১০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
২০২৬ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার নিষিদ্ধ তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: সালাহউদ্দিন চীনের হাতে বৈশ্বিক ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের নিয়ন্ত্রণ সিঙ্গাপুরের সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে নিজের সম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছেন এডমন্ড উই মৃত্যুহীন প্রসবের লক্ষ্য: ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাফল্য প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩২) আমেরিকায় খাদ্যপরামর্শে ফেরত আসছে পুরোনো ‘ফুড পিরামিড’ বিতর্ক সিঙ্গাপুর বায়েনাল ২০২৫: শহরটাই হয়ে ওঠে খোলা একটি আর্ট গ্যালারি হিজাব পরা রেসলিং তারকা নূর ‘ফিনিক্স’ ডায়ানার আগুন থেকে উঠে দাঁড়ানোর গল্প পাকিস্তান আইডলে টপ–১৬–এ রোমাইসা তারিক: “এই শো আমার জীবন পুরো বদলে দিয়েছে”

জাপান এখনো আলাস্কা এলএনজি প্রকল্পে অনাগ্রহী

জুলাই মাসে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা শেষ করার পর দুই দেশের ঘোষণায় একটি বড় পার্থক্য দেখা যায়: আলাস্কা এলএনজি প্রকল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের জোর চাপ, জাপানের নীরবতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে দুই দেশ যৌথভাবে প্রকল্পটি এগিয়ে নেবে, যার সম্ভাব্য ব্যয় কয়েক দশক বিলিয়ন ডলার। কিন্তু জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা তাঁর ঘোষণায় আলাস্কার নামও উল্লেখ করেননি। তিনি শুধু বলেন, দুই দেশ শক্তি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এক জাপানি কর্মকর্তা জানান, তাঁরা কোনো যৌথ উদ্যোগ আলোচনার খবরই জানেন না।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম প্রধান প্রকল্প এই ৪৪ বিলিয়ন ডলারের আলাস্কা এলএনজি। তিনি দেশীয় জ্বালানি সম্পদ দ্রুত বিকাশে জোর দিচ্ছেন এবং জাপানের মতো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক দেশকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন। কিন্তু শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার এক মাস পরও কোনো অগ্রগতি নেই। জাপানি শিল্প এখনো আমদানি বা বিনিয়োগের ব্যাপারে অনাগ্রহী।

দীর্ঘ ইতিহাস, নতুন জটিলতা

জাপান প্রথম আলাস্কা থেকে এলএনজি আমদানি করে ১৯৬৯ সালে এবং এটি চলে ২০১৫ পর্যন্ত। তবে তা ছিল ভিন্ন প্রকল্প। ট্রাম্প যে প্রকল্পকে চাপ দিচ্ছেন, তাতে উত্তর আলাস্কায় গ্যাস উৎপাদন করে ১,৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইনে অ্যাঙ্করেজ পর্যন্ত নিয়ে আসা হবে এবং সেখানে তরলীকরণ করে রপ্তানি করা হবে।

১৯৯০-এর দশকে মারুবেনি-সহ জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করেছিল। এলএনজি শিল্পের অনেকেই মনে করেন, প্রকল্পটি জাপানের জন্য লাভজনক হতে পারে, কারণ টোকিওতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র আট দিন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানি কেন্দ্রগুলো গালফ অব মেক্সিকোতে, যেখানে জাহাজকে পানামা খাল বা আফ্রিকা ঘুরে যেতে হয়।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা

জাপানি শিল্পসূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি রাজনৈতিক চাপ বাড়ায়, তাহলে অংশগ্রহণ পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি, ব্যয় ও অর্থনৈতিক যুক্তি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এটি গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রমিক সংকটের কারণে খরচ ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ট্রাম্পের আরোপিত ইস্পাত আমদানির ৫০ শতাংশ শুল্ক, যা আলাস্কার কঠিন পরিবেশে পাইপলাইন নির্মাণকে আরও ব্যয়বহুল করবে।

বিশেষজ্ঞ মত

রাপিডান এনার্জি গ্রুপের বিশ্লেষক অ্যালেক্স মুনটন বলেন, গত দশকে এলএনজি প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে যেখানে কার্যক্রম বেশি, সেখানেও ব্যয় বেড়েছে। আলাস্কার মতো দূরবর্তী অঞ্চলে তা আরও বেশি হবে।

রিস্টাড এনার্জির সিনিয়র বিশ্লেষক মাসানোরি ওডাকা মনে করেন, প্রকল্পটি এত বড় যে এটি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয়, বরং সরকার-সরকার চুক্তি প্রয়োজন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এত বিশাল বিনিয়োগ সম্ভব হবে কি না।

গ্লেনফার্ন আলাস্কা এলএনজির প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম প্রেস্টিজ বলেন, খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে এবং এ বছরের শেষ নাগাদ পাইপলাইনের জন্য আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে অ্যাঙ্করেজে গ্যাস সরবরাহ শুরু করার লক্ষ্য রয়েছে।

জাপানি কোম্পানির সতর্কতা

মারুবেনির সিইও মাসায়ুকি ওমোতো জানান, ৯০-এর দশকের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তাদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব আসেনি। তিনি বলেন, এলএনজি ব্যবসায় খরচ প্রতিযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গালফ অব মেক্সিকোর প্রকল্পগুলো এখন বেশি লাভজনক বলে মনে হচ্ছে।

সম্ভাব্য সুফল বনাম বাস্তবতা

ট্রাম্প আলাস্কাকে জ্বালানি কৌশলের কেন্দ্রে রেখেছেন এবং প্রকল্পের অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। কনসালট্যান্সি উড ম্যাকেঞ্জির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রকল্পটি আলাস্কার গ্যাসের দাম ৭৫ শতাংশ কমাতে পারে এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার সুফল আনতে পারে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ এলেন ওয়াল্ড বলেন, এশিয়ার বাজারের জন্য আলাস্কার এলএনজি লাভজনক হতে পারে। এটি মূলত এশিয়ায় যাবে, ফলে দামের অস্থিরতাও কম হবে।

তবে বিশ্লেষকদের সাধারণ মত, প্রকল্পটি শুরু করাই কঠিন হবে। জেসন ফিয়ার, পোটেন অ্যান্ড পার্টনার্সের ব্যবসা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বলেন, এটি বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যয়বহুল। হয়তো ১০-১৫ বছর পর পরিস্থিতি বদলাতে পারে, যখন সস্তা এলএনজির যোগান বিশ্বে কমে আসবে।

তিনি বলেন, এখন গালফ কোস্ট ও কাতারের প্রকল্পগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সময়ে এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া কার্যত অসম্ভব।

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৬ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার নিষিদ্ধ

জাপান এখনো আলাস্কা এলএনজি প্রকল্পে অনাগ্রহী

০৮:০৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই মাসে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা শেষ করার পর দুই দেশের ঘোষণায় একটি বড় পার্থক্য দেখা যায়: আলাস্কা এলএনজি প্রকল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের জোর চাপ, জাপানের নীরবতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে দুই দেশ যৌথভাবে প্রকল্পটি এগিয়ে নেবে, যার সম্ভাব্য ব্যয় কয়েক দশক বিলিয়ন ডলার। কিন্তু জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা তাঁর ঘোষণায় আলাস্কার নামও উল্লেখ করেননি। তিনি শুধু বলেন, দুই দেশ শক্তি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এক জাপানি কর্মকর্তা জানান, তাঁরা কোনো যৌথ উদ্যোগ আলোচনার খবরই জানেন না।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম প্রধান প্রকল্প এই ৪৪ বিলিয়ন ডলারের আলাস্কা এলএনজি। তিনি দেশীয় জ্বালানি সম্পদ দ্রুত বিকাশে জোর দিচ্ছেন এবং জাপানের মতো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক দেশকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন। কিন্তু শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার এক মাস পরও কোনো অগ্রগতি নেই। জাপানি শিল্প এখনো আমদানি বা বিনিয়োগের ব্যাপারে অনাগ্রহী।

দীর্ঘ ইতিহাস, নতুন জটিলতা

জাপান প্রথম আলাস্কা থেকে এলএনজি আমদানি করে ১৯৬৯ সালে এবং এটি চলে ২০১৫ পর্যন্ত। তবে তা ছিল ভিন্ন প্রকল্প। ট্রাম্প যে প্রকল্পকে চাপ দিচ্ছেন, তাতে উত্তর আলাস্কায় গ্যাস উৎপাদন করে ১,৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইনে অ্যাঙ্করেজ পর্যন্ত নিয়ে আসা হবে এবং সেখানে তরলীকরণ করে রপ্তানি করা হবে।

১৯৯০-এর দশকে মারুবেনি-সহ জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করেছিল। এলএনজি শিল্পের অনেকেই মনে করেন, প্রকল্পটি জাপানের জন্য লাভজনক হতে পারে, কারণ টোকিওতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র আট দিন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানি কেন্দ্রগুলো গালফ অব মেক্সিকোতে, যেখানে জাহাজকে পানামা খাল বা আফ্রিকা ঘুরে যেতে হয়।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা

জাপানি শিল্পসূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি রাজনৈতিক চাপ বাড়ায়, তাহলে অংশগ্রহণ পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি, ব্যয় ও অর্থনৈতিক যুক্তি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এটি গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রমিক সংকটের কারণে খরচ ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ট্রাম্পের আরোপিত ইস্পাত আমদানির ৫০ শতাংশ শুল্ক, যা আলাস্কার কঠিন পরিবেশে পাইপলাইন নির্মাণকে আরও ব্যয়বহুল করবে।

বিশেষজ্ঞ মত

রাপিডান এনার্জি গ্রুপের বিশ্লেষক অ্যালেক্স মুনটন বলেন, গত দশকে এলএনজি প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে যেখানে কার্যক্রম বেশি, সেখানেও ব্যয় বেড়েছে। আলাস্কার মতো দূরবর্তী অঞ্চলে তা আরও বেশি হবে।

রিস্টাড এনার্জির সিনিয়র বিশ্লেষক মাসানোরি ওডাকা মনে করেন, প্রকল্পটি এত বড় যে এটি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয়, বরং সরকার-সরকার চুক্তি প্রয়োজন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এত বিশাল বিনিয়োগ সম্ভব হবে কি না।

গ্লেনফার্ন আলাস্কা এলএনজির প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম প্রেস্টিজ বলেন, খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে এবং এ বছরের শেষ নাগাদ পাইপলাইনের জন্য আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে অ্যাঙ্করেজে গ্যাস সরবরাহ শুরু করার লক্ষ্য রয়েছে।

জাপানি কোম্পানির সতর্কতা

মারুবেনির সিইও মাসায়ুকি ওমোতো জানান, ৯০-এর দশকের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তাদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব আসেনি। তিনি বলেন, এলএনজি ব্যবসায় খরচ প্রতিযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গালফ অব মেক্সিকোর প্রকল্পগুলো এখন বেশি লাভজনক বলে মনে হচ্ছে।

সম্ভাব্য সুফল বনাম বাস্তবতা

ট্রাম্প আলাস্কাকে জ্বালানি কৌশলের কেন্দ্রে রেখেছেন এবং প্রকল্পের অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। কনসালট্যান্সি উড ম্যাকেঞ্জির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রকল্পটি আলাস্কার গ্যাসের দাম ৭৫ শতাংশ কমাতে পারে এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার সুফল আনতে পারে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ এলেন ওয়াল্ড বলেন, এশিয়ার বাজারের জন্য আলাস্কার এলএনজি লাভজনক হতে পারে। এটি মূলত এশিয়ায় যাবে, ফলে দামের অস্থিরতাও কম হবে।

তবে বিশ্লেষকদের সাধারণ মত, প্রকল্পটি শুরু করাই কঠিন হবে। জেসন ফিয়ার, পোটেন অ্যান্ড পার্টনার্সের ব্যবসা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বলেন, এটি বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যয়বহুল। হয়তো ১০-১৫ বছর পর পরিস্থিতি বদলাতে পারে, যখন সস্তা এলএনজির যোগান বিশ্বে কমে আসবে।

তিনি বলেন, এখন গালফ কোস্ট ও কাতারের প্রকল্পগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সময়ে এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া কার্যত অসম্ভব।