নবম পরিচ্ছেদ
শরীরটাকে টানটান করে তুলে হাসবার চেষ্টা করলুম। কিন্তু কখনও কখনও হাসিখুশি ভাব দেখানোও কত কষ্টকর হয়ে ওঠে, ঠোঁটের কাঁপুনি থামিয়ে রবারের মতো মুখটা মচকে চেষ্টাকৃত হাসি ফোটানো সময়ে সময়ে কী যন্ত্রণাদায়ক হয়!
সদরঘাঁটির সিড়ি বেয়ে ক্যাপ্টেনের পদের নির্দেশক কাঁধে-পট্টি-লাগানো পোশাক-পরা এক লম্বামতো বয়স্ক অফিসারকে নেমে আসতে দেখা গেল। তার পাশে-পাশে লাথি-খাওয়া কুকুরের ভঙ্গিতে হে’টে আসছিল গাঁয়ের সেই মোড়ল লোকটা। আমার দিকে চোখ পড়তে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দুই হাত ছড়িয়ে দিল মোড়ল, যেন বলতে চাইল, ‘ভুলের জন্যে বিশেষ দুঃখিত’।
অফিসার মোড়লকে ধমক দিয়ে এই সময় কী যেন বলল। মোড়লও চাকরের মতো মাথা ঝুঁকিয়ে, সেলাম ঠুকে দৌড়ে রাস্তা দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
কিছুটা মজা করে কিন্তু বেশ বন্ধুত্বের সুরে ক্যাপ্টেন বলল, ‘কী খবর, যুদ্ধবন্দী!’
‘সুপ্রভাত, স্যার, আমি জবাব দিলুম।
আমার সঙ্গের রক্ষীটিকে চলে যেতে বলে অফিসার এবার আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিলে। তারপর সিগারেট বের করতে-করতে ধূর্ত হাসি হেসে বললে, ‘এ-তল্লাটে কাঁ করছিলে? রাজা আর দেশের জন্যে লড়াই করতে আসছিলে নাকি? কর্নেল কোরেন্কভকে লেখা চিঠিখানা পড়লুম। কিন্তু ওতে তো এখন তোমার কোনো কাজ হবে না। মাসখানেক আগে কর্নেল মারা পড়েছেন।’
মনে মনে বললুম, ‘এজন্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’
‘এস, আমার ঘরে এস। তুমি কে তা মোড়লকে বল নি কেন? বন্ধুদের মধ্যে এসে পড়েই হাজত-বাস করতে হল, কী কাণ্ড!’
‘লোকটা কোন দলের আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। দেখতে ঠিক চাষীর মতো লাগল কাঁধে পট্টি ছিল না, কিছু না। ভেবেছিলুম লোকটা লালও তো হতে পারে। লোকের মুখে শুনেছি, লালগুলো নাকি এ-অঞ্চলে সর্বত্ত ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে, চেষ্টা করে কোনোরকমে কথাগুলো বললুম। অফিসারটিকে লোক ভালো বলেই মনে হল, আর খুব একটা সজাগ দৃষ্টির লোক বলেও ঠাহর হল না। কারণ, তা হলে আমার অতিরিক্ত আত্মসচেতন ভাব দেখে লোকটি আন্দাজ করতে পারত সে আমাকে যা ভেবেছিল আমি সে-লোক ছিলুম না।
আর্কাদি গাইদার 



















