সাবেক প্রেসিডেন্টদের মতো সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্টরা আজীবন সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা পান না। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ছয় মাস পর্যন্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব।
কামালা হ্যারিস জানুয়ারি ২০২৫-এ অফিস ছাড়ার পর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর নিরাপত্তা আরও এক বছরের জন্য বাড়িয়ে দেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেটি বাতিল করেছেন। এতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ও লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।
বাইডেন কেন নিরাপত্তা বাড়িয়েছিলেন?
বাইডেন বা হ্যারিস কেউই প্রকাশ্যে এর কারণ ব্যাখ্যা করেননি। সিএনএনের তথ্যানুযায়ী, বাইডেন গোপন নির্দেশনায় হ্যারিসের নিরাপত্তা এক বছর বাড়ান।
আইন অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা সচিব বিশেষ পরিস্থিতিতে ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও তাঁদের পরিবারকে অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সিক্রেট সার্ভিস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লেখক রোনাল্ড কেসলার জানান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদ দিলে এটি মোটামুটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
হ্যারিস কি বাড়তি ঝুঁকিতে ছিলেন?
সাম্প্রতিক হুমকি মূল্যায়নে তেমন কোনো বড় বিপদ ধরা পড়েনি। তবে তাঁর টিমের আশঙ্কা ছিল—প্রথম নারী ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ-উপজাতীয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে হ্যারিস বাড়তি হুমকির মুখে থাকতে পারেন।
২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধিকবার তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। কয়েকজনকে অনলাইনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়। এমনকি এ বছরের মার্চে, তিনি অফিস ছাড়ার পরও এক ব্যক্তি তাঁকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে হত্যার হুমকি দেন।
যদিও বিশেষজ্ঞ কেসলার মনে করেন, অন্যান্য রাজনীতিবিদের তুলনায় হ্যারিসকে ঘিরে তেমন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি। তাঁর মতে, সিক্রেট সার্ভিসের এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।
আসন্ন বই প্রচারণা সফর ও বাড়তি চাপ
হ্যারিস শিগগিরই তাঁর বই “১০৭ ডেজ” প্রকাশ উপলক্ষে বহু শহরে সফরে যাচ্ছেন। এতে প্রচুর সিক্রেট সার্ভিস জনবল ও যানবাহন লাগবে। একই সময়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মতো আন্তর্জাতিক কর্মসূচির নিরাপত্তা সামলাতে হচ্ছে এজেন্সিটিকে। ফলে ইতিমধ্যেই কর্মীবাহিনীতে চাপ রয়েছে।
নিরাপত্তা প্রত্যাহারে কী হারাচ্ছেন হ্যারিস?
সিক্রেট সার্ভিস কেবল ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নয়; তাঁরা বাসা-বাড়ি নিরাপদ রাখেন, সিসিটিভি ও অ্যালার্ম সিস্টেম বসান, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্ভাব্য হুমকি পর্যবেক্ষণ করেন। এসব সুবিধা এখন আর হ্যারিস পাবেন না।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য খরচ সাধারণত লাখ লাখ ডলারে গড়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গের নিরাপত্তায় প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়।
এটি কি ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিশোধ?
হ্যারিসের নিরাপত্তা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরপরই বিরোধীরা বলছে এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ট্রাম্প অতীতেও হান্টার ও অ্যাশলি বাইডেনসহ একাধিক ব্যক্তির সুরক্ষা সরিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর সাবেক সহযোগী মাইক পম্পেও ও জন বোল্টনও এর বাইরে ছিলেন না।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের মুখপাত্র বব সালাডে বলেন, জননেতাদের নিরাপত্তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার খেয়ালে নির্ধারণ করা উচিত নয়। তবে কেসলারের মতে, জনবল সংকটে থাকা সিক্রেট সার্ভিস এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হুমকির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের নিয়ম কী?
সাবেক প্রেসিডেন্টরা আজীবন নিরাপত্তা পান। ১৯৯৪ সালে খরচ বাঁচাতে এই সময়সীমা ১০ বছরে নামানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা আবার আজীবন নিরাপত্তা চালু করেন।
বর্তমানে জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা ও জো বাইডেন আজীবন সুরক্ষার আওতায় আছেন। কেবল রিচার্ড নিক্সন স্বেচ্ছায় ১৯৮৫ সালে নিরাপত্তা ত্যাগ করেছিলেন।
কামালা হ্যারিসের নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত বাস্তব পরিস্থিতির কারণে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সিক্রেট সার্ভিস বর্তমানে সীমিত জনবল নিয়ে বড় দায়িত্ব পালন করছে, যেখানে অগ্রাধিকার পাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা।
কামালা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা কেন প্রত্যাহার করা হলো?
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১১:৫৩:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- 37
জনপ্রিয় সংবাদ




















