০৩:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের স্পষ্ট বার্তা: যেখানেই হোক, সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালানোর পূর্ণ অধিকার আছে ইভি আর স্মার্ট গ্যাজেটের জোরে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা দেখাল শাওমি ভারতের রেড ফোর্ট হামলার উদ্ধার হওয়া ভিডিও: আত্মঘাতী হামলার সাফাই দিচ্ছিলেন উমর উন-নবী ইন্দোনেশিয়ার শিশুদের ভিডিও গেমে জঙ্গি প্রভাব: পুলিশ গাজীপুরে কয়েল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃ আশে পাশের মানুষ সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনায় এখন শুধু ‘ট্যাকটিক্যাল বিরতি’,সতর্ক করল সিঙ্গাপুর গানপাউডার–পেট্রোল দিয়ে ময়মনসিংহে ট্রেন বগিতে আগুন ধামরাইয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ শীতেও কমছে না দাম: খুলনার কাঁচা বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে

বাংলাদেশের চৈত্রের দুপুরের সেই বিষণ্ন ডাকের ঘুঘুরা এখন কেমন আছে

বাংলাদেশে ঘুঘুরা কোলাম্বিফর্মিস (Columbiformes) বর্গের কোলাম্বিডি (Columbidae) পরিবারভুক্ত পাখি। ঘুঘুদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো ডালপাতা দিয়ে বানানো পাতলা বাসাসাধারণত ২টি ডিমমাবাবা দুজনেই ডিমে তা দেওয়া এবং ছানাকে ক্রপ মিল্ক’ খাওয়ানো। দেশের মাঠবসতিবাগান থেকে পাহাড়ি বন পর্যন্ত নানা আবাসে এদের দেখা মেলে।

বাংলাদেশে কোন কোন ঘুঘু আছে

বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে নথিভুক্ত ঘুঘু প্রজাতি হলো: স্পটেড ডাভ/চিত্রা ঘুঘু (Spilopelia chinensis), লাফিং ডাভ/হাসি ঘুঘু (Spilopelia senegalensis), ইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ (Streptopelia decaocto), রেড-কলার্ড ডাভ (Streptopelia tranquebarica), ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ/পূর্বীয় কচ্ছপ-ঘুঘু (Streptopelia orientalis—শীতকালীন অতিথি)এমেরাল্ড ডাভ (Chalcophaps indica—বননির্ভর) এবং বারড কুকু-ডাভ (Macropygia unchall—বিরলপাহাড়ি বননির্ভর)। অর্থাৎ দেশে কমপক্ষে সাতটি ঘুঘু প্রজাতির উপস্থিতি জানা যায়।

২০০ বছরের প্রেক্ষাপট: তখনকার বিস্তার ও ডাক

ঐতিহাসিক বিবরণগেজেটিয়ারলোককথা ও প্রবচনে চিত্রা ঘুঘু ও কলার্ড ডাভের ডাক গ্রামীণ জীবনের পরিচিত শব্দ। কৃষিভিত্তিক সমতলে ধানগমপাটের খেতগ্রামীণ আঙিনাফলের বাগান ও রেলপথরাস্তার ধারের বৃক্ষরেখাএসব জায়গায় ঘুঘুর উপস্থিতি ছিল বিশেষ লক্ষণীয়। পাহাড়ি ও চিরসবুজ বনে এমেরাল্ড ডাভ ও কুকু-ডাভ কম ঘনত্বে থাকত। সময়ের সঙ্গে জমির ব্যবহার বদলবনভূমি সংকোচন ও শিকারফাঁদের চাপ তাদের আবাস ও সংখ্যাবিশেষত বননির্ভর প্রজাতিগুলোকমিয়ে দেয়।

বর্তমান অবস্থাদেশব্যাপী চিত্র

চিত্রা ঘুঘু ও ইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ এখনো শহরউপশহরগ্রামে খুব সাধারণ এবং কিছু এলাকায় বাড়তি উপস্থিতি দেখা যায়। লাফিং ডাভ বহু জেলায় শুষ্ক ঝোপঝাড়খোলা জমিতে ছোট দলে খাবার খোঁজে। রেড-কলার্ড ডাভ উত্তরপশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের উন্মুক্ত সমতলে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। বিপরীতেএমেরাল্ড ডাভ ও বারড কুকু-ডাভের মতো বননির্ভর প্রজাতি কেবল সিলেটের লাওয়াছড়াসাতছড়িরেমাকালেঙ্গাপার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইথানচিরুমাসাজেকের মতো অঞ্চল এবং কিছু উপকূলীয় বনের ভিতরে টিকে আছে। ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ শীতে অল্প সংখ্যায় দেখা দেয়।

কোথায় বেশি দেখা মেলেজেলা/অঞ্চলভিত্তিক ছবি

চিত্রা ঘুঘুকলার্ড ডাভ ও লাফিং ডাভকে ঢাকার পার্কক্যাম্পাসচট্টগ্রামরাজশাহীখুলনারংপুরের নগর উদ্যানবাজারপাড়াগ্রামীণ আঙিনা ও রেলপথসড়কের ধারের গাছে সারা বছরই পাওয়া যায়। রেড-কলার্ড ডাভ বেশি দেখা যায় রাজশাহীদিনাজপুরপাবনাবগুড়াকুষ্টিয়ার খোলা কৃষিজ সমতলে। এমেরাল্ড ডাভ ও কুকু-ডাভ সীমিতভাবে মধুপুর শালবনের কিছু খণ্ডে এবং পূর্বদক্ষিণ-পূর্বের পাহাড়ি বনভূমিতে টিকে আছে। শীতকালে উত্তরপূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভের বিক্ষিপ্ত রেকর্ড পাওয়া যায়।

জীবনচক্র ও আচরণ

ঘুঘুরা সাধারণত পাতলা কঞ্চিডাল দিয়ে গাছের শাখাঝোপখুঁটি বা ভবনের কার্নিশে ১৬ মিটার উচ্চতায় বাসা বানায়। বছরে একাধিকবার প্রজনন করেপ্রতিবার ২টি ডিম পাড়ে। ডিমে ১৩১৫ দিন তা দিলে ছানা ফোটে১২২০ দিনের মধ্যে উড়তে শেখে। মাবাবা দুজনেই ক্রপ মিল্ক’ খাইয়ে ছানাকে বড় করে। খাদ্যাভ্যাসে বীজঘাসের দানাফসলের শস্য ও মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র পোকামাকড় থাকেবেশিরভাগই মাটিতে নেমে খাবার কুড়িয়ে খায়। সকালে ও বিকেলে সক্রিয় এবং দিনভর আলগা দলে ঘোরাফেরা করে।

কেন কমছেপ্রধান কারণ

১) আবাসস্থল হারানো: চিরসবুজ বনশালবনগ্রামীণ ফলের বাগান ও ঝোপঝাড় কমে যাওয়া।
২) শিকারফাঁদবেআইনি বেচাকেনা: গ্রামীণ ও পাহাড়ি অঞ্চলে ঐতিহ্যগত শিকার এখনো চাপ তৈরি করে।
৩) কৃষিজ রাসায়নিক: কীটনাশকআগাছানাশক বীজভিত্তিক খাদ্যশৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৪) নগরায়ণ ও বিড়ালকাকশালিকের মতো আক্রমণকারী প্রজাতির চাপবিশেষ করে বাসাছানায়।

প্রজাতিভিত্তিক সংক্ষিপ্ত নোট

স্পটেড ডাভ (চিত্রা ঘুঘু): সর্বত্র খুব সাধারণশহুরে পরিবেশে দারুণ মানিয়ে নিয়েছে।
ইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ: খোলা কৃষিজমিগ্রামীণ বসতিতে প্রচুরবিশ্বজুড়েই বিস্তৃত হচ্ছে।
লাফিং ডাভ (হাসি ঘুঘু): শুষ্ক ঝোপঝাড়খোলা জমিতে ছোট দলেবীজের সঙ্গে ক্ষুদ্র পোকাও খায়।
রেড-কলার্ড ডাভ: উত্তরপশ্চিমমধ্যাঞ্চলের সমতলে তুলনামূলক বেশিকৃষিজ ভূদৃশ্য পছন্দ।
ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ: শীতকালীন অতিথিসংখ্যায় কম।
এমেরাল্ড ডাভ: ঘন বনভূমির মেঝেপথে বিচরণআবাস হারানোর চাপে স্থানীয়ভাবে হ্রাসমান।
বারড কুকু-ডাভ: পাহাড়ি চিরসবুজ বনে বিরলটিকে থাকায় বন রক্ষাই মুখ্য শর্ত।

আইনগত অবস্থা ও সংরক্ষণ

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন২০১২ অনুযায়ী ঘুঘু শিকারফাঁদ পাতা ও বেচাকেনা দণ্ডনীয় অপরাধ। বৈশ্বিকভাবে অধিকাংশ ঘুঘু লিস্ট কনসার্ন’ হলেও বাংলাদেশে বননির্ভর প্রজাতি স্থানীয়ভাবে ঝুঁকিতে। তাই পাহাড়ি ও চিরসবুজ বনশালবন এবং গ্রামীণ ঝোপঝাড়বাগান রক্ষা জরুরি।

করণীয়কীভাবে ঘুঘুদের পাশে দাঁড়াব

১) অবশিষ্ট চিরসবুজ বন ও শালবনে কঠোর সুরক্ষাডুমুরহিজলকরচসহ বীজফলদ গাছ রোপণ।
২) শিকারফাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় নজরদারি ও বিকল্প জীবিকায় সহায়তা।
৩) শহরগ্রামে সবুজ করিডরপার্কস্কুলে নেস্ট-বক্স/সুরক্ষিত বৃক্ষরেখা।
৪) কৃষিজমিতে কীটনাশকের বিচক্ষণ ব্যবহার ও প্রাকৃতিক নিবাস রেখে চাষাবাদ।
৫) নাগরিক বিজ্ঞানভিত্তিক (eBird ইত্যাদি) নিয়মিত গণনা ও দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিংপ্রয়োজন হলে আঞ্চলিক জরিপ।

ডেটা-সীমাবদ্ধতা

দেশব্যাপী ঘুঘুদের কোনো এককসাম্প্রতিক জাতীয় শুমারি নেই। মাঠপর্যায়ের রেকর্ডগবেষণা নিবন্ধ ও নাগরিক বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করেই বর্তমান অবস্থা আঁকা হয়তবে তা যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয় কোন প্রজাতি স্থিতিশীলকারা হ্রাসমান এবং কোন এলাকায় সুরক্ষা জরুরি।

বাংলাদেশে অন্তত সাতটি ঘুঘু প্রজাতি পাওয়া যায়। চিত্রা ঘুঘুইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ ও লাফিং ডাভ দেশের শহরগ্রামে এখনো শক্ত অবস্থানে আছেরেড-কলার্ড ডাভও বহু এলাকায় নিয়মিত। কিন্তু এমেরাল্ড ডাভ ও বারড কুকু-ডাভের মতো বননির্ভর ঘুঘু স্থানীয়ভাবে কমেছে এবং সীমিত আবাসে টিকে আছেশীতে ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ কম সংখ্যায় আসে। আবাসস্থল রক্ষাশিকার নিয়ন্ত্রণ ও সবুজ করিডর বাড়ানো গেলে চৈত্রের দুপুরের সেই বিষণ্ন কিন্তু পরিচিত ঘুঘুর ডাক বাংলাদেশের আকাশেবাগানে আরও বহুদিন জেগে থাকবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশের চৈত্রের দুপুরের সেই বিষণ্ন ডাকের ঘুঘুরা এখন কেমন আছে

১১:০০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশে ঘুঘুরা কোলাম্বিফর্মিস (Columbiformes) বর্গের কোলাম্বিডি (Columbidae) পরিবারভুক্ত পাখি। ঘুঘুদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো ডালপাতা দিয়ে বানানো পাতলা বাসাসাধারণত ২টি ডিমমাবাবা দুজনেই ডিমে তা দেওয়া এবং ছানাকে ক্রপ মিল্ক’ খাওয়ানো। দেশের মাঠবসতিবাগান থেকে পাহাড়ি বন পর্যন্ত নানা আবাসে এদের দেখা মেলে।

বাংলাদেশে কোন কোন ঘুঘু আছে

বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে নথিভুক্ত ঘুঘু প্রজাতি হলো: স্পটেড ডাভ/চিত্রা ঘুঘু (Spilopelia chinensis), লাফিং ডাভ/হাসি ঘুঘু (Spilopelia senegalensis), ইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ (Streptopelia decaocto), রেড-কলার্ড ডাভ (Streptopelia tranquebarica), ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ/পূর্বীয় কচ্ছপ-ঘুঘু (Streptopelia orientalis—শীতকালীন অতিথি)এমেরাল্ড ডাভ (Chalcophaps indica—বননির্ভর) এবং বারড কুকু-ডাভ (Macropygia unchall—বিরলপাহাড়ি বননির্ভর)। অর্থাৎ দেশে কমপক্ষে সাতটি ঘুঘু প্রজাতির উপস্থিতি জানা যায়।

২০০ বছরের প্রেক্ষাপট: তখনকার বিস্তার ও ডাক

ঐতিহাসিক বিবরণগেজেটিয়ারলোককথা ও প্রবচনে চিত্রা ঘুঘু ও কলার্ড ডাভের ডাক গ্রামীণ জীবনের পরিচিত শব্দ। কৃষিভিত্তিক সমতলে ধানগমপাটের খেতগ্রামীণ আঙিনাফলের বাগান ও রেলপথরাস্তার ধারের বৃক্ষরেখাএসব জায়গায় ঘুঘুর উপস্থিতি ছিল বিশেষ লক্ষণীয়। পাহাড়ি ও চিরসবুজ বনে এমেরাল্ড ডাভ ও কুকু-ডাভ কম ঘনত্বে থাকত। সময়ের সঙ্গে জমির ব্যবহার বদলবনভূমি সংকোচন ও শিকারফাঁদের চাপ তাদের আবাস ও সংখ্যাবিশেষত বননির্ভর প্রজাতিগুলোকমিয়ে দেয়।

বর্তমান অবস্থাদেশব্যাপী চিত্র

চিত্রা ঘুঘু ও ইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ এখনো শহরউপশহরগ্রামে খুব সাধারণ এবং কিছু এলাকায় বাড়তি উপস্থিতি দেখা যায়। লাফিং ডাভ বহু জেলায় শুষ্ক ঝোপঝাড়খোলা জমিতে ছোট দলে খাবার খোঁজে। রেড-কলার্ড ডাভ উত্তরপশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের উন্মুক্ত সমতলে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। বিপরীতেএমেরাল্ড ডাভ ও বারড কুকু-ডাভের মতো বননির্ভর প্রজাতি কেবল সিলেটের লাওয়াছড়াসাতছড়িরেমাকালেঙ্গাপার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইথানচিরুমাসাজেকের মতো অঞ্চল এবং কিছু উপকূলীয় বনের ভিতরে টিকে আছে। ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ শীতে অল্প সংখ্যায় দেখা দেয়।

কোথায় বেশি দেখা মেলেজেলা/অঞ্চলভিত্তিক ছবি

চিত্রা ঘুঘুকলার্ড ডাভ ও লাফিং ডাভকে ঢাকার পার্কক্যাম্পাসচট্টগ্রামরাজশাহীখুলনারংপুরের নগর উদ্যানবাজারপাড়াগ্রামীণ আঙিনা ও রেলপথসড়কের ধারের গাছে সারা বছরই পাওয়া যায়। রেড-কলার্ড ডাভ বেশি দেখা যায় রাজশাহীদিনাজপুরপাবনাবগুড়াকুষ্টিয়ার খোলা কৃষিজ সমতলে। এমেরাল্ড ডাভ ও কুকু-ডাভ সীমিতভাবে মধুপুর শালবনের কিছু খণ্ডে এবং পূর্বদক্ষিণ-পূর্বের পাহাড়ি বনভূমিতে টিকে আছে। শীতকালে উত্তরপূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভের বিক্ষিপ্ত রেকর্ড পাওয়া যায়।

জীবনচক্র ও আচরণ

ঘুঘুরা সাধারণত পাতলা কঞ্চিডাল দিয়ে গাছের শাখাঝোপখুঁটি বা ভবনের কার্নিশে ১৬ মিটার উচ্চতায় বাসা বানায়। বছরে একাধিকবার প্রজনন করেপ্রতিবার ২টি ডিম পাড়ে। ডিমে ১৩১৫ দিন তা দিলে ছানা ফোটে১২২০ দিনের মধ্যে উড়তে শেখে। মাবাবা দুজনেই ক্রপ মিল্ক’ খাইয়ে ছানাকে বড় করে। খাদ্যাভ্যাসে বীজঘাসের দানাফসলের শস্য ও মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র পোকামাকড় থাকেবেশিরভাগই মাটিতে নেমে খাবার কুড়িয়ে খায়। সকালে ও বিকেলে সক্রিয় এবং দিনভর আলগা দলে ঘোরাফেরা করে।

কেন কমছেপ্রধান কারণ

১) আবাসস্থল হারানো: চিরসবুজ বনশালবনগ্রামীণ ফলের বাগান ও ঝোপঝাড় কমে যাওয়া।
২) শিকারফাঁদবেআইনি বেচাকেনা: গ্রামীণ ও পাহাড়ি অঞ্চলে ঐতিহ্যগত শিকার এখনো চাপ তৈরি করে।
৩) কৃষিজ রাসায়নিক: কীটনাশকআগাছানাশক বীজভিত্তিক খাদ্যশৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৪) নগরায়ণ ও বিড়ালকাকশালিকের মতো আক্রমণকারী প্রজাতির চাপবিশেষ করে বাসাছানায়।

প্রজাতিভিত্তিক সংক্ষিপ্ত নোট

স্পটেড ডাভ (চিত্রা ঘুঘু): সর্বত্র খুব সাধারণশহুরে পরিবেশে দারুণ মানিয়ে নিয়েছে।
ইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ: খোলা কৃষিজমিগ্রামীণ বসতিতে প্রচুরবিশ্বজুড়েই বিস্তৃত হচ্ছে।
লাফিং ডাভ (হাসি ঘুঘু): শুষ্ক ঝোপঝাড়খোলা জমিতে ছোট দলেবীজের সঙ্গে ক্ষুদ্র পোকাও খায়।
রেড-কলার্ড ডাভ: উত্তরপশ্চিমমধ্যাঞ্চলের সমতলে তুলনামূলক বেশিকৃষিজ ভূদৃশ্য পছন্দ।
ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ: শীতকালীন অতিথিসংখ্যায় কম।
এমেরাল্ড ডাভ: ঘন বনভূমির মেঝেপথে বিচরণআবাস হারানোর চাপে স্থানীয়ভাবে হ্রাসমান।
বারড কুকু-ডাভ: পাহাড়ি চিরসবুজ বনে বিরলটিকে থাকায় বন রক্ষাই মুখ্য শর্ত।

আইনগত অবস্থা ও সংরক্ষণ

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন২০১২ অনুযায়ী ঘুঘু শিকারফাঁদ পাতা ও বেচাকেনা দণ্ডনীয় অপরাধ। বৈশ্বিকভাবে অধিকাংশ ঘুঘু লিস্ট কনসার্ন’ হলেও বাংলাদেশে বননির্ভর প্রজাতি স্থানীয়ভাবে ঝুঁকিতে। তাই পাহাড়ি ও চিরসবুজ বনশালবন এবং গ্রামীণ ঝোপঝাড়বাগান রক্ষা জরুরি।

করণীয়কীভাবে ঘুঘুদের পাশে দাঁড়াব

১) অবশিষ্ট চিরসবুজ বন ও শালবনে কঠোর সুরক্ষাডুমুরহিজলকরচসহ বীজফলদ গাছ রোপণ।
২) শিকারফাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় নজরদারি ও বিকল্প জীবিকায় সহায়তা।
৩) শহরগ্রামে সবুজ করিডরপার্কস্কুলে নেস্ট-বক্স/সুরক্ষিত বৃক্ষরেখা।
৪) কৃষিজমিতে কীটনাশকের বিচক্ষণ ব্যবহার ও প্রাকৃতিক নিবাস রেখে চাষাবাদ।
৫) নাগরিক বিজ্ঞানভিত্তিক (eBird ইত্যাদি) নিয়মিত গণনা ও দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিংপ্রয়োজন হলে আঞ্চলিক জরিপ।

ডেটা-সীমাবদ্ধতা

দেশব্যাপী ঘুঘুদের কোনো এককসাম্প্রতিক জাতীয় শুমারি নেই। মাঠপর্যায়ের রেকর্ডগবেষণা নিবন্ধ ও নাগরিক বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করেই বর্তমান অবস্থা আঁকা হয়তবে তা যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয় কোন প্রজাতি স্থিতিশীলকারা হ্রাসমান এবং কোন এলাকায় সুরক্ষা জরুরি।

বাংলাদেশে অন্তত সাতটি ঘুঘু প্রজাতি পাওয়া যায়। চিত্রা ঘুঘুইউরেশিয়ান কলার্ড ডাভ ও লাফিং ডাভ দেশের শহরগ্রামে এখনো শক্ত অবস্থানে আছেরেড-কলার্ড ডাভও বহু এলাকায় নিয়মিত। কিন্তু এমেরাল্ড ডাভ ও বারড কুকু-ডাভের মতো বননির্ভর ঘুঘু স্থানীয়ভাবে কমেছে এবং সীমিত আবাসে টিকে আছেশীতে ওরিয়েন্টাল টার্টল-ডাভ কম সংখ্যায় আসে। আবাসস্থল রক্ষাশিকার নিয়ন্ত্রণ ও সবুজ করিডর বাড়ানো গেলে চৈত্রের দুপুরের সেই বিষণ্ন কিন্তু পরিচিত ঘুঘুর ডাক বাংলাদেশের আকাশেবাগানে আরও বহুদিন জেগে থাকবে।