এই সরকার আইনের শাসনের বদলে মব শাসন চালু করেছে: শামীম হায়দার পাটোয়ারী
পুলিশি বাধা সত্ত্বেও জাতীয় পার্টির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতারা গ্রেফতারকৃত দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তি, চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং মব ভায়োলেন্স বন্ধের দাবি জানান। দুপুর থেকেই পুলিশ সমাবেশে বাধা দিতে শুরু করেছিলেন, তবু কর্মীরাও বাধা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সরল ভাষায় অভিযোগ ও দাবি
সমাবেশের সভাপতিত্বে থাকা জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তারা ভেবেছিলেন যে দেশের মানুষ বেশি কর্মসংস্থান পাবে, কিন্তু বেকারদের সংখ্যা বেড়েছ। এই সরকার জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জাতিকে বিভাজিত করা হচ্ছে। তার ভাষায়, বর্তমান সরকার গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তাদের সংগ্রাম হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে বগুড়ায় তাদের অফিসে গতকাল হামলা হয়েছে, অন্যান্য স্থানে অফিসে আগ্রাসন ও নেতাকর্মীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেছিল, কিন্তু সেই দায়ের করা মামলাগুলোই প্রত্যাহার করা হচ্ছে, যা তারা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
অফিসগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে—এই ঘটনা প্রমাণ করছে দেশে সরকার নেই, রাষ্ট্রে ছিদ্র পড়েছে। এই গড়বড় অবস্থার মেরামত করাই তাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে তারা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়। সকল বাধা পেরিয়ে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের অনুরোধ ও প্রতিশ্রুতি
ব্যারিস্টার পাটোয়ারী স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৪ সালে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবিতে তাদের দল সেই বছরের নির্বাচন বর্জন করেছিল। তখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ২৭০ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছিলেন এবং কাদের নিজেও নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এখনো দেশের গণতন্ত্র ও জনস্বার্থ রক্ষায় তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চান। জনগণের আকাঙ্খা পূরণের রাজনীতি করতে যদি জেলে যেতে হয়, তারা জেলে যাবে; আঘাত পেলেও পিছিয়ে আসবে না।
শান্তি, অধিকার ও প্রতিবাদের অটলতা
সভাপতির বক্তৃতায় ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, জাতীয় পার্টি শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় এবং দেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও কর্মসূচির বিভিন্ন দিক থেকে কিছু অসহযোগিতার দরুণ সামান্য বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তবুও আজকের কাজ তারা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। অধিকার ও মানবাধিকারের জন্য তারা আইন অমান্য করেও লড়াই চালিয়ে যাবে এবং পিছপা হবে না।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকে কণ্ঠরোধের চেষ্টা আখ্যায়িত
পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, তাদের মাননীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদের আগের সরকারের আমলেও গণমানুষের পক্ষে কথা বলার পর আইন দিয়ে তার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানেও একইভাবে আইনকে কাজে লাগিয়ে তার কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা চলছে, যা তারা তীব্রভাবে নিন্দা জানায়। দেশের বর্তমান অবস্থার ওপর হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশ ডুবে যাচ্ছে, অথচ সরকার শুধু দেখছে; শান্তির প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু এখন দেশের প্রতিটি জায়গায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার আইনের শাসনের বদলে মব শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে—এইটিই তার মূল বক্তব্য।
অন্যান্য নেতাদের উপস্থিতি ও সমর্থন
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মহসিন ইসলাম হাবুল ও যুগ্ম মহাসচিব সামছুল হক। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নুরুন নাহার বেগম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন এবং মোঃ হেলাল উদ্দিন।
সমাবেশের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি একবার পুনরায় দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পথে ফেরার ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে। তারা ঘোষণা করেছে যে বাধা-বিপত্তি যাই থাকুক না কেন, দেশে ন্যায়, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষায় তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।