১১:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
 সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের কৃষিপণ্য শুল্ক ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে ভারতের রপ্তানি

রংপুরে পশুসম্পর্কিত রহস্যময় রোগে আতঙ্ক

রহস্যময় রোগের প্রাদুর্ভাব

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় এক অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ২০০ জনের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে পুরো এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়া ও মৃত্যুর পরপরই এ রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে শুরু করে।

কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা

কয়েক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ একে অপরকে দায়ী করছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে হাজারো মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আক্রান্তদের শরীরে প্রথমে চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বড় ঘায়ে পরিণত হয়ে গভীর ক্ষতে রূপ নেয়।

অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে মিল

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, উপসর্গগুলো অ্যানথ্রাক্সের মতো—একটি ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যা সাধারণত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহিন সুলতানা বলেন, তিনি এ ব্যাপারে অবগত নন। তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ আগে ব্যবস্থা নেওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগ মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী চিকিৎসক দল গঠন করতে পারে।

আক্রান্ত এলাকার চিত্র

মাঠপর্যায়ের খোঁজে জানা যায়, সদর, তাম্বুলপুর, চওলা, পারুল ও ইটাকুমারী ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সদর, চওলা ও তাম্বুলপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

গ্রামীণ অভিজ্ঞতা

আননতরামপুর গ্রামের সাবিনা আখতার জানান, এ মাসের শুরুতে তার গরু ও ছাগল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অসুস্থ পশুর সেবা করতে গিয়ে তার হাতেও ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা দ্রুত ক্ষতে রূপ নেয়। তিনি এখন আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে একজন।
অন্যদিকে চওলা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক জানান, অসুস্থ পশু জবাই করার পর যারা তার মাংস স্পর্শ বা রান্না করেন তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

৫০ বছর বয়সী জাহেদা বেগম বলেন, তার আঙুলে ছোট একটি চুলকানি থেকে শুরু হয়ে পরে তা পচা ক্ষতে রূপ নিয়েছে। তার আরও একটি আঙুলে একই লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আঁখি সরকার জানান, প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাতজন নতুন রোগী আসছেন। অনেক সময় একই পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও এখনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি, তবে উপসর্গগুলো অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে মিলে যায়।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিস কার্যত নীরব ভূমিকা নিয়েছে। অধিকাংশ সময় কর্মকর্তারা অনুপস্থিত থাকেন, কৃষকরা কোনো পরামর্শ বা ওষুধ পান না। ফলে গবাদি পশু চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাচ্ছে এবং সেখান থেকে সংক্রমণ মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু সাঈদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি বংশগত অসুখ হতে পারে। তার মতে, স্বাস্থ্য বিভাগ আগে এটি শনাক্ত করে জানানো উচিত ছিল। এখন তাদের জরুরি কাজ হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবে রোগের কারণ নির্ণয় করা।

মহামারীর ঝুঁকি

জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ মানুষ আক্রান্ত হলেও কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নেয়নি। যদি সত্যিই এটি অ্যানথ্রাক্স হয় এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে এটি সারা দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক রাবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

 সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা

রংপুরে পশুসম্পর্কিত রহস্যময় রোগে আতঙ্ক

০৪:৩৯:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

রহস্যময় রোগের প্রাদুর্ভাব

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় এক অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ২০০ জনের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে পুরো এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়া ও মৃত্যুর পরপরই এ রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে শুরু করে।

কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা

কয়েক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ একে অপরকে দায়ী করছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে হাজারো মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আক্রান্তদের শরীরে প্রথমে চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বড় ঘায়ে পরিণত হয়ে গভীর ক্ষতে রূপ নেয়।

অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে মিল

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, উপসর্গগুলো অ্যানথ্রাক্সের মতো—একটি ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যা সাধারণত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহিন সুলতানা বলেন, তিনি এ ব্যাপারে অবগত নন। তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ আগে ব্যবস্থা নেওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগ মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী চিকিৎসক দল গঠন করতে পারে।

আক্রান্ত এলাকার চিত্র

মাঠপর্যায়ের খোঁজে জানা যায়, সদর, তাম্বুলপুর, চওলা, পারুল ও ইটাকুমারী ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সদর, চওলা ও তাম্বুলপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

গ্রামীণ অভিজ্ঞতা

আননতরামপুর গ্রামের সাবিনা আখতার জানান, এ মাসের শুরুতে তার গরু ও ছাগল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অসুস্থ পশুর সেবা করতে গিয়ে তার হাতেও ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা দ্রুত ক্ষতে রূপ নেয়। তিনি এখন আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে একজন।
অন্যদিকে চওলা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক জানান, অসুস্থ পশু জবাই করার পর যারা তার মাংস স্পর্শ বা রান্না করেন তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

৫০ বছর বয়সী জাহেদা বেগম বলেন, তার আঙুলে ছোট একটি চুলকানি থেকে শুরু হয়ে পরে তা পচা ক্ষতে রূপ নিয়েছে। তার আরও একটি আঙুলে একই লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আঁখি সরকার জানান, প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাতজন নতুন রোগী আসছেন। অনেক সময় একই পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও এখনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি, তবে উপসর্গগুলো অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে মিলে যায়।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিস কার্যত নীরব ভূমিকা নিয়েছে। অধিকাংশ সময় কর্মকর্তারা অনুপস্থিত থাকেন, কৃষকরা কোনো পরামর্শ বা ওষুধ পান না। ফলে গবাদি পশু চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাচ্ছে এবং সেখান থেকে সংক্রমণ মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু সাঈদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি বংশগত অসুখ হতে পারে। তার মতে, স্বাস্থ্য বিভাগ আগে এটি শনাক্ত করে জানানো উচিত ছিল। এখন তাদের জরুরি কাজ হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবে রোগের কারণ নির্ণয় করা।

মহামারীর ঝুঁকি

জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ মানুষ আক্রান্ত হলেও কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নেয়নি। যদি সত্যিই এটি অ্যানথ্রাক্স হয় এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে এটি সারা দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক রাবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।