উষ্ণ সমুদ্র ও রোগে কমেছে উৎপাদন
জাপানের সমুদ্র উপকূলজুড়ে ঝিনুকের খারাপ মৌসুম রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত সবাইকে চাপে ফেলেছে। শীত মৌসুমে যেখানে হটপট, গ্রিলড ঝিনুক ও বিভিন্ন মৌসুমি মেনুতে চাহিদা আকাশছোঁয়া থাকে, সেখানে এই বছর সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর ফলে অনেক রেস্টুরেন্ট পরিবেশন কমিয়ে দিচ্ছে, প্লেটে ঝিনুকের সংখ্যা কম হচ্ছে, কিছু জনপ্রিয় পদ আবার দোকান খুলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শেফরা।
উৎপাদকরা বলছেন, একদিকে সমুদ্রের উষ্ণতা বেড়েছে, অন্যদিকে উপকূলীয় পরিবেশগত চাপ ও ভিড় করা খামারে রোগ ছড়িয়ে পড়ায় ঝিনুকের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় কখনো অতিরিক্ত বৃষ্টি, কখনো আবার দীর্ঘ খরায় উপকূলে লবণাক্ততা ও পুষ্টির ভারসাম্য দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এতে কচি ঝিনুকের বেঁচে থাকা কমে যাচ্ছে; অনেক খামারেই বড় হওয়ার আগেই প্রচুর শামুক মারা যাচ্ছে বলে স্থানীয় সমিতিগুলো জানাচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে হিরোশিমা ও মিয়াগি প্রিফেকচারের ওপর, যেখানকার ঝিনুক বহু বছর ধরে জাতীয়ভাবে নামকরা। সেখানে কেউ কেউ বলছেন, এ বছরের ফলন স্বাভাবিক মৌসুমের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ছোট হয়ে যাওয়া ঝিনুক আগেভাগে তুলে বিক্রি করলে দাম কমে যায়, আবার পরে আশা করে রাখলেও রোগ ও আবহাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে—এই দ্বিধায় পড়েছেন অনেক খামারি। তার ওপর জ্বালানী, শ্রম ও খামার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের জন্যই হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে উঠছে।
খাবার সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভোক্তাদের কাছে বিষয়টি শুধু দামের নয়, শীতের প্রিয় খাদ্য অভিজ্ঞতার সঙ্গেও যুক্ত। ঝিনুকভিত্তিক হটপট, গ্রিল প্ল্যাটার কিংবা বছরের শেষ দিকের আড্ডায় ঝিনুক অনেক পরিবারের সাংস্কৃতিক আচার হিসেবে গড়ে উঠেছে। খাদ্য সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন, দাম আরও বাড়তে থাকলে তরুণ প্রজন্ম সহজ বিকল্পের দিকে ঝুঁকবে এবং ধীরে ধীরে ঝিনুক খাওয়ার অভ্যাসই কমে যেতে পারে। অনেক রেস্টুরেন্ট তাই পূর্ণ ঝিনুক মেনুর বদলে সীমিত সংখ্যক প্রিমিয়াম ঝিনুকসহ সেট মেনু দিচ্ছে, যেখানে বাকি অংশ পূরণ করা হচ্ছে সবজি ও অন্য সি–ফুড দিয়ে।

একই সঙ্গে সরবরাহ চেইন জুড়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়েছে। গবেষক ও স্থানীয় প্রশাসন তুলনামূলক সহনশীল ঝিনুকের জাত নিয়ে কাজ করছেন, পাশাপাশি খামারকে গভীর ও অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা পানিতে সরিয়ে নেওয়ার মতো পদ্ধতিও আজমিয়ে দেখছেন। কোথাও কোথাও খামারের ঘনত্ব কমিয়ে রোগের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা চলছে। পরিবেশবিদদের দাবি, উপকূলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা গেলে শুধু ঝিনুক নয়, পুরো সামুদ্রিক পরিবেশই লাভবান হবে, যা আবার ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
খুচরা বিক্রেতারা এদিকে বিদেশি ঝিনুক আমদানি বাড়াচ্ছেন এবং প্যাকেটের গায়ে উৎসস্থলের তথ্য স্পষ্ট করে তুলে ধরে উচ্চ দাম ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদে ফ্রোজেন বা প্রি–শাকড পণ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাতে দীর্ঘ সময় ধরে স্টক রাখা যায় এবং কম পরিমাণে বিক্রি করাও সম্ভব হয়। তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিদেশি ঝিনুক দিয়ে জাপানের উপসাগরে বেড়ে ওঠা ঝিনুকের স্বাদ ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব পুরোপুরি পূরণ করা যাবে না। জলবায়ু চাপ বাড়তে থাকায় অনেকেই ভাবছেন, এখনই অভিযোজন না করলে ভবিষ্যতে এই শীতকালীন প্রিয় খাবার হয়তো আর আগের মতো সহজলভ্য থাকবে না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















