তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, বঙ্গভূমি কামদুঘা; যে কোন উপায়ে হউক না কেন দোহন করিতে পারিলেই লাভ। যদি এক উপায় নষ্ট হয়, অন্য উপায় অবলম্বন করিলে, নিশ্চয়ই কৃতকার্য্য হইবার সম্ভাবনা। রাজস্ব বিভাগে নিযুক্ত হওয়া ব্যতীত অন্য কোন সহজ উপায়ে অল্প দিনের। মধ্যে অগাধ সম্পত্তি করতলগত করা সুবিধাজনক নহে।
তাই তাঁহার তাদৃশ কূটবুদ্ধির প্রবাহ প্রতিনিয়ত মহম্মদ রেজা খাঁকে বশীভূত করিবার জন্ম নানাভাবে নানাপথে পরিচালিত হইতে লাগিল। তিনি সামান্ত পদের প্রত্যাশী ছিলেন না; যে পদ প্রাপ্ত হইলে শীঘ্রই তাঁহার মনস্কামনা সিদ্ধ হয়, তিনি সেইরূপ পদপ্রাপ্তির ইচ্ছা করিতেছিলেন। সুতরাং একটু ‘গুরুতরভাবে রেজা থাঁকে বাধ্য করিতে হইবে, ইহা তিনি স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন। ক্রমে ক্রমে সমস্ত সুযোগ আসিয়া উপস্থিত হইল। রেজা খাঁ নানা কারণে অত্যন্ত বিপদ্গ্রস্ত হইয়া পড়েন।’ তাঁহাকে ঋণভারপীড়িত হইয়া অনেক কষ্ট পাইতে হইয়াছিল।
অর্থাভাবে সময়ে সময়ে তাঁহার চিত্ত অত্যন্ত’ব্যাকুল হইয়া উঠিত, তজ্জন্য তাঁহাকে নানাপ্রকার লাঞ্ছনাও ভোগ করিতে হইয়াছিল। দেবী সিংহ এই সময়ে উত্তম সুযোগ বুঝিয়া ধীরে ধীরে নিজ জাল বিস্তার করিতে লাগিলেন। ব্যবসায়বাণিজ্য হইতে তিনি যাহা কিফিং উপার্জন করেন, ক্রমে ক্রমে চাতুরী প্রবঞ্চনা দ্বারা সেই অর্থ অনেক বিষয়ে নিয়োগ করিয়া তাহা হইতে অগাধ সম্পত্তির অধি-পাত হন। যে ভীষণ অত্যাচার-বহ্নিতে বঙ্গভূমি দগ্ধ হয়, দেবী সিংহ পূর্ব্ব হইতেই তাহার সূচনা করিয়া রাখেন।
সেই সমস্ত অর্থরাশি লইয়া, তিনি এক্ষণে রেজা খাঁর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন এবং তাঁহার যখনই যখনই বিপদ্ উপস্থিত হইত, দেবী স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া নিজের অর্থ দ্বারা তাঁহাকে সেই সেই বিপদ হইতে মুক্ত করিতে লাগিলেন। এইরূপে ক্ষমতাশালী রেজা খাঁ ক্রমে ক্রমে দেবীসিংহের বিশাল বাগুরায় আবদ্ধ হইয়া পড়িলেন। দেবীসিংহও আপনার চতুর নীতি অবলম্বন করিয়া, কার্য্যোদ্ধারের চেষ্টায় মনোনিবেশ করিলেন। রেজা খাঁ দেবীসিংহের উপকার ভুলিতে পারিলেন না; কাজেই তাঁহাকে সেই চতুরপ্রবরের অনুরোধ রক্ষা করিতে হইল।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















