০৭:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয় জেলগেট থেকে ফের গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগ নেতা বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় রাষ্ট্রপতির দেশে ও বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বড় উল্লম্ফন: বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে ক্ষমতায় এলে মহানবী (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবো: তারেক রহমান বিশ্বজুড়ে স্ট্রিমিং চাহিদায় কোরিয়ান নাটকের রপ্তানি ঊর্ধ্বমুখী শহরে বাড়ছে শিয়ালের উপস্থিতি, নগর পরিবেশে বন্যপ্রাণীর অভিযোজন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় উপকূলীয় শহরের নগর পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন এশিয়ায় উন্নত চিপ উৎপাদন বাড়ায় বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে পরিবর্তন গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার

জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষ বৈঠক: ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি

ভবিষ্যতকেন্দ্রিক এজেন্ডা
টোকিওতে আয়োজিত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার বামপন্থী রাজনীতিকরা জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে উপনিবেশকালীন ইতিহাসকে অগ্রাধিকার দিলেও, প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং এবার ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক শেষে দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেন। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও হাইড্রোজেন খাতে সহযোগিতার পাশাপাশি তরুণদের জন্য দুই দেশের মধ্যে দুটি ওয়ার্কিং হলিডে প্রোগ্রাম চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে সম্পর্ককে “ভবিষ্যতকেন্দ্রিক” বলা হলেও উপনিবেশকালীন ইতিহাস বা পুরনো বিরোধের বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না। কেবলমাত্র ১৯৯৮ সালের যৌথ ঘোষণার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়, যেখানে জাপান কোরিয়ানদের প্রতি উপনিবেশ শাসনের সময়কার ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল।

ইতিহাস ও দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট
১৯১০ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কোরিয়া জাপানের দখলে ছিল। ১৯৬৫ সালে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং জাপান ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ প্রদান করে। তবে কোরিয়ার প্রগতিশীল মহল মনে করে, সেই সমঝোতা উপনিবেশের শোষণ ও অন্যায়ের যথাযথ প্রতিকার আনেনি—বিশেষ করে জোরপূর্বক শ্রম ও তথাকথিত “কমফোর্ট উইমেন” ইস্যুতে।

অন্যদিকে, ব্যবসাবান্ধব রক্ষণশীল রাজনীতিকরা ইতিহাসের বোঝা না টেনে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।

২০১৯ সালে বিরোধের কারণে দুই দেশ একে অপরকে বাণিজ্যিক সুবিধাভোগী তালিকা থেকে বাদ দেয়। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাপানি পণ্য বর্জন ও পর্যটন বন্ধের আন্দোলন চলে। এতে কোরিয়ার ১ বিলিয়ন ডলার এবং জাপানের প্রায় ৩৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়।

লি জে মিউংয়ের অবস্থান পরিবর্তন
অতীতে প্রেসিডেন্ট লি নিজেও এই আন্দোলনের অংশ ছিলেন। এমনকি ২০২৩ সালে তিনি সমালোচনা করেছিলেন, কেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল টোকিও বৈঠকে ঐতিহাসিক বিষয়গুলো উত্থাপন করেননি। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট পদে এসে লি নিজেই সেই সমালোচনার মুখোমুখি।

‘কমফোর্ট উইমেন’ বিষয়ক সংগঠনের নেত্রী লি না-ইয়ং প্রেসিডেন্টের অবস্থান পরিবর্তনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে লি ছিলেন এই ইস্যুর অন্যতম সক্রিয় সমর্থক এবং স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে অর্থায়ন করেছিলেন।

লি সম্প্রতি জাপানি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা উচিত নয়।” এতে বোঝা যায়, তিনি ২০১৫ সালের ‘কমফোর্ট উইমেন’ সংক্রান্ত চুক্তিকে মান্য করতে আগ্রহী। যদিও প্রগতিশীল মহল এই চুক্তিকে ভুক্তভোগীদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় বলে মনে করে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতার অগ্রাধিকার
প্রেসিডেন্ট লি মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা কোরিয়ার জন্য বেশি সুফল বয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের চাপে রপ্তানিনির্ভর দুই অর্থনীতি ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

এদিকে জরিপে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মধ্যে জাপান নিয়ে মনোভাবের পরিবর্তন ঘটছে। আসান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের সাম্প্রতিক জরিপে জাপানকে ১০ এর মধ্যে ৪.৫২ নম্বর দেওয়া হয়েছে—এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

কূটনৈতিক উষ্ণতার নতুন দিক
টোকিও সফর শেষে প্রেসিডেন্ট লি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন। টোকিওতে দুই নেতা নিজেদের শহরের বিশেষ পানীয় ভাগাভাগি করে সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়েছেন—ইশিবার জন্মভূমি তোত্তরির বিয়ার ও লির আন্ডং শহরের সোজু।

যৌথ বিবৃতির শেষ বাক্যে বলা হয়, “এখন দুই দেশের জনগণ অতীত নয়, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষ বৈঠক: ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি

১২:০৩:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

ভবিষ্যতকেন্দ্রিক এজেন্ডা
টোকিওতে আয়োজিত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার বামপন্থী রাজনীতিকরা জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে উপনিবেশকালীন ইতিহাসকে অগ্রাধিকার দিলেও, প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং এবার ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক শেষে দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেন। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও হাইড্রোজেন খাতে সহযোগিতার পাশাপাশি তরুণদের জন্য দুই দেশের মধ্যে দুটি ওয়ার্কিং হলিডে প্রোগ্রাম চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে সম্পর্ককে “ভবিষ্যতকেন্দ্রিক” বলা হলেও উপনিবেশকালীন ইতিহাস বা পুরনো বিরোধের বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না। কেবলমাত্র ১৯৯৮ সালের যৌথ ঘোষণার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়, যেখানে জাপান কোরিয়ানদের প্রতি উপনিবেশ শাসনের সময়কার ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল।

ইতিহাস ও দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট
১৯১০ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কোরিয়া জাপানের দখলে ছিল। ১৯৬৫ সালে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং জাপান ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ প্রদান করে। তবে কোরিয়ার প্রগতিশীল মহল মনে করে, সেই সমঝোতা উপনিবেশের শোষণ ও অন্যায়ের যথাযথ প্রতিকার আনেনি—বিশেষ করে জোরপূর্বক শ্রম ও তথাকথিত “কমফোর্ট উইমেন” ইস্যুতে।

অন্যদিকে, ব্যবসাবান্ধব রক্ষণশীল রাজনীতিকরা ইতিহাসের বোঝা না টেনে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।

২০১৯ সালে বিরোধের কারণে দুই দেশ একে অপরকে বাণিজ্যিক সুবিধাভোগী তালিকা থেকে বাদ দেয়। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাপানি পণ্য বর্জন ও পর্যটন বন্ধের আন্দোলন চলে। এতে কোরিয়ার ১ বিলিয়ন ডলার এবং জাপানের প্রায় ৩৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়।

লি জে মিউংয়ের অবস্থান পরিবর্তন
অতীতে প্রেসিডেন্ট লি নিজেও এই আন্দোলনের অংশ ছিলেন। এমনকি ২০২৩ সালে তিনি সমালোচনা করেছিলেন, কেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল টোকিও বৈঠকে ঐতিহাসিক বিষয়গুলো উত্থাপন করেননি। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট পদে এসে লি নিজেই সেই সমালোচনার মুখোমুখি।

‘কমফোর্ট উইমেন’ বিষয়ক সংগঠনের নেত্রী লি না-ইয়ং প্রেসিডেন্টের অবস্থান পরিবর্তনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে লি ছিলেন এই ইস্যুর অন্যতম সক্রিয় সমর্থক এবং স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে অর্থায়ন করেছিলেন।

লি সম্প্রতি জাপানি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা উচিত নয়।” এতে বোঝা যায়, তিনি ২০১৫ সালের ‘কমফোর্ট উইমেন’ সংক্রান্ত চুক্তিকে মান্য করতে আগ্রহী। যদিও প্রগতিশীল মহল এই চুক্তিকে ভুক্তভোগীদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় বলে মনে করে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতার অগ্রাধিকার
প্রেসিডেন্ট লি মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা কোরিয়ার জন্য বেশি সুফল বয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের চাপে রপ্তানিনির্ভর দুই অর্থনীতি ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

এদিকে জরিপে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মধ্যে জাপান নিয়ে মনোভাবের পরিবর্তন ঘটছে। আসান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের সাম্প্রতিক জরিপে জাপানকে ১০ এর মধ্যে ৪.৫২ নম্বর দেওয়া হয়েছে—এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

কূটনৈতিক উষ্ণতার নতুন দিক
টোকিও সফর শেষে প্রেসিডেন্ট লি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন। টোকিওতে দুই নেতা নিজেদের শহরের বিশেষ পানীয় ভাগাভাগি করে সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়েছেন—ইশিবার জন্মভূমি তোত্তরির বিয়ার ও লির আন্ডং শহরের সোজু।

যৌথ বিবৃতির শেষ বাক্যে বলা হয়, “এখন দুই দেশের জনগণ অতীত নয়, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।”