০৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৯)

দশম পরিচ্ছেদ

চামড়ায়-মোড়া একটা তাকিয়ায় মাথা গাঁজে চুপচাপ পড়ে রইলুম আমি। ‘কী করা যায় এখন? কী করে বাঁচাই চুবুককে? ও’কে পালাতে সাহায্য করা যায় কীভাবে? আমার দোষেই ঝামেলাটা হল, কাজেই আমাকে এ-পাপ ক্ষালন করতে হবে। তার বদলে আমি করছি কী? না, বসে বসে ভারেনিক গিলছি, আর আমার জন্যেই কষ্ট পেতে হচ্ছে চুবুককে। ছি-ছি!’

কিন্তু ভেবে-ভেবে উদ্ধারের কোনো কূলকিনারাই করতে পারলুম না।

ক্রমশ মাথাটা তেতে উঠল, গাল দুটো উঠল গরম হয়ে, আর একটু-একটু করে সাংঘাতিক এক উত্তেজনা পেয়ে বসল আমাকে। ‘আচ্ছা, আমি কি সততার পরিচয় দিচ্ছি? আমার কি গিয়ে খোলাখুলি ঘোষণা করা উচিত নয় যে আমিও একজন লাল, আমি চুবুকের কমরেড? আমি চাই, ওঁর বরাতে যা ঘটবে আমারও তাই ঘটুক?’ এই সহজ-সরল আর জমকালো চিন্তায় কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে বসলুম আমি।

ফিসফিস করে বললুম, ‘নিশ্চয়, এই-ই দরকার। এতে অন্তত আমার মারাত্মক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করা হবে কিছুটা।’ অনেকদিন আগে পড়া ফরাসী বিপ্লবের সময়কার একটা গল্প মনে পড়ল আমার। শর্তাধীনে ছাড়া-পাওয়া একটি ছেলে কীভাবে ফের ফিরে গিয়ে শত্রুর অফিসারের হাতে ধরা দিল আর গুলিতে প্রাণ হারাল, তাই নিয়ে গল্পটি। নিজের সঙ্গে তর্ক’ জুড়ে দিলুম আমি, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, এখুনি উঠে পড়ে বাইরে গিয়ে ওদের সব কিছু বলব। ওদের সৈন্যরা আর ক্যাপুটেন দেখুক লাল যোদ্ধারা কেমন করে প্রাণ দেয়।

ওরা যখন আমাকে দেয়ালের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে, আমি চে’চিয়ে বলব: ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! না-না ও-তো… ও-তো সবসময়ে সবাই বলে। আমি বরঞ্চ ওদের মুখে এই কথাগুলো ছুড়ে মারব:

‘হতভাগা খুনী সব!’ না, আমি বলব…’

তখন যে-সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলুম তার শোকাবহ গাম্ভীর্যের ভাবে আপ্লুত হয়ে আস্তে-আন্তে নিজেকে উত্তেজনার এমন একটা তুঙ্গে তুললুম যেখানে মানুষ বাস্তবতার সমস্ত বোধ বর্জিত হয়ে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৯)

০৮:০০:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দশম পরিচ্ছেদ

চামড়ায়-মোড়া একটা তাকিয়ায় মাথা গাঁজে চুপচাপ পড়ে রইলুম আমি। ‘কী করা যায় এখন? কী করে বাঁচাই চুবুককে? ও’কে পালাতে সাহায্য করা যায় কীভাবে? আমার দোষেই ঝামেলাটা হল, কাজেই আমাকে এ-পাপ ক্ষালন করতে হবে। তার বদলে আমি করছি কী? না, বসে বসে ভারেনিক গিলছি, আর আমার জন্যেই কষ্ট পেতে হচ্ছে চুবুককে। ছি-ছি!’

কিন্তু ভেবে-ভেবে উদ্ধারের কোনো কূলকিনারাই করতে পারলুম না।

ক্রমশ মাথাটা তেতে উঠল, গাল দুটো উঠল গরম হয়ে, আর একটু-একটু করে সাংঘাতিক এক উত্তেজনা পেয়ে বসল আমাকে। ‘আচ্ছা, আমি কি সততার পরিচয় দিচ্ছি? আমার কি গিয়ে খোলাখুলি ঘোষণা করা উচিত নয় যে আমিও একজন লাল, আমি চুবুকের কমরেড? আমি চাই, ওঁর বরাতে যা ঘটবে আমারও তাই ঘটুক?’ এই সহজ-সরল আর জমকালো চিন্তায় কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে বসলুম আমি।

ফিসফিস করে বললুম, ‘নিশ্চয়, এই-ই দরকার। এতে অন্তত আমার মারাত্মক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করা হবে কিছুটা।’ অনেকদিন আগে পড়া ফরাসী বিপ্লবের সময়কার একটা গল্প মনে পড়ল আমার। শর্তাধীনে ছাড়া-পাওয়া একটি ছেলে কীভাবে ফের ফিরে গিয়ে শত্রুর অফিসারের হাতে ধরা দিল আর গুলিতে প্রাণ হারাল, তাই নিয়ে গল্পটি। নিজের সঙ্গে তর্ক’ জুড়ে দিলুম আমি, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, এখুনি উঠে পড়ে বাইরে গিয়ে ওদের সব কিছু বলব। ওদের সৈন্যরা আর ক্যাপুটেন দেখুক লাল যোদ্ধারা কেমন করে প্রাণ দেয়।

ওরা যখন আমাকে দেয়ালের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে, আমি চে’চিয়ে বলব: ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! না-না ও-তো… ও-তো সবসময়ে সবাই বলে। আমি বরঞ্চ ওদের মুখে এই কথাগুলো ছুড়ে মারব:

‘হতভাগা খুনী সব!’ না, আমি বলব…’

তখন যে-সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলুম তার শোকাবহ গাম্ভীর্যের ভাবে আপ্লুত হয়ে আস্তে-আন্তে নিজেকে উত্তেজনার এমন একটা তুঙ্গে তুললুম যেখানে মানুষ বাস্তবতার সমস্ত বোধ বর্জিত হয়ে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে।