গত ছয় দশকের ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সম্পর্ক অগ্রাহ্য করলে যে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়, জাতিসংঘ, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও এখন কানাডা ঠিক সেই কাজটিই করছে। আসলে তারা “ভুল” নয়, সচেতন পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে; ইসরায়েল-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে, আর তা করছে স্পষ্ট বিদ্বেষ নিয়ে।
তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ শুরু হওয়া যুদ্ধে হামাসের নিশ্চিত পরাজয় ঠেকানো। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, এই যুদ্ধের শেষে হামাস আর থাকবে না। নেতানিয়াহুর প্রতি জাতিসংঘ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের অপছন্দই তাদের তাড়না জোগাচ্ছে। আরও বিপজ্জনক হলো, তারা গাজা উপত্যকায় হামাসকে “বৈধ” শাসক হিসেবে টিকিয়ে রাখতে চায়।
গাজায় অনাহার আছে, কিন্তু বিবিসির মতো “সংবাদ” মাধ্যম যেভাবে দেখাচ্ছে, ততটা ব্যাপক নয়। ইসরায়েল আংশিকভাবে দায়ী হলেও হামাস ও জাতিসংঘের তুলনায় সেই দায় অনেক কম।
খাদ্য সহায়তা আটকে থাকার মূল কারণ—জাতিসংঘ জেদ ধরে আছে যে, সরবরাহ ও বণ্টনে হামাস থাকতে হবে; যুক্তরাষ্ট্রের স্বচ্ছতা-সম্পন্ন ত্রাণ সংস্থা বা স্বাধীন কোনো সংস্থার হাতে দায়িত্ব দিতে তারা রাজি নয়। হামাস হুমকি দিয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে কেউ খাবার বিতরণ করলে তাকে খেসারত দিতে হবে।

নেতানিয়াহুর “গাজায় কেউ অনাহারে নেই” মন্তব্যের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “জানি না। টেলিভিশনে দেখে আমার মনে হয়, বিশেষ অনাহার নেই; তবে ওই সব শিশুরা খুবই ক্ষুধার্ত দেখাচ্ছে।” শিশুদের দুর্দশা হামাস ও তার সমর্থকেরা শুরু থেকেই যত দূর সম্ভব প্রচারযন্ত্রে ব্যবহার করেছে। হামাসের কাছে গাজার শিশু বা কারও জীবন যে সামান্যও মূল্য পায় না, তা নতুন কথা নয়।
ইসরায়েল যুদ্ধক্ষেত্রে বিরতি দিয়েছে, যাতে খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশ করতে পারে। হাজার হাজার টন সহায়তা ঢুকতে তারা অনুমতি দিয়েছে। সমস্যা ইসরায়েল নয়; সমস্যা জাতিসংঘ ও হামাস।
জাতিসংঘ হামাসকেই বণ্টনে বসিয়ে রাখতে মরিয়া থাকলে শিশুদের খাবার জোটার আশা নেই। এখানেই ফ্রান্স ও ব্রিটেন এসে পড়ে।
ইতিহাসের ভুল পাশে দাঁড়াতে ফরাসিরা অভ্যস্ত, তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০ জুলাই ম্যাক্রোঁর ঘরে দেশের ভেতর সমর্থন ছিল মাত্র ১৯ শতাংশ। দেশীয় অজনপ্রিয়তা থেকেই কি না, তিনি হঠাৎ “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র” স্বীকৃতি ঘোষণা করলেন। তাঁর ভাষায়, “মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তির প্রতি ঐতিহাসিক অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।” মাহমুদ আব্বাসকে লেখা চিঠিতে ম্যাক্রোঁ যুক্ত করলেন, “এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফ্রান্স নিঃসন্দেহে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি জবাব দিলেন, “ম্যাক্রোঁ যা বললেন, তার কোনো গুরুত্বই নেই; এতে কিছু বদলাবে না।”
স্টারমার বা কানাডার অবস্থানেও কিছুই বদলাবে না—ট্রাম্পের কথাই সত্য। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে কিছু পাল্টাবে না, তবে ফ্রান্স-ব্রিটেনের ঘোষণা ঠিক এই সময়ে এল কেন—সেটাই প্রশ্ন।

পৃথিবীর প্রায় দেড়শ দেশ যদিও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেই রাষ্ট্র নেই—সরকার নেই, সীমানা নেই, অস্তিত্বই নেই। তা হলে এখনই স্বীকৃতির তাড়া কেন? একটি কারণ—হামাসকে গাজায় “বৈধ” সরকার হিসেবে বাঁচিয়ে রাখা। আরেকটি, ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে হামাসের সঙ্গে “শান্তি” আলোচনায় রাজি করানো। দুটি কারণই প্রাসঙ্গিক।
ম্যাক্রোঁ-স্টারমার জানেন, পশ্চিম তীরে বা গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো জোর নেই, মাহমুদ আব্বাসকে জনগণ নেতৃত্বহীন ভাবেন। তাঁরা এটাও জানেন, হামাস ইরানের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও কাতারের গোপন সহায়তা পায়। কাজেই আজই “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র”কে সমর্থন করা তাদের কাছে নিরাপদ বাজি—বিশেষত জাতিসংঘ যখন হামাসকে ছাড়া খাদ্য সহায়তা আটকে রেখেছে।
ফ্রান্সের দীর্ঘ ইতিহাস আছে—অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা। ১৮৭১-এ, ফিরেও ১৯৪০-এ জার্মান বাহিনী প্যারিসের শঁ-জেলিজে প্যারেড করেছে। ব্রিটেনের ইতিহাস আলাদা—রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট থেকে উইনস্টন চার্চিল পর্যন্ত তারা অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়েছে।
২০০৩-এ ইরাক অভিযানের প্রাক্কালে এক ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসন্ন যুদ্ধে তিনি কার বিজয় চান? তিনি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এখন আবার ফ্রান্স অপশক্তির কাছে মাথা নিচু করছে। ম্যাক্রোঁর ঘোষণায় লাভবান একমাত্র হামাসই।
ভাগ্য ভালো, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন—ম্যাক্রোঁ বা স্টারমারের ঘোষণায় বাস্তব কিছু বদলাবে না। গাজায় লড়াইয়ের সমীকরণ, ইরানের বৈশ্বিক সন্ত্রাসী উচ্চাশা—এসব নির্ধারণ করবে ইসরায়েল-হামাস ও মুখ্য বিশ্বশক্তিরা, যেখানে ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডার কোনো প্রভাব নেই।
লেখক: জেড বাব্বিন জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক বিষয়ক কলাম লেখক; দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে নিয়মিত লেখেন এবং দ্য আমেরিকান স্পেকটেটরের সহযোগী সম্পাদক। ( লেখাটি ওয়াশিংটন টাইমস থেকে অনূদিত)
জেড বাব্বিন 


















