একটি জবরদস্তিমূলক বাণিজ্য কূটনীতির বিশ্বে শুল্ক ছাড়ের প্রকৃত মূল্য শতাংশে নয়, বরং সার্বভৌমত্বে পরিমাপ করা হয়।
এই মাসে ওয়াশিংটন কিছু নির্বাচিত দেশের জন্য শুল্ক ২৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সামান্য সাত শতাংশ কমানোকে কেউ কেউ “বড় সাফল্য” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশের জন্য এটি এক বিরল স্বস্তি মনে হতে পারে—এক এমন ব্যবস্থার মধ্যে যা তাদের অনেকের জন্যই ছিল কঠিন চাপের উৎস।
কিন্তু এই ছাড়ের বিনিময়ে ঠিক কী দেওয়া হয়েছে—এই অস্বস্তিকর প্রশ্নটি ক্রমশ সামনে আসছে।
শুরু থেকেই ট্রাম্পের “প্রতিপক্ষ শুল্ক” ব্যবস্থা ছিল প্রভাব খাটানোর কৌশল। এতে নমনীয়তার প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু শর্তও ছিল—ওয়াশিংটনের শর্তে সহযোগিতা। এমন এক ব্যবস্থায় প্রতিটি চুক্তির সঙ্গে থাকে অদৃশ্য শর্ত।

লেনদেনভিত্তিক ভূরাজনীতিতে শুল্ক আর শুধু অর্থনৈতিক অস্ত্র নয়—এগুলো এখন আলোচনার হাতিয়ার।
গত মাসের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মিরান খোলাখুলিভাবে জানান, এই কৌশলের উদ্দেশ্য হলো বিঘ্ন সৃষ্টির মাধ্যমে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের পুনর্গঠন বাধ্য করা। যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে, বিদেশি উৎপাদকদের ওপর শুল্কের বোঝা চাপাতে বা বাজারে প্রবেশাধিকার হারানোর হুমকি দিতে পারে—এই ধারণাই এর মূলে।
পাকিস্তানের উদাহরণ ধরা যাক, যার শুল্ক কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে। দেশটিতে বিপুল শেল তেলের মজুত রয়েছে—প্রযুক্তিগতভাবে উত্তোলনযোগ্য হলেও ঐতিহাসিকভাবে উন্নয়ন হয়নি। আঞ্চলিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের তেল সম্ভাবনায় আগ্রহ তার জ্বালানি গতিপথ বদলে দিতে পারে—যদি “গুরুতর ইচ্ছা ও দক্ষ অংশীদার” সামনে আসে।
প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত অর্থনীতি যেমন দক্ষিণ কোরিয়া—যা বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ—তাও নাকি জুলাইয়ে “একটি চুক্তি” করেছে।
স্বচ্ছতা ও পারস্পরিকতার ভিত্তিতে তৈরি বাণিজ্য চুক্তি দুই পক্ষের স্বার্থে কাজ করে। কিন্তু যদি এই সংশোধনগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিস্তৃত বাজার প্রবেশাধিকার, মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ সুবিধা বা পরোক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো শর্ত থাকে, তবে সুবিধাগুলো যতটা মনে হচ্ছে ততটা নাও হতে পারে।

কিছু দেশে বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যেই সতর্ক সংকেত দিয়েছেন। হাজার হাজার মার্কিন পণ্য—শূকর মাংস ও শস্য থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক—বাজারে প্রবেশ করলে স্থানীয় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, বিশেষ করে যদি পূর্বমূল্যায়ন ও যথাযথ সুরক্ষা ছাড়া শূন্য-হার শুল্ক দেওয়া হয়।
যেমন কিছু বিশ্লেষক সঠিকভাবে বলেছেন: “এখানে তৈরি, সেখানে কর নেওয়া, আবার তিনগুণ দামে ফের বিক্রি।” এই গতিশীলতা শুধু বাণিজ্য নয়—এটি প্রভাব ফেলে মূল্যস্ফীতি, শিল্পনীতি ও জাতীয় স্বনির্ধারণ ক্ষমতায়।
অবিশ্বস্ত দীর্ঘমেয়াদি খরচের বিনিময়ে স্বল্পমেয়াদি স্বস্তি খোঁজার বদলে, এই নতুন শুল্কনীতির মুখোমুখি দেশগুলোকে কৌশলগত স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
· শুল্ক ছাড় সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তির পূর্ণ জনসম্মুখ স্বচ্ছতা দাবি করা। ছাড়ের বিষয়গুলো খোলাখুলিভাবে জনসমক্ষে আলোচনা ও প্রকাশ করতে হবে।
· গুরুত্বপূর্ণ খাতে দেশীয় মূল্য শৃঙ্খল গড়ে তুলে যতটা সম্ভব মূল্য সংযোজন দেশীয়ভাবে ধরে রাখা। এর জন্য কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা থেকে সরে এসে উচ্চমূল্যের উৎপাদনের দিকে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।
· আমদানি বিকল্পায়ন ও শিল্প বৈচিত্র্যকরণ কোনো পুরোনো সুরক্ষাবাদ নয়; এগুলো অপরিহার্য। এগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলে এবং বহিরাগত ধাক্কায় ঝুঁকি কমায়।
যদি বৈশ্বিক শক্তিগুলো কৌশলগত সম্পদে প্রবেশাধিকার চায়, তবে তাদের পুরো ইকোসিস্টেমে বিনিয়োগ করতে হবে—শুধু কাঁচামাল উত্তোলনে নয়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অবশ্যই স্থানীয়ীকরণ শর্ত, মেধাস্বত্বের যৌথ মালিকানা এবং কর্মী দক্ষতা উন্নয়নের বিষয় থাকতে হবে, যাতে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় সুবিধা নিশ্চিত হয়।

যখন সমন্বিত ও নীতিভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়, তখন শুল্ক কূটনীতি অস্ত্রে পরিণত করা কঠিন হয়—বিশেষত যখন সেই জোটগুলোর ভোক্তা বাজার ৪৬০ কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৩ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের তুলনায় বহু গুণ বড়।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও এখন ৮৫ শতাংশ পরিবার আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় পড়েছে, ফলে ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
মিরান স্বীকার করেছেন, এই কৌশল নির্ভর করে বিদেশি উৎপাদকদের এমন এক ক্রেতার কাছে নতি স্বীকার করার ওপর—যে ক্রেতা হয়তো আর আগের মতো কেনার সামর্থ্য রাখে না।
উদীয়মান এই “ছাড়ের বিনিময়ে অনুগত্য” মডেলে সার্বভৌমত্ব সরাসরি কেড়ে নেওয়া হয় না—এটি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় গোপন শর্ত, অস্পষ্ট ছাড় এবং শিল্প খাতের দুর্বলতা বিনিময়ে ভূরাজনৈতিক শান্তির জন্য।
মধ্যম ও উদীয়মান শক্তিগুলোর প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো নিশ্চিত করা যে জাতীয় সম্পদ কখনোই সম্মতি, তদারকি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া বিনিময় না হয়।
কারণ একবার চুপিসারে দিয়ে দিলে, তা ফেরত পাওয়া আর সহজ হয় না।
লেখক: এমআইআর রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা
ড. রাইস হুসিন 


















