০৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

চার্লস ডারউইন যিনি পৃথিবীর চিন্তাকে বদলে দেন

চার্লস ডারউইন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের শ্রুসবেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল শিক্ষিত ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতি কৌতূহলী ছিলেন। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তিনি শুরুতে সাধারণ ছিলেন। প্রথমে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে গেলেও রক্ত ও অস্ত্রোপচার তাঁকে বিচলিত করায় সেই পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পরে তিনি ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করলেও প্রকৃতির প্রতি তাঁর আকর্ষণ তাঁকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়।

ভ্রমণ ও গবেষণার সূত্রপাত

ডারউইনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন তিনি এইচএমএস বিগল (HMS Beagle) নামের ব্রিটিশ সমুদ্রগামী জাহাজে ভ্রমণের সুযোগ পান। ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছরের এই ভ্রমণে তিনি দক্ষিণ আমেরিকা, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য অঞ্চলে প্রাণী, উদ্ভিদ ও ভূতাত্ত্বিক গঠন পর্যবেক্ষণ করেন। গ্যালাপাগোসের বিভিন্ন প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি, কাছিম এবং উদ্ভিদের ভিন্নতা তাঁর মনে প্রশ্ন জাগায়—কেন একই প্রজাতির প্রাণী ভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে গিয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে?

Darwin's Theory of Natural Selection – BioLogically

বিবর্তন তত্ত্বের মূল ধারণা

ডারউইন তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে ধীরে ধীরে “প্রাকৃতিক নির্বাচন” (Natural Selection) ধারণাটি উপস্থাপন করেন। এর মূল কথা হলো—প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম, সেই বৈশিষ্ট্যধারীরাই বেশি দিন টিকে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। ফলে ধীরে ধীরে সেই বৈশিষ্ট্য প্রজাতির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্মে জীবের মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং নতুন প্রজাতির জন্ম হয়।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিবর্তনের ব্যাখ্যা

ডারউইন দেখিয়েছিলেন, শুধু প্রাণী নয়, উদ্ভিদও বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়। যেমন—কিছু উদ্ভিদ নির্দিষ্ট পরিবেশে নিজেদের বীজ ছড়ানোর নতুন কৌশল তৈরি করেছে, আবার কিছু প্রাণী শিকারি থেকে বাঁচতে রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করেছে। গ্যালাপাগোসের ফিঞ্চ পাখির ঠোঁটের ভিন্নতা তাঁর তত্ত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়। কোনো দ্বীপে যেখানে কঠিন বীজ পাওয়া যেত, সেখানে পাখির ঠোঁট শক্ত ও মোটা হয়েছিল; আর যেখানে নরম ফল বা পোকামাকড় ছিল, সেখানে ঠোঁট হয়ে উঠেছিল চিকন ও ধারালো।

Origin of Species 1st edition fetches $174K | CBC News

“On the Origin of Species” গ্রন্থ

১৮৫৯ সালে ডারউইন তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ On the Origin of Species প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিবর্তিত হয় এবং কীভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়াটি কাজ করে। বইটি প্রকাশের পর ইউরোপজুড়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাঁর তত্ত্বের বিরোধিতা করেছিলেন, কারণ এটি বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। তবে বিজ্ঞানের জগতে এটি ছিল এক বিপ্লব, যা আজও আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভিত্তি।

সমালোচনা ও স্বীকৃতি

প্রথম দিকে ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলেও ধীরে ধীরে বিজ্ঞানীরা তাঁর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণকে গ্রহণ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে জেনেটিক্স এবং ডিএনএ আবিষ্কারের মাধ্যমে তাঁর তত্ত্ব আরও শক্তিশালী প্রমাণিত হয়। আজ বিবর্তন তত্ত্ব শুধু জীববিদ্যা নয়, চিকিৎসাশাস্ত্র, পরিবেশবিদ্যা ও কৃষিবিজ্ঞানেরও মৌলিক ভিত্তি।

10 Things You May Not Know About Charles Darwin | HISTORY

শেষ জীবন ও উত্তরাধিকার

ডারউইন জীবনের শেষ পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি শুধু প্রাণী নয়, উদ্ভিদের প্রজনন, কেঁচোর ভূমিকা এবং বিভিন্ন পরিবেশগত অভিযোজন নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি মারা যান এবং ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সমাহিত হন, যা কেবলমাত্র মহান বিজ্ঞানীদের জন্য সংরক্ষিত।

চার্লস ডারউইন মানুষের চিন্তাধারায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর তত্ত্ব আমাদের শেখায়, পৃথিবীর জীবজগত ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই টিকে থাকার মূলমন্ত্র। আজও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর আবিষ্কার নতুন গবেষণার পথপ্রদর্শক হয়ে আছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

চার্লস ডারউইন যিনি পৃথিবীর চিন্তাকে বদলে দেন

০৩:০০:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

চার্লস ডারউইন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের শ্রুসবেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল শিক্ষিত ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতি কৌতূহলী ছিলেন। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তিনি শুরুতে সাধারণ ছিলেন। প্রথমে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে গেলেও রক্ত ও অস্ত্রোপচার তাঁকে বিচলিত করায় সেই পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পরে তিনি ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করলেও প্রকৃতির প্রতি তাঁর আকর্ষণ তাঁকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়।

ভ্রমণ ও গবেষণার সূত্রপাত

ডারউইনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন তিনি এইচএমএস বিগল (HMS Beagle) নামের ব্রিটিশ সমুদ্রগামী জাহাজে ভ্রমণের সুযোগ পান। ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছরের এই ভ্রমণে তিনি দক্ষিণ আমেরিকা, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য অঞ্চলে প্রাণী, উদ্ভিদ ও ভূতাত্ত্বিক গঠন পর্যবেক্ষণ করেন। গ্যালাপাগোসের বিভিন্ন প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি, কাছিম এবং উদ্ভিদের ভিন্নতা তাঁর মনে প্রশ্ন জাগায়—কেন একই প্রজাতির প্রাণী ভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে গিয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে?

Darwin's Theory of Natural Selection – BioLogically

বিবর্তন তত্ত্বের মূল ধারণা

ডারউইন তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে ধীরে ধীরে “প্রাকৃতিক নির্বাচন” (Natural Selection) ধারণাটি উপস্থাপন করেন। এর মূল কথা হলো—প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম, সেই বৈশিষ্ট্যধারীরাই বেশি দিন টিকে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। ফলে ধীরে ধীরে সেই বৈশিষ্ট্য প্রজাতির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্মে জীবের মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং নতুন প্রজাতির জন্ম হয়।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিবর্তনের ব্যাখ্যা

ডারউইন দেখিয়েছিলেন, শুধু প্রাণী নয়, উদ্ভিদও বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়। যেমন—কিছু উদ্ভিদ নির্দিষ্ট পরিবেশে নিজেদের বীজ ছড়ানোর নতুন কৌশল তৈরি করেছে, আবার কিছু প্রাণী শিকারি থেকে বাঁচতে রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করেছে। গ্যালাপাগোসের ফিঞ্চ পাখির ঠোঁটের ভিন্নতা তাঁর তত্ত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়। কোনো দ্বীপে যেখানে কঠিন বীজ পাওয়া যেত, সেখানে পাখির ঠোঁট শক্ত ও মোটা হয়েছিল; আর যেখানে নরম ফল বা পোকামাকড় ছিল, সেখানে ঠোঁট হয়ে উঠেছিল চিকন ও ধারালো।

Origin of Species 1st edition fetches $174K | CBC News

“On the Origin of Species” গ্রন্থ

১৮৫৯ সালে ডারউইন তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ On the Origin of Species প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিবর্তিত হয় এবং কীভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়াটি কাজ করে। বইটি প্রকাশের পর ইউরোপজুড়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাঁর তত্ত্বের বিরোধিতা করেছিলেন, কারণ এটি বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। তবে বিজ্ঞানের জগতে এটি ছিল এক বিপ্লব, যা আজও আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভিত্তি।

সমালোচনা ও স্বীকৃতি

প্রথম দিকে ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলেও ধীরে ধীরে বিজ্ঞানীরা তাঁর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণকে গ্রহণ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে জেনেটিক্স এবং ডিএনএ আবিষ্কারের মাধ্যমে তাঁর তত্ত্ব আরও শক্তিশালী প্রমাণিত হয়। আজ বিবর্তন তত্ত্ব শুধু জীববিদ্যা নয়, চিকিৎসাশাস্ত্র, পরিবেশবিদ্যা ও কৃষিবিজ্ঞানেরও মৌলিক ভিত্তি।

10 Things You May Not Know About Charles Darwin | HISTORY

শেষ জীবন ও উত্তরাধিকার

ডারউইন জীবনের শেষ পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি শুধু প্রাণী নয়, উদ্ভিদের প্রজনন, কেঁচোর ভূমিকা এবং বিভিন্ন পরিবেশগত অভিযোজন নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি মারা যান এবং ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সমাহিত হন, যা কেবলমাত্র মহান বিজ্ঞানীদের জন্য সংরক্ষিত।

চার্লস ডারউইন মানুষের চিন্তাধারায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর তত্ত্ব আমাদের শেখায়, পৃথিবীর জীবজগত ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই টিকে থাকার মূলমন্ত্র। আজও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর আবিষ্কার নতুন গবেষণার পথপ্রদর্শক হয়ে আছে।