০৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
‘সুইম শেডি’ নাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে এমিনেম দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের উপকূলীয় শহর ওওইতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল শতাধিক ঘর বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুতে এগোচ্ছে জাপান গ্রাহকদের ভোগান্তি কমছে না, এবার রবির বিরুদ্ধে অভিযোগ — জিপি ও বাংলালিংকের আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের স্পষ্ট বার্তা: যেখানেই হোক, সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালানোর পূর্ণ অধিকার আছে ইভি আর স্মার্ট গ্যাজেটের জোরে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা দেখাল শাওমি ভারতের রেড ফোর্ট হামলার উদ্ধার হওয়া ভিডিও: আত্মঘাতী হামলার সাফাই দিচ্ছিলেন উমর উন-নবী ইন্দোনেশিয়ার শিশুদের ভিডিও গেমে জঙ্গি প্রভাব: পুলিশ গাজীপুরে কয়েল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃ আশে পাশের মানুষ সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন

বাংলাদেশে সৌদি খেজুর চাষ কীভাবে করা যেতে পারে

খেজুর সাধারণত আরব দেশগুলোর অন্যতম প্রধান ফল। মরুভূমি ও শুষ্ক আবহাওয়ায় এই ফল স্বাভাবিকভাবে জন্মায়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—বাংলাদেশেও বর্তমানে আরবি খেজুর চাষ শুরু হয়েছে। সঠিক প্রযুক্তি, আবহাওয়ার উপযোগিতা এবং কৃষি গবেষণার সহায়তায় অনেক কৃষক এখন খেজুর গাছ রোপণ ও ফল উৎপাদনে সফল হচ্ছেন।

কেন বাংলাদেশে খেজুর চাষ সম্ভব

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (যেমন সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বরিশাল) ও উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা (যেমন দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও) তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত ও খরাপ্রবণ। এছাড়া বেলে দোআঁশ মাটি ও পর্যাপ্ত রোদ খেজুর গাছের জন্য উপযুক্ত। যদিও মরুভূমির মতো একেবারে শুষ্ক আবহাওয়া এখানে নেই, তবুও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও সেচ ব্যবস্থা খেজুর উৎপাদনকে সম্ভব করেছে।

সৌদির খেজুর চাষ হচ্ছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে, কৃষকের বাজিমাত

চাষাবাদের পদ্ধতি

১. চারা নির্বাচন – উন্নত মানের আরবি খেজুরের চারা (যেমন আজওয়া, মেদজুল, খলাস, দেগলেট নুর ইত্যাদি) আমদানি করে অথবা স্থানীয়ভাবে টিস্যু কালচার প্রযুক্তিতে তৈরি করা যায়।
২. মাটি ও জমি প্রস্তুতি – উঁচু জমি ও পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত এলাকায় খেজুর ভালো জন্মে। গর্ত তৈরি করে জৈবসার, বালি ও দোআঁশ মাটি মিশিয়ে চারাগুলো বসানো হয়।
৩. সেচ ও পরিচর্যা – গ্রীষ্মকালে নিয়মিত সেচ দিতে হয়। তবে জমিতে যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৪. পরাগায়ন প্রক্রিয়া – খেজুর গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা থাকে। তাই কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হয়, যা ফলন বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
৫. রোগবালাই দমন – কীটনাশক ও জৈব কীটনাশক প্রয়োগ, গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত আগাছা দমন করা দরকার।
৬. ফসল সংগ্রহ – সাধারণত ৪-৫ বছর পর গাছে ফল আসে এবং ৭-৮ বছর পর বাণিজ্যিকভাবে ফলন শুরু হয়।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

বাংলাদেশে খেজুর চাষ অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক। কারণ:

সৌদির খেজুর চাষ হচ্ছে বাগেরহাটে | জাতীয় | বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

  • • দেশে খেজুরের ব্যাপক চাহিদা আছে,বিশেষ করে রমজান মাসে।
  • • আমদানি নির্ভরতা কমবে,ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
  • • একবার গাছ লাগালে প্রায় ৩০-৩৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
  • • গ্রামের বেকার যুবকরা খেজুর চাষ করে স্বনির্ভর হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ

  • • চারার উচ্চমূল্য ও সীমিত প্রাপ্যতা।
  • • পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব।
  • • অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও বর্ষাকালীন বন্যা ফলনকে ব্যাহত করতে পারে।
  • • বাজারজাতকরণে সঠিক অবকাঠামোর অভাব।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নেবে ১৯৮ জন

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (BARI) গবেষকরা বলছেন, দেশে যদি পরিকল্পিতভাবে খেজুর বাগান তৈরি করা যায় তবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে আরবি খেজুর উৎপাদন সম্ভব। তবে এজন্য দরকার—সরকারি সহায়তা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নত জাতের চারার সহজলভ্যতা।

গ্রামীণ কৃষকের অভিজ্ঞতা

সাতক্ষীরার কৃষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে প্রথম আরবি খেজুরের কয়েকটি চারা লাগান। শুরুতে গ্রামের অনেকে বিষয়টিকে অবাস্তব মনে করলেও এখন তার বাগানে শতাধিক গাছ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমদিকে খরচ বেশি হলেও এখন প্রতি মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। শফিকুল বলেন, “আমরা আগে ভাবতাম খেজুর শুধু মরুভূমিতেই জন্মায়, কিন্তু এখন প্রমাণ হয়েছে—বাংলাদেশের মাটিতেও খেজুরের সমান সম্ভাবনা আছে।” তার সফলতা দেখে এলাকার আরও অনেকে খেজুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশে আরবি খেজুর চাষ আর কেবল স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, কৃষকের আগ্রহ ও সরকারি সহায়তা থাকলে বাংলাদেশও ভবিষ্যতে আরব দেশের মতো খেজুর উৎপাদনে পরিচিত হতে পারে। এই চাষ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াবে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘সুইম শেডি’ নাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে এমিনেম

বাংলাদেশে সৌদি খেজুর চাষ কীভাবে করা যেতে পারে

০৩:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

খেজুর সাধারণত আরব দেশগুলোর অন্যতম প্রধান ফল। মরুভূমি ও শুষ্ক আবহাওয়ায় এই ফল স্বাভাবিকভাবে জন্মায়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—বাংলাদেশেও বর্তমানে আরবি খেজুর চাষ শুরু হয়েছে। সঠিক প্রযুক্তি, আবহাওয়ার উপযোগিতা এবং কৃষি গবেষণার সহায়তায় অনেক কৃষক এখন খেজুর গাছ রোপণ ও ফল উৎপাদনে সফল হচ্ছেন।

কেন বাংলাদেশে খেজুর চাষ সম্ভব

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (যেমন সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বরিশাল) ও উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা (যেমন দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও) তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত ও খরাপ্রবণ। এছাড়া বেলে দোআঁশ মাটি ও পর্যাপ্ত রোদ খেজুর গাছের জন্য উপযুক্ত। যদিও মরুভূমির মতো একেবারে শুষ্ক আবহাওয়া এখানে নেই, তবুও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও সেচ ব্যবস্থা খেজুর উৎপাদনকে সম্ভব করেছে।

সৌদির খেজুর চাষ হচ্ছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে, কৃষকের বাজিমাত

চাষাবাদের পদ্ধতি

১. চারা নির্বাচন – উন্নত মানের আরবি খেজুরের চারা (যেমন আজওয়া, মেদজুল, খলাস, দেগলেট নুর ইত্যাদি) আমদানি করে অথবা স্থানীয়ভাবে টিস্যু কালচার প্রযুক্তিতে তৈরি করা যায়।
২. মাটি ও জমি প্রস্তুতি – উঁচু জমি ও পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত এলাকায় খেজুর ভালো জন্মে। গর্ত তৈরি করে জৈবসার, বালি ও দোআঁশ মাটি মিশিয়ে চারাগুলো বসানো হয়।
৩. সেচ ও পরিচর্যা – গ্রীষ্মকালে নিয়মিত সেচ দিতে হয়। তবে জমিতে যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৪. পরাগায়ন প্রক্রিয়া – খেজুর গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা থাকে। তাই কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হয়, যা ফলন বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
৫. রোগবালাই দমন – কীটনাশক ও জৈব কীটনাশক প্রয়োগ, গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত আগাছা দমন করা দরকার।
৬. ফসল সংগ্রহ – সাধারণত ৪-৫ বছর পর গাছে ফল আসে এবং ৭-৮ বছর পর বাণিজ্যিকভাবে ফলন শুরু হয়।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

বাংলাদেশে খেজুর চাষ অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক। কারণ:

সৌদির খেজুর চাষ হচ্ছে বাগেরহাটে | জাতীয় | বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

  • • দেশে খেজুরের ব্যাপক চাহিদা আছে,বিশেষ করে রমজান মাসে।
  • • আমদানি নির্ভরতা কমবে,ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
  • • একবার গাছ লাগালে প্রায় ৩০-৩৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
  • • গ্রামের বেকার যুবকরা খেজুর চাষ করে স্বনির্ভর হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ

  • • চারার উচ্চমূল্য ও সীমিত প্রাপ্যতা।
  • • পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব।
  • • অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও বর্ষাকালীন বন্যা ফলনকে ব্যাহত করতে পারে।
  • • বাজারজাতকরণে সঠিক অবকাঠামোর অভাব।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নেবে ১৯৮ জন

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (BARI) গবেষকরা বলছেন, দেশে যদি পরিকল্পিতভাবে খেজুর বাগান তৈরি করা যায় তবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে আরবি খেজুর উৎপাদন সম্ভব। তবে এজন্য দরকার—সরকারি সহায়তা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নত জাতের চারার সহজলভ্যতা।

গ্রামীণ কৃষকের অভিজ্ঞতা

সাতক্ষীরার কৃষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে প্রথম আরবি খেজুরের কয়েকটি চারা লাগান। শুরুতে গ্রামের অনেকে বিষয়টিকে অবাস্তব মনে করলেও এখন তার বাগানে শতাধিক গাছ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমদিকে খরচ বেশি হলেও এখন প্রতি মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। শফিকুল বলেন, “আমরা আগে ভাবতাম খেজুর শুধু মরুভূমিতেই জন্মায়, কিন্তু এখন প্রমাণ হয়েছে—বাংলাদেশের মাটিতেও খেজুরের সমান সম্ভাবনা আছে।” তার সফলতা দেখে এলাকার আরও অনেকে খেজুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশে আরবি খেজুর চাষ আর কেবল স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, কৃষকের আগ্রহ ও সরকারি সহায়তা থাকলে বাংলাদেশও ভবিষ্যতে আরব দেশের মতো খেজুর উৎপাদনে পরিচিত হতে পারে। এই চাষ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াবে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।