০৯:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৪)

নবম পরিচ্ছেদ

শরীরটাকে টানটান করে তুলে হাসবার চেষ্টা করলুম। কিন্তু কখনও কখনও হাসিখুশি ভাব দেখানোও কত কষ্টকর হয়ে ওঠে, ঠোঁটের কাঁপুনি থামিয়ে রবারের মতো মুখটা মচকে চেষ্টাকৃত হাসি ফোটানো সময়ে সময়ে কী যন্ত্রণাদায়ক হয়!

সদরঘাঁটির সিড়ি বেয়ে ক্যাপ্টেনের পদের নির্দেশক কাঁধে-পট্টি-লাগানো পোশাক-পরা এক লম্বামতো বয়স্ক অফিসারকে নেমে আসতে দেখা গেল। তার পাশে-পাশে লাথি-খাওয়া কুকুরের ভঙ্গিতে হে’টে আসছিল গাঁয়ের সেই মোড়ল লোকটা। আমার দিকে চোখ পড়তে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দুই হাত ছড়িয়ে দিল মোড়ল, যেন বলতে চাইল, ‘ভুলের জন্যে বিশেষ দুঃখিত’।

অফিসার মোড়লকে ধমক দিয়ে এই সময় কী যেন বলল। মোড়লও চাকরের মতো মাথা ঝুঁকিয়ে, সেলাম ঠুকে দৌড়ে রাস্তা দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।

কিছুটা মজা করে কিন্তু বেশ বন্ধুত্বের সুরে ক্যাপ্টেন বলল, ‘কী খবর, যুদ্ধবন্দী!’

‘সুপ্রভাত, স্যার, আমি জবাব দিলুম।

আমার সঙ্গের রক্ষীটিকে চলে যেতে বলে অফিসার এবার আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিলে। তারপর সিগারেট বের করতে-করতে ধূর্ত হাসি হেসে বললে, ‘এ-তল্লাটে কাঁ করছিলে? রাজা আর দেশের জন্যে লড়াই করতে আসছিলে নাকি? কর্নেল কোরেন্‌কভকে লেখা চিঠিখানা পড়লুম। কিন্তু ওতে তো এখন তোমার কোনো কাজ হবে না। মাসখানেক আগে কর্নেল মারা পড়েছেন।’

মনে মনে বললুম, ‘এজন্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’

‘এস, আমার ঘরে এস। তুমি কে তা মোড়লকে বল নি কেন? বন্ধুদের মধ্যে এসে পড়েই হাজত-বাস করতে হল, কী কাণ্ড!’

‘লোকটা কোন দলের আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। দেখতে ঠিক চাষীর মতো লাগল কাঁধে পট্টি ছিল না, কিছু না। ভেবেছিলুম লোকটা লালও তো হতে পারে। লোকের মুখে শুনেছি, লালগুলো নাকি এ-অঞ্চলে সর্বত্ত ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে, চেষ্টা করে কোনোরকমে কথাগুলো বললুম। অফিসারটিকে লোক ভালো বলেই মনে হল, আর খুব একটা সজাগ দৃষ্টির লোক বলেও ঠাহর হল না। কারণ, তা হলে আমার অতিরিক্ত আত্মসচেতন ভাব দেখে লোকটি আন্দাজ করতে পারত সে আমাকে যা ভেবেছিল আমি সে-লোক ছিলুম না।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৪)

০৮:০০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নবম পরিচ্ছেদ

শরীরটাকে টানটান করে তুলে হাসবার চেষ্টা করলুম। কিন্তু কখনও কখনও হাসিখুশি ভাব দেখানোও কত কষ্টকর হয়ে ওঠে, ঠোঁটের কাঁপুনি থামিয়ে রবারের মতো মুখটা মচকে চেষ্টাকৃত হাসি ফোটানো সময়ে সময়ে কী যন্ত্রণাদায়ক হয়!

সদরঘাঁটির সিড়ি বেয়ে ক্যাপ্টেনের পদের নির্দেশক কাঁধে-পট্টি-লাগানো পোশাক-পরা এক লম্বামতো বয়স্ক অফিসারকে নেমে আসতে দেখা গেল। তার পাশে-পাশে লাথি-খাওয়া কুকুরের ভঙ্গিতে হে’টে আসছিল গাঁয়ের সেই মোড়ল লোকটা। আমার দিকে চোখ পড়তে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দুই হাত ছড়িয়ে দিল মোড়ল, যেন বলতে চাইল, ‘ভুলের জন্যে বিশেষ দুঃখিত’।

অফিসার মোড়লকে ধমক দিয়ে এই সময় কী যেন বলল। মোড়লও চাকরের মতো মাথা ঝুঁকিয়ে, সেলাম ঠুকে দৌড়ে রাস্তা দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।

কিছুটা মজা করে কিন্তু বেশ বন্ধুত্বের সুরে ক্যাপ্টেন বলল, ‘কী খবর, যুদ্ধবন্দী!’

‘সুপ্রভাত, স্যার, আমি জবাব দিলুম।

আমার সঙ্গের রক্ষীটিকে চলে যেতে বলে অফিসার এবার আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিলে। তারপর সিগারেট বের করতে-করতে ধূর্ত হাসি হেসে বললে, ‘এ-তল্লাটে কাঁ করছিলে? রাজা আর দেশের জন্যে লড়াই করতে আসছিলে নাকি? কর্নেল কোরেন্‌কভকে লেখা চিঠিখানা পড়লুম। কিন্তু ওতে তো এখন তোমার কোনো কাজ হবে না। মাসখানেক আগে কর্নেল মারা পড়েছেন।’

মনে মনে বললুম, ‘এজন্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’

‘এস, আমার ঘরে এস। তুমি কে তা মোড়লকে বল নি কেন? বন্ধুদের মধ্যে এসে পড়েই হাজত-বাস করতে হল, কী কাণ্ড!’

‘লোকটা কোন দলের আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। দেখতে ঠিক চাষীর মতো লাগল কাঁধে পট্টি ছিল না, কিছু না। ভেবেছিলুম লোকটা লালও তো হতে পারে। লোকের মুখে শুনেছি, লালগুলো নাকি এ-অঞ্চলে সর্বত্ত ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে, চেষ্টা করে কোনোরকমে কথাগুলো বললুম। অফিসারটিকে লোক ভালো বলেই মনে হল, আর খুব একটা সজাগ দৃষ্টির লোক বলেও ঠাহর হল না। কারণ, তা হলে আমার অতিরিক্ত আত্মসচেতন ভাব দেখে লোকটি আন্দাজ করতে পারত সে আমাকে যা ভেবেছিল আমি সে-লোক ছিলুম না।