বিভিন্ন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রত্যেকটি বাতিল হওয়া সাক্ষাৎকার, স্থগিত হওয়া শপথ অনুষ্ঠান ও দাপ্তরিক চিঠিপত্র নথিভুক্ত করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে পরবর্তী আইনি লড়াইয়ে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

এদিকে ব্যবসায়ী মহল বলছে, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলসহ বহু খাতে দক্ষ কর্মী সংকট মোকাবিলায় যে অভিবাসী শ্রমশক্তির ওপর নির্ভরতা রয়েছে, তা এখন আরও ঝুঁকির মুখে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আশঙ্কা করছে, তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা ভিসা নবায়ন বা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে না পারলে পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যেতে পারে। ধর্মীয় নেতা ও শরণার্থী সহায়তা গোষ্ঠীগুলো বলছে, সন্ত্রাসী হামলার দায় কখনোই সাধারন অভিবাসীদের ঘাড়ে চাপানো যায় না। কংগ্রেস বিভক্ত থাকা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ আসতে পারে—এমন ইঙ্গিতের মধ্যে অনেক পরিবারই এখন দীর্ঘ রাজনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।