ঘটনার প্রাথমিক তথ্য
গ্রেটার নয়ডার ২৮ বছর বয়সী নিকি ভাটি গত সপ্তাহে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে মৃত্যুকথনে নিকি ডাক্তারদের বলেছিলেন, রান্নার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার শরীরে আগুন ধরে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি হয়তো নিজের ছোট বোনের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য সত্য গোপন করেছিলেন। কারণ নিকির বোন কঞ্চনও ওই একই পরিবারে বিবাহিত।
মৃত্যুকথন ও চিকিৎসকের নথি
হাসপাতালে মেডিকো-লিগ্যাল সার্টিফিকেটে নিকির বক্তব্য লিপিবদ্ধ হয়: “বাড়িতে রান্নার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ।” বিকেল ছয়টার দিকে স্বামীর আত্মীয় দেবেন্দ্র তাকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
তবে মৃত্যুকথন আদালতে গ্রহণযোগ্য হয় কেবল তখনই, যখন তা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করা হয়। নিকি দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যাওয়ায় পুলিশ এ সুযোগ পায়নি।

পুলিশের তদন্তে ভিন্ন চিত্র
পুলিশ তদন্তে দেখা যায়, রান্নাঘরে কোনো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। বরং বাড়ি থেকে একটি খালি থিনারের বোতল ও লাইটার উদ্ধার করা হয়, যা এখন মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। নিকির ময়নাতদন্তেও দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
কাসনা থানার ওসি ধর্মেন্দ্র শুক্লা বলেন, “তিনি হয়তো কাউকে অভিযুক্ত করতে চাননি। এজন্য শেষ মুহূর্তে কারও নাম নেননি।”
পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও বোনের সাক্ষ্য
পুলিশ জানায়, নিকি ও তার স্বামী বিপিনের সম্পর্কে কয়েকদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল। তাদের ঘরে আলাদা বিছানা এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। নিকির বোন কঞ্চন পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখেন নিকির শরীরে আগুন জ্বলছে আর বিপিন পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কঞ্চন পানি ঢালার চেষ্টা করেন, মোবাইল ফোনে ভিডিওও রেকর্ড করেন, তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার
নিকির মৃত্যু সত্ত্বেও পরিবার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে যায়নি। শেষকৃত্যের পরদিন সকালে গ্রাম্য পঞ্চায়েতে আলোচনা হয়, এরপর দুপুরে পুলিশকে জানানো হয়। প্রায় ২০ ঘণ্টা পরে মামলা দায়ের হয়।
ভারতীয় দণ্ডবিধির (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) ১০৩ ধারা (খুন), ১১৫(২) ধারা (ইচ্ছাকৃত আঘাত), এবং ৬১(২) ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)-এ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
পুলিশ বিপিনকে গ্রেপ্তার করে। ২৩ আগস্ট প্রমাণ উদ্ধারের সময় সে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে পায়ে গুলি করা হয়। পরে বিপিনের মা দয়া, বাবা সত্যবীর ও ভাই রোহিতকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
প্রথমে নিকির পরিবার ময়নাতদন্তে রাজি হয়নি। ভাই ভিকি পাইলা বলেন, “আমরা চাইনি তার দেহে আর ক্ষতি হোক।” তবে পুলিশের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তারা রাজি হন।

নারী কমিশনের হস্তক্ষেপ
বুধবার উত্তর প্রদেশ রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যা মীনাক্ষী ভরালা নিকির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং বলেন, “নিকির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভরালা প্রশ্ন তোলেন, নির্যাতনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন পরিবার নিকিকে শ্বশুরবাড়িতে রেখেছিল। উত্তরে পরিবার জানায়, সমাজের চাপে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কমিশন মনে করে, এমন সামাজিক চাপ নারীদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
আর্থিক সহায়তার ঘোষণা
কমিশন নিকির ছেলে ও কঞ্চনের দুই সন্তানের জন্য প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে, যা তারা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পাবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















