শঙলা’রা কমোডর পেরির মাধ্যমে মার্কিন সরকারের সঙ্গে “পক্ষপাতদুষ্ট অন্যায় চুক্তি করতে বাধ্য হয়।
শুরুর কথা
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়, চীন-বার্মা-ইন্ডিয়া (ব্রিটিশ ভারত) ওরফে সিবিআই থিয়েটার গভীরভাবে মহাযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সিবিআই-য়ের অপরিহার্য্য অংশ হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা ও তেজগাঁও বিমান-ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বহরের ডমিন্যান্ট উপস্থিতি ছিল। এই গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায়ে কয়েকজন মার্কিন বিমানক্রুর, ঢাকার সেনা জীবনের অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এই এয়ারক্রুদের অভিজ্ঞতার কাহিনি উপলব্ধি করতে বা অনুধাবনে পাঠকের সুবিধে হতে পারে বিবেচনা করে খু-উ-ব সংক্ষেপে জাপানিদের ও চীনাদের ইতিহাসের সারকথা বলার জন্য এই ‘শুরুর কথা’: উভয় নৃত্ত্বিক গোষ্ঠির ক্ষেত্রেই উনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়কে বেছে নেয়া হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো যে দূর-প্রাচ্যে বা সঠিক অর্থে নিজের প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে জাপানের যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার, এমনকি জার্মানি ও ইতালির সঙ্গে মৈত্রিজোট থাকলেও, স্বয়ং একা এশিয়ার সুবিশাল রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে নামে, কোনো প্রেরণা, কোনো মোটিভ ছোট্ট দ্বীপদেশ জাপানকে যুদ্ধ নামক দুঃসাহসি অ্যাডভেঞ্চারে প্ররোচিত করেছিল? এই “শুরুর কথা”টি হয়তো পাঠককে, অতি সংক্ষেপে, জাপানি প্রেরণা, মোটিভের প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করবে।
১৬০০ সাল থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত জাপান ছিল “তকুগাওয়া শগুনেইট” (Tokugawa shogunate) নামে পরিচিত ফিউডাল বা সামন্ততান্ত্রিক সামরিক শাসনের অধীনে। দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য “শগুন”-রা পশ্চিমের সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ নিষিদ্ধ করে দেয়; প্রায় আড়াইশ’ বছর শগুন-রা তাদের “পৃথকীকরণ বা আইসোলেইশন নীতি/পলিসি” (বা “সাকোকু”) বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ, জাপানে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নগরায়ণের বিকাশ ঘটে, বণিক শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে, শহুরে জীবন স্টাইল ও সংস্কৃতির (উকিয়ো সংস্কৃতি) জন্ম হয়। অবশ্য একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে শগুন’রা ওলন্দাজদের (ডাচ) সীমিত পরিমাণে নাগাসাকি বন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি দেয়।
কিন্তু শগুনদের সামরিক সামন্ততন্ত্রে ঝড় ওঠে যখন ১৮৫৩ সালে মার্কিন নৌ কমোডর ম্যাথিউ গলব্রাইথ পেরি চারটি নৌজাহাজ নিয়ে জোরজবরদস্তি টোকিও বে’তে ঢুকে পড়েন; পেরি’র হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩তম প্রেসিডেন্ট মিলার্ড ফিলমোরের (Millard Fillmore) সই করা সরকারি সনদ। পেরি’র মিশন ছিল। জাপানকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যসব শক্তিশালী পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করতে বাধ্য করা এবং বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন, অর্থাৎ জাপানের বারগুলোকে বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দিতে বাধ্য করা।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের তিমি শিকারিদের জাপানি জলরাশিভুক্ত তিমি মাছ শিকার করতে দেয়া। সামন্তবাদি শরনদের ক্ষমতাচ্যুত করে জাপানে পুনরায় রাজতন্ত্র ফিরিছে আনা। অর্থাৎ শমনদের কাছে পেরি’য় বহুমুখি মিশন ছিল ‘দিতেই হবে’। শঙলা’রা কমোডর পেরির মাধ্যমে মার্কিন সরকারের সঙ্গে “পক্ষপাতদুষ্ট অন্যায় চুক্তি করতে বাধ্য হয়। ফলস্বরূপ, শেষ পর্যন্ত পশ্চিমের সবকয়টি ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গেও জাপান ‘পক্ষপাতদুষ্ট অন্যায় চুক্তি সই করে। ১৮৫৩ থেকে ১৮৬৭ সালের মধ্যে “সাকোকু”-র (Sakoku) অবলুপ্তি ঘটে।
(চলবে)
নাঈম হক 



















