অতীতের প্রতি আকুলতা অনেক সময় ভবিষ্যতের জন্যও ইতিবাচক সংকেত হতে পারে।
প্রযুক্তি নিয়ে তরুণদের উদ্বেগ
আজকের তরুণদের সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্পর্ক নিয়ে প্রবীণদের অভিযোগ শোনা যায় প্রায়ই—যে তারা বাস্তব জীবনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারছে না, মানসিকভাবে ও সামাজিকভাবে পরিপক্ব হতে পারছে না। কিন্তু এ অভিযোগ কেবল প্রবীণদের নয়, তরুণরাও নিজেরাই এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
২০২৩ সালে হ্যারিস পোল ও আমার গবেষণা দলের যৌথ জরিপে দেখা যায়, জেনারেশন জেডের (১৯৯৭ সালের পর জন্ম নেওয়া) ৮০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন তাদের প্রজন্ম প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। ৭৫ শতাংশ উদ্বিগ্ন যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, আর ৫৮ শতাংশ মনে করেন প্রযুক্তি মানুষকে কাছে না এনে বরং দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
একটি ফলাফল আমাকে বিশেষভাবে ভাবিয়েছে—৬০ শতাংশ জেনারেশন জেড প্রাপ্তবয়স্ক বলেন, তারা এমন এক সময়ে ফিরে যেতে চান যখন মানুষ সর্বক্ষণ ডিজিটাল যন্ত্রে নিমগ্ন ছিল না।

ঐতিহাসিক নস্টালজিয়া
অবশ্য, সেটি তো মূলত তাদের জন্মের আগের সময়। নস্টালজিয়া নিয়ে আমার গবেষণা সাধারণত মানুষের নিজের জীবনের স্মৃতিকে ঘিরে। তবে মানুষ তাদের জন্মেরও আগের সময়কে নিয়ে নস্টালজিক হতে পারে। একে বলা হয় ঐতিহাসিক নস্টালজিয়া।
ভোক্তা বাজারেও এই প্রবণতার ছাপ স্পষ্ট। ভিনাইল রেকর্ড, সিডি, মুদ্রিত বই আর বোর্ড গেমের বিক্রি বেড়েছে। এটিকে কেবল প্রবীণদের পুরনো দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা বলা যায় না। বরং ডিজিটাল বিনোদনে অভ্যস্ত তরুণরাই এই পুনর্জাগরণের বড় চালক।
নস্টালজিয়ার শক্তি
নস্টালজিয়াকে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় অতীতচর্চা বলা হয়, যা মানুষকে বর্তমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু গবেষণা বলছে, নস্টালজিয়া মানুষকে বর্তমান সময়ে মানসিকভাবে শক্তি জোগায় এবং ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী করে।
বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, পুরনো প্রিয় স্মৃতি মনে করা বা পরিচিত গান শোনা মানুষকে স্বস্তি দেয়, অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি বাড়ায় এবং জীবনে অর্থবোধ তৈরি করে। অর্থাৎ, নস্টালজিয়া আসলে ভবিষ্যতমুখী এক শক্তি।

জেনারেশন জেডের অভিমুখ
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ায়, জেনারেশন জেড হয়তো তাদের নস্টালজিয়াকে জন্মের আগের প্রযুক্তিহীন যুগে কেন্দ্রীভূত করছে। আমার দল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান Discover.ai-এর সঙ্গে কাজ করে দেখেছে, জেনারেশন জেড প্রি-ডিজিটাল সংস্কৃতি, বিনোদন ও অভ্যাস নিয়ে অনলাইন আলোচনায় বিশেষ আগ্রহী।
একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, আগের প্রজন্ম অতিথিদের দেখানোর জন্য অ্যালবামে ছবি সাজাত—এ দৃশ্য দেখে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বড় অ্যালবাম আর উন্নত মানের প্রিন্টার কিনেছেন।
আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ২,০০০-এর বেশি প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে করা জরিপে পাই, ৬৮ শতাংশ জেনারেশন জেড তাদের জীবনের আগের সময় নিয়ে নস্টালজিক বোধ করে। ৭৩ শতাংশ পুরনো যুগের মিডিয়া, শৈলী বা অভ্যাসের প্রতি আকৃষ্ট এবং ৭৮ শতাংশ চান নতুন প্রযুক্তি ও পণ্যগুলোতে পুরনো নকশার ছাপ থাকুক। দুই-তৃতীয়াংশ মনে করেন, আগের যুগের অভিজ্ঞতা তাদের আধুনিক জীবনের চাপ কমাতে সাহায্য করে।

অন্য প্রজন্মের সঙ্গে তুলনা
ঐতিহাসিক নস্টালজিয়া কেবল জেনারেশন জেডের নয়। মিলেনিয়াল ও জেনারেশন এক্স-ও এ প্রবণতায় ভুগছে, তুলনায় বেবি বুমার বা “সাইলেন্ট জেনারেশন” অনেক কম। তবে জেনারেশন জেড বিশেষভাবে মুগ্ধ অ্যানালগ যুগে, যা তাদের সঙ্গে পূর্ববর্তী প্রজন্মের ব্যবধান আরও স্পষ্ট করেছে।
অনেকে ভাবেন, বর্তমান তরুণরা ইন্টারনেট-পূর্ব যুগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু গবেষণা বলছে, ঐতিহাসিক নস্টালজিয়ার মাধ্যমে তারা আসলে সেই অভিজ্ঞতার কিছুটা পুনরুদ্ধার করছে।
নতুন শিক্ষা
ভিনাইল রেকর্ড শোনা মানে পুরো অ্যালবাম একটানে শোনা—যেখানে মাঝপথে অন্য গান বা ভিডিওতে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই অভ্যাস তরুণদের মনোযোগ ধরে রাখার অনুশীলন শেখায়। আবার বোর্ড গেম রাত বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো তাদের সামাজিক আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।

ভবিষ্যতের সঙ্গে সামঞ্জস্য
এতে বোঝা যায় না যে জেনারেশন জেড আধুনিক প্রযুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে। বরং তারা নতুন উদ্ভাবন নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তবে অগ্রগতি মানেই প্রতিক্রিয়া ও সংশোধন। ঐতিহাসিক নস্টালজিয়া হয়তো তাদের শেখাচ্ছে কিভাবে প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি বাস্তব ও শারীরিক অভিজ্ঞতার গুণাবলি সংরক্ষণ করা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানের যুগে দৃষ্টি ভবিষ্যতের দিকে থাকলেও, অতীতে তাকানো দরকার—যেমনটি জেনারেশন জেড করছে—যাতে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ স্পষ্টভাবে চিনে নিতে পারি।
লেখক: ক্লে রাউটলেজ
গবেষণা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হিউম্যান ফ্লারিশিং ল্যাবের পরিচালক, আর্কব্রিজ ইনস্টিটিউট। লেখক, Past Forward: How Nostalgia Can Help You Live a More Meaningful Life।
ক্লে রাউটলেজ 


















