১১:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
 সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের কৃষিপণ্য শুল্ক ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে ভারতের রপ্তানি

পশ্চিমা ওয়ার ভেটেরান্স,বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও মব ভায়োলেন্স

জাতির আত্মপরিচয়ের সংকট

ইউরোপ ও আমেরিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রবীণ যোদ্ধারা আজও জাতীয় জীবনে এক উজ্জ্বল প্রতীক। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জাতীয় চেতনার অংশ। বিপরীতে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা, যারা ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন, আজ মব ভায়োলেন্স বা জনতার হিংস্রতায় হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এ চিত্র শুধু বেদনাদায়ক নয়, বরং জাতীয় চরিত্র ও ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর সংকেত। কেন এই বৈপরীত্য? কেন ইউরোপ–আমেরিকা যুদ্ধবীরদের সম্মানিত করে, অথচ বাংলাদেশ তার নায়কদের অবহেলা করছে?

New book to lift 'silence' on British Great War veterans' trauma - University of Birmingham

ইউরোপ ও আমেরিকায় যুদ্ধবীরদের মর্যাদা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপ ও আমেরিকায় যুদ্ধবীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। সরকারি ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, এমনকি রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে প্রতি বছর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন—সবকিছুই যুদ্ধবীরদের প্রতি জাতীয় কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।

আমেরিকার “ভেটেরান্স ডে” কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে “রিমেমব্রেন্স ডে” এখনো পালন করা হয় জাতীয় উৎসবের মতো। সেই যোদ্ধাদেরকে জাতির ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে দেখা হয়। নতুন প্রজন্ম তাদের গল্প শুনে দেশপ্রেম ও ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করে।

এই সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্র আসলে নিজের অস্তিত্বকে দৃঢ় করে। কারণ, ইতিহাস ও তার নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি জাতিকে একত্রিত রাখে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বাস্তবতা

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। কেউ প্রাণ দিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন পরিবার, কেউ আজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন শারীরিক-মানসিক ক্ষত। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে তাদের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই করুণ।

রাষ্ট্র কিছু ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা ও সংরক্ষিত কোটা দিলেও বাস্তবতা হলো—মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ ক্রমেই কমছে। রাজনৈতিক বিভাজন, ইতিহাস বিকৃতি, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়শই উপেক্ষিত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে—কোথাও মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করা হচ্ছে, কোথাও অপমানিত করা হচ্ছে, আবার কোথাও জনতার হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

থামছে না 'মব ভায়োলেন্স', নেপথ্যে সুযোগ নিচ্ছেন যেসব অসাধু চক্র

মব ভায়োলেন্স: জাতীয় অসুস্থতার লক্ষণ

মব ভায়োলেন্স বা গণ-হিংসা বাংলাদেশের সমাজে এক ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। যে কোনো অজুহাতে মানুষ ভিড় জমিয়ে কাউকে নির্যাতন করছে, এমনকি হত্যা করছে। বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থার ঘাটতি ও সামাজিক শৃঙ্খলার ভাঙন এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যখন এই মব ভায়োলেন্সের শিকার হন, তখন তা কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ নয়—বরং জাতীয় মর্যাদার ওপর আঘাত। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করা মানে জাতির স্বাধীনতার প্রতীককে হেনস্তা করা। এটি রাষ্ট্রের আত্মপরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা বনাম ইতিহাস বিস্মৃতি

ইউরোপ ও আমেরিকা যুদ্ধের ইতিহাসকে জাতীয় চেতনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছে। যুদ্ধবীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা তরুণ প্রজন্মকে শিখিয়েছে—দেশের জন্য ত্যাগ মানে কী। ফলে সেখানে জাতীয় ঐক্য ও আইনশৃঙ্খলা শক্তিশালী হয়েছে।

বুলিং একটি ভয়াবহ মানসিক সংকট

জাতীয় স্বাস্থ্য ও মানসিকতার সংকট

একটি জাতির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে সে তার নায়কদের কীভাবে দেখে তার ওপর। মুক্তিযোদ্ধারা কেবল ব্যক্তিগত নন, তারা জাতির প্রতীক। তাদের প্রতি অসম্মান মানে পুরো জাতির আত্মসম্মান ক্ষুণ্ণ করা।

মব ভায়োলেন্সের শিকার মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি যখন সংবাদপত্রে আসে, তখন শুধু পরিবার নয়, পুরো জাতি আহত হয়। এটি তরুণ প্রজন্মকে ভুল বার্তা দেয়—যে এখানে বীরত্বের সম্মান নেই, এখানে কৃতজ্ঞতার স্থান নেই।

সমাজের জন্য বিপদ

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে দুর্বল করে। যদি জাতির নায়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলার প্রতি আস্থা হারিয়ে যায়, আর মব ভায়োলেন্স রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তোলে।

অন্যদিকে, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো রাষ্ট্রগুলো তাদের ইতিহাসের নায়কদের সম্মানিত করে আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ যদি সেই পথ না অনুসরণ করে, তবে মব ভায়োলেন্স রাষ্ট্রের ভিতকে আরও দুর্বল করবে।

অধ্যাদেশ জারি: বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বদল, 'সহযোগী মুক্তিযোদ্ধ

সমাধান: সম্মান ফিরিয়ে আনা

বাংলাদেশের জন্য এখন জরুরি—

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সামাজিক শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনা: শিক্ষা ও গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা: মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা, যাতে কেউ বিচার নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান নিশ্চিত করা: ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধার পাশাপাশি সামাজিক স্বীকৃতি, সাংস্কৃতিক স্মরণোৎসব ও ইতিহাস চর্চা বাড়ানো।

রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা: মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় হাতিয়ার না বানিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

ইউরোপ ও আমেরিকা যুদ্ধবীরদের সম্মান দিয়ে তাদের জাতীয় চেতনা শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশকেও তার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে, নইলে জাতি নিজের আত্মপরিচয় হারাবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের হেনস্তা করা মানে শুধু কয়েকজন প্রবীণ মানুষকে অপমান করা নয়—বরং একটি জাতির অস্তিত্ব ও মর্যাদাকে ক্ষতবিক্ষত করা। যদি এই প্রবণতা বন্ধ না হয়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

 সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা

পশ্চিমা ওয়ার ভেটেরান্স,বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও মব ভায়োলেন্স

০৭:০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

জাতির আত্মপরিচয়ের সংকট

ইউরোপ ও আমেরিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রবীণ যোদ্ধারা আজও জাতীয় জীবনে এক উজ্জ্বল প্রতীক। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জাতীয় চেতনার অংশ। বিপরীতে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা, যারা ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন, আজ মব ভায়োলেন্স বা জনতার হিংস্রতায় হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এ চিত্র শুধু বেদনাদায়ক নয়, বরং জাতীয় চরিত্র ও ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর সংকেত। কেন এই বৈপরীত্য? কেন ইউরোপ–আমেরিকা যুদ্ধবীরদের সম্মানিত করে, অথচ বাংলাদেশ তার নায়কদের অবহেলা করছে?

New book to lift 'silence' on British Great War veterans' trauma - University of Birmingham

ইউরোপ ও আমেরিকায় যুদ্ধবীরদের মর্যাদা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপ ও আমেরিকায় যুদ্ধবীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। সরকারি ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, এমনকি রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে প্রতি বছর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন—সবকিছুই যুদ্ধবীরদের প্রতি জাতীয় কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।

আমেরিকার “ভেটেরান্স ডে” কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে “রিমেমব্রেন্স ডে” এখনো পালন করা হয় জাতীয় উৎসবের মতো। সেই যোদ্ধাদেরকে জাতির ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে দেখা হয়। নতুন প্রজন্ম তাদের গল্প শুনে দেশপ্রেম ও ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করে।

এই সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্র আসলে নিজের অস্তিত্বকে দৃঢ় করে। কারণ, ইতিহাস ও তার নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি জাতিকে একত্রিত রাখে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বাস্তবতা

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। কেউ প্রাণ দিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন পরিবার, কেউ আজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন শারীরিক-মানসিক ক্ষত। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে তাদের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই করুণ।

রাষ্ট্র কিছু ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা ও সংরক্ষিত কোটা দিলেও বাস্তবতা হলো—মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ ক্রমেই কমছে। রাজনৈতিক বিভাজন, ইতিহাস বিকৃতি, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়শই উপেক্ষিত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে—কোথাও মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করা হচ্ছে, কোথাও অপমানিত করা হচ্ছে, আবার কোথাও জনতার হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

থামছে না 'মব ভায়োলেন্স', নেপথ্যে সুযোগ নিচ্ছেন যেসব অসাধু চক্র

মব ভায়োলেন্স: জাতীয় অসুস্থতার লক্ষণ

মব ভায়োলেন্স বা গণ-হিংসা বাংলাদেশের সমাজে এক ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। যে কোনো অজুহাতে মানুষ ভিড় জমিয়ে কাউকে নির্যাতন করছে, এমনকি হত্যা করছে। বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থার ঘাটতি ও সামাজিক শৃঙ্খলার ভাঙন এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যখন এই মব ভায়োলেন্সের শিকার হন, তখন তা কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ নয়—বরং জাতীয় মর্যাদার ওপর আঘাত। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করা মানে জাতির স্বাধীনতার প্রতীককে হেনস্তা করা। এটি রাষ্ট্রের আত্মপরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা বনাম ইতিহাস বিস্মৃতি

ইউরোপ ও আমেরিকা যুদ্ধের ইতিহাসকে জাতীয় চেতনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছে। যুদ্ধবীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা তরুণ প্রজন্মকে শিখিয়েছে—দেশের জন্য ত্যাগ মানে কী। ফলে সেখানে জাতীয় ঐক্য ও আইনশৃঙ্খলা শক্তিশালী হয়েছে।

বুলিং একটি ভয়াবহ মানসিক সংকট

জাতীয় স্বাস্থ্য ও মানসিকতার সংকট

একটি জাতির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে সে তার নায়কদের কীভাবে দেখে তার ওপর। মুক্তিযোদ্ধারা কেবল ব্যক্তিগত নন, তারা জাতির প্রতীক। তাদের প্রতি অসম্মান মানে পুরো জাতির আত্মসম্মান ক্ষুণ্ণ করা।

মব ভায়োলেন্সের শিকার মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি যখন সংবাদপত্রে আসে, তখন শুধু পরিবার নয়, পুরো জাতি আহত হয়। এটি তরুণ প্রজন্মকে ভুল বার্তা দেয়—যে এখানে বীরত্বের সম্মান নেই, এখানে কৃতজ্ঞতার স্থান নেই।

সমাজের জন্য বিপদ

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে দুর্বল করে। যদি জাতির নায়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলার প্রতি আস্থা হারিয়ে যায়, আর মব ভায়োলেন্স রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তোলে।

অন্যদিকে, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো রাষ্ট্রগুলো তাদের ইতিহাসের নায়কদের সম্মানিত করে আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ যদি সেই পথ না অনুসরণ করে, তবে মব ভায়োলেন্স রাষ্ট্রের ভিতকে আরও দুর্বল করবে।

অধ্যাদেশ জারি: বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বদল, 'সহযোগী মুক্তিযোদ্ধ

সমাধান: সম্মান ফিরিয়ে আনা

বাংলাদেশের জন্য এখন জরুরি—

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সামাজিক শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনা: শিক্ষা ও গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা: মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা, যাতে কেউ বিচার নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান নিশ্চিত করা: ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধার পাশাপাশি সামাজিক স্বীকৃতি, সাংস্কৃতিক স্মরণোৎসব ও ইতিহাস চর্চা বাড়ানো।

রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা: মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় হাতিয়ার না বানিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

ইউরোপ ও আমেরিকা যুদ্ধবীরদের সম্মান দিয়ে তাদের জাতীয় চেতনা শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশকেও তার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে, নইলে জাতি নিজের আত্মপরিচয় হারাবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের হেনস্তা করা মানে শুধু কয়েকজন প্রবীণ মানুষকে অপমান করা নয়—বরং একটি জাতির অস্তিত্ব ও মর্যাদাকে ক্ষতবিক্ষত করা। যদি এই প্রবণতা বন্ধ না হয়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকবে না।