০৯:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১০০)

দশম পরিচ্ছেদ

‘যাই, এখুনি উঠে বাইরে যাই,’ বলতে-বলতে খড়ের বিছানায় উঠে বসলুম আমি। ‘কিন্তু বাইরে গিয়ে কী বলব?’

সেই মুহূর্তে আমার মনটা চোখ-ধাঁধানো, জমকালো সব ভাবনার ঘূর্ণিতে ঘুরপাক খেতে শুরু করল আর নানা ধরনের পাগলের মতো সব কথাবার্তা মাথার মধ্যে ছুটোছুটি করে বেড়াতে লাগল।

আর মারা যাবার সময় বলার মতো উপযুক্ত কোনো কথা না-ভেবে কেন জানি না আমার তখন হঠাৎ মনে হল আজামাসের সেই বুড়ো বেদের কথা, যে বিয়ে উপলক্ষে সর্বত্র বাঁশি বাজিয়ে বেড়াত। এইরকম আরও বহু ঘটনার কথা মনে পড়ে যেতে লাগল আমার, যাদের সঙ্গে আমার তখনকার মনের অবস্থার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক’ ছিল না।

‘উঠে পড়া যাক…’ নিজের মনে বললুম আমি। কিন্তু বিছানার খড় আর কম্বল আমার পা দুটো যেন কড়া সিমেন্টমাটির মতো আঁকড়ে রইল।

আর তখন আমি বুঝতে পারলুম, কেন উঠতে পারছি না। আসলে আমি উঠতেই চাইছিলুম না। মৃত্যুর আগে শেষ ঘোষণা আর সেই বেদের কথা নিয়ে জল্পনাকল্পনা আসলে সেই চরম মুহূর্তটাকে ঠেকিয়ে রাখার অজুহাত ছাড়া কিছু ছিল না।

তখন যে-কথাই আমি বলি না কেন আর নিজেকে যতই তাতিয়ে তুলি না কেন, আপনা থেকে ধরা দিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখোমুখি হওয়ার কোনো ইচ্ছেই যে আমার ছিল না, এ-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা যখন নিজেই বুঝতে পারলুম তখন হাল ছেড়ে দিয়ে ফের তাকিয়াটায় মাথা রেখে শুয়ে পড়লুম, আর সেই সুদূর ফরাসী বিপ্লবের বিখ্যাত ছেলেটির সঙ্গে নিজের তুলনা করে, নিজের তুচ্ছতা উপলব্ধি করে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে লাগলুম।

একটা ধাক্কায় কুড়েঘরের দেয়ালটা কে’পে উঠল। মনে হল, ঘরের সংলগ্ন দেয়ালটার ওধারে, তার মানে ওই কু’ড়ের পাশে বাড়ির একটা ঘরে, কেউ শক্ত কিছু দিয়ে দেয়ালে ঘা দিয়েছে। তা সে শক্ত জিনিস রাইফেলের কু’দোও হতো পারে, আবার বেঞ্চির একটা কোণও হওয়া বিচিত্র নয়। এরপর দেয়ালের ওধার থেকে লোকের গলার আওয়াজও পাওয়া গেল।

টিকটিকির মতো পিছলে দেয়ালের কাছে চলে গিয়ে দেয়ালের কাঠের তক্তার ফাঁকে কান পাতলুম। কান পাতার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাটেনের কথার একটা অংশ শুনতে পেলুম, ‘…বাজে কথা বলে লাভ নেই, বুঝেছ তো? এতে তোমার নিজের আখেরই আরও খারাপ হচ্ছে। বল, তোমাদের বাহিনীতে কটা মেশিনগান আছে?’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১০০)

০৮:০০:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দশম পরিচ্ছেদ

‘যাই, এখুনি উঠে বাইরে যাই,’ বলতে-বলতে খড়ের বিছানায় উঠে বসলুম আমি। ‘কিন্তু বাইরে গিয়ে কী বলব?’

সেই মুহূর্তে আমার মনটা চোখ-ধাঁধানো, জমকালো সব ভাবনার ঘূর্ণিতে ঘুরপাক খেতে শুরু করল আর নানা ধরনের পাগলের মতো সব কথাবার্তা মাথার মধ্যে ছুটোছুটি করে বেড়াতে লাগল।

আর মারা যাবার সময় বলার মতো উপযুক্ত কোনো কথা না-ভেবে কেন জানি না আমার তখন হঠাৎ মনে হল আজামাসের সেই বুড়ো বেদের কথা, যে বিয়ে উপলক্ষে সর্বত্র বাঁশি বাজিয়ে বেড়াত। এইরকম আরও বহু ঘটনার কথা মনে পড়ে যেতে লাগল আমার, যাদের সঙ্গে আমার তখনকার মনের অবস্থার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক’ ছিল না।

‘উঠে পড়া যাক…’ নিজের মনে বললুম আমি। কিন্তু বিছানার খড় আর কম্বল আমার পা দুটো যেন কড়া সিমেন্টমাটির মতো আঁকড়ে রইল।

আর তখন আমি বুঝতে পারলুম, কেন উঠতে পারছি না। আসলে আমি উঠতেই চাইছিলুম না। মৃত্যুর আগে শেষ ঘোষণা আর সেই বেদের কথা নিয়ে জল্পনাকল্পনা আসলে সেই চরম মুহূর্তটাকে ঠেকিয়ে রাখার অজুহাত ছাড়া কিছু ছিল না।

তখন যে-কথাই আমি বলি না কেন আর নিজেকে যতই তাতিয়ে তুলি না কেন, আপনা থেকে ধরা দিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখোমুখি হওয়ার কোনো ইচ্ছেই যে আমার ছিল না, এ-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা যখন নিজেই বুঝতে পারলুম তখন হাল ছেড়ে দিয়ে ফের তাকিয়াটায় মাথা রেখে শুয়ে পড়লুম, আর সেই সুদূর ফরাসী বিপ্লবের বিখ্যাত ছেলেটির সঙ্গে নিজের তুলনা করে, নিজের তুচ্ছতা উপলব্ধি করে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে লাগলুম।

একটা ধাক্কায় কুড়েঘরের দেয়ালটা কে’পে উঠল। মনে হল, ঘরের সংলগ্ন দেয়ালটার ওধারে, তার মানে ওই কু’ড়ের পাশে বাড়ির একটা ঘরে, কেউ শক্ত কিছু দিয়ে দেয়ালে ঘা দিয়েছে। তা সে শক্ত জিনিস রাইফেলের কু’দোও হতো পারে, আবার বেঞ্চির একটা কোণও হওয়া বিচিত্র নয়। এরপর দেয়ালের ওধার থেকে লোকের গলার আওয়াজও পাওয়া গেল।

টিকটিকির মতো পিছলে দেয়ালের কাছে চলে গিয়ে দেয়ালের কাঠের তক্তার ফাঁকে কান পাতলুম। কান পাতার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাটেনের কথার একটা অংশ শুনতে পেলুম, ‘…বাজে কথা বলে লাভ নেই, বুঝেছ তো? এতে তোমার নিজের আখেরই আরও খারাপ হচ্ছে। বল, তোমাদের বাহিনীতে কটা মেশিনগান আছে?’