দশম পরিচ্ছেদ
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলুম সেখান থেকে মাত্র বিশ হাতের মধ্যে পাঁচজন সেপাই রাইফেল কাত করে তুলে একজন লোকের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে ছিল। আর একটা পোড়ো মাটির কাঁড়ের দেয়ালে পিঠ রেখে দাঁড়িয়ে ছিল লোকটি। লোকটির মাথায় টুপি ছিল না, হাত দুটো ছিল পিছমোড়া করে বাঁধা। লোকটি একদৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
মাথাটা ঘুরে উঠল আমার। ফিসফিস করে বললুম, ‘চুবুক!’
ক্যাপটেন অবাক হয়ে পেছন ফিরে দেখল। তারপর যেন আশ্বাস দেয়ার ভঙ্গিতেই আমার কাঁধের ওপর ওর হাতখানা রাখল। আর সারাক্ষণ আমার দিকে
দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে, সেপাইদের রাইফেল কাঁধে-বাগিয়ে-ধরার হুকুমের দিকে ভ্রুক্ষেপমাত্র না করে, চুবুক হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, ঘেন্নায় মাথাটা নাড়লেন একবার, তারপর থুথু ফেললেন।
আর তারপরই আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল আগুনের ঝলকানিতে আর কানে এল প্রচণ্ড আওয়াজ, যেন কেউ আমার কানের কাছে প্রকান্ড একটা ঢাক বাজাল।
সজোরে টলে পড়লুম আমি। ক্যাপুটেনের জামার হাতার একটা রঙিন ফিতে ছি’ড়ে নিয়ে মাটিতে বসে পড়লুম।
‘এর মানে কী, কাদেত?’ কড়া সুরে বলে উঠল ক্যাপটেন। ‘ছি-ছি, বুড়ি মেয়েমানুষের বেহদ্ন্দ কোথাকার! সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে তোমার এখানে আসা উচিত হয় নি।’ তারপর আরেকটু নরম সুরে বলল, ‘না, এ-জিনিস তো চলবে না, ছোকরা। আর তুমি কিনা ফৌজে যোগ দিতে পালিয়ে এসেছ।’
‘ছেলেটি এতে অভ্যন্ত নয় তো, তাই,’ ফায়ারিং স্কোয়াডের ভারপ্রাপ্ত অফিসার সিগারেট ধরাতে-ধরাতে বলল। ‘ওদিকে দেখবেন না। আমার কোম্পানিতেও এমনি একজন টেলিফোন অপারেটর ছিল, একজন কাদেত। প্রথম দিকে সে রাতে ঘুমের ঘোরে মাকে ডাকাডাকি করত, কিন্তু এখন রীতিমতো ডানপিটে হয়ে উঠেছে ছোকরা।’ তারপর গলাটা একটু নামিয়ে বলল, ‘যাই বলুন, লোকটা কিন্তু বেপরোয়া। এমনভাবে খাড়া দাঁড়িয়ে রইল যেন শান্ত্রী হিসেবে পাহারা দিচ্ছে। আবার থুথুও ফেলল, দেখেছিলেন?’
আর্কাদি গাইদার 



















