সহজেই মনে হতে পারে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বশক্তিমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতগুলো লড়াই শুরু করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই জিতেছেন যে প্রতিরোধ অর্থহীন বলেই মনে হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারকে একতরফা বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি করিয়েছেন এবং চিপ নির্মাতা কোম্পানিটিকে সরকারকে ৯.৯% শেয়ারহোল্ডার হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।
তবে এটিই পুরো চিত্র নয়। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প দুর্বল প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে কিছু সাফল্য পেলেও শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে তার জয় ততটা হয়নি। গত শুক্রবার মার্কিন আপিল আদালত রায় দিয়েছে যে ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্কই অবৈধ, যদিও শেষ সিদ্ধান্ত সম্ভবত সুপ্রিম কোর্ট দেবে।
ইইউ প্রথমত দুর্বল প্রতিপক্ষের দলে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে ত্যাগ করে, তবে ইউরোপের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এই বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প প্রথমে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করেন। পরে তিনি একটি চুক্তি করেন, যেখানে বলা হয় ২০২৮ সালের মধ্যে ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনবে এবং তাদের কোম্পানিগুলো ৬০০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করবে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন চীন, রাশিয়া কিংবা ভারতকে এখনও নিজের ইচ্ছায় আনতে পারেনি। এগুলো অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ।
বেইজিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ট্রাম্পকে চীনা আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর আগে সতর্ক হতে বাধ্য করেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করাও ট্রাম্প এড়িয়ে গেছেন। একইভাবে, ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, যদিও গত সপ্তাহে তিনি শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
ফেডারেল রিজার্ভকেও ট্রাম্প এখনও দমাতে পারেননি। যাকে তিনি বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন, গভর্নর লিসা কুক আদালতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। চেয়ার জেরোম পাওয়েলও নীতিতে কিছুটা শিথিল হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও ট্রাম্পের চাপে মাথা নত করেননি।
হোয়াইট হাউস হয়তো শেষ পর্যন্ত ফেডের স্বাধীনতা সীমিত করতে সফল হতে পারে। কিন্তু এই লড়াই এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে, যা তার ক্ষমতা প্রয়োগের সামর্থ্যকে আরও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

শক্তির নিরীক্ষা
শক্তি মানে হলো অন্যদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করার ক্ষমতা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ক্ষমতা, যা ট্রাম্প প্রায়ই করেন, শক্তির সমতুল্য নয়। যেমন, একটি ষাঁড় যদি ভঙ্গুর চীনামাটির দোকানে ঢোকে, তার প্রভাব অনেক হবে, কিন্তু সেটি শক্তি নয়।
ট্রাম্প এতদিনে কী কী উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে অর্জন করেছেন তার একটি তালিকা করলে শীর্ষে থাকবে তার তথাকথিত “বিগ, বিউটিফুল বিল”। বিরোধিতা উপেক্ষা করে তিনি এই কর-কমানো আইন পাস করিয়েছেন। তবে অন্য ক্ষেত্রে তার রেকর্ড মিশ্র।
বাণিজ্যের দিক থেকে দেখলে, হোয়াইট হাউস জাপান, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং আরও কিছু দেশের সঙ্গে একতরফা চুক্তি করেছে – এবং হয়তো কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গেও অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু চীন ও ভারতের মতো বড় খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া ইইউ এখনও কিছু নিয়ম পরিবর্তনের চাপে রাজি হয়নি, যেমন ডিজিটাল সেবা সংক্রান্ত নীতিমালা, যেগুলোকে ট্রাম্প অন্যায্য বলেছেন।
একইভাবে, ট্রাম্প এখনও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি বশে আনতে পারেননি, যদিও কলম্বিয়ার মতো কিছু দুর্বল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন। তার অভিবাসন দমননীতিও মিশ্র ফল দিয়েছে। কঠোর কৌশলের ফলে গত দশকের তুলনায় দ্বিগুণ অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে মাহমুদ খালিলের মতো ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীরা আদালতের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনায় কিলমার আবরেগোকে আবার ফিরিয়ে আনতে হয়েছে, যাকে বেআইনিভাবে এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সরকার তাকে ফেরত আনলেও পরে আবার গ্রেপ্তার করেছে এবং এবার উগান্ডায় পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। তবে আদালত এখন পর্যন্ত তা ঠেকিয়েছে।

প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি
ট্রাম্পের এসব লড়াই তাকে দুর্বলও করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতার বড় হুমকি হলো, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তারা হয়তো চীন ও রাশিয়ার কাছাকাছি চলে যেতে পারে। যদি তাই হয়, তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপ প্রয়োগ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বেইজিং ও মস্কো।
অন্যদিকে, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের এই নিয়ন্ত্রণকে ভালোভাবে নিচ্ছে না। ভবিষ্যতে তারা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইবে। যদি তা হয়, তবে কোনো ভবিষ্যৎ চীন-সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যখন সাহায্য চাইবে, তখন ইইউ হয়তো পাশে থাকবে না।
ট্রাম্পের কিছু জয়ও উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। যেমন, অভিবাসন একসময় তার সবচেয়ে জনপ্রিয় নীতি ছিল। কিন্তু এখন বেশিরভাগ আমেরিকানই তার পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট, রয়টার্স/ইপসোস জরিপ অনুযায়ী। একইভাবে, ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তও জনপ্রিয় হয়নি।
আরও ঝুঁকিপূর্ণ তার “বিগ, বিউটিফুল বিল”, যেখানে সাধারণ মানুষের ভাতা কমানো এবং ধনীদের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, এটি খুবই অজনপ্রিয়।
একইভাবে, আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোতে দাম বেড়ে যেতে পারে এবং চাকরি কমতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রভাব সীমিত, কিন্তু মাত্র ৩৭% আমেরিকান তার অর্থনীতি পরিচালনার প্রশংসা করছেন, যা প্রথম মেয়াদে তার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল।
ডলার ও মার্কিন বন্ড, যেগুলো ট্রাম্প এপ্রিলে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করলে পড়ে গিয়েছিল, এখন কিছুটা স্থিতিশীল। তবে ফেডকে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণ করা বা অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নিয়ে হস্তক্ষেপ করলে আবারও বাজার অস্থির হতে পারে।
সম্ভবত ট্রাম্পের ক্ষমতার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো ভোটাররা। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর থেকে তার অনুমোদনের হার ক্রমাগত কমছে এবং এখন তা ৪০%। বাজি বাজারের ইঙ্গিত হলো, আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। যদি তা হয়, তবে ট্রাম্পের ক্ষমতা হয়তো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে – কিংবা ইতিমধ্যে অতিক্রম করেছে।
হুগো ডিকসন, রয়টার্সের কমেন্টেটর-অ্যাট-লার্জ। তিনি ব্রেকিংভিউসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ও সম্পাদক-প্রধান ছিলেন। তার আগে তিনি ফাইনান্সিয়াল টাইমসের লেক্স কলামের সম্পাদক ছিলেন। থমসন রয়টার্স ব্রেকিংভিউস অধিগ্রহণের পর তিনি ইনফ্যাক্টস প্রতিষ্ঠা করেন, যা ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতা করত। তিনি পিপল’স ভোট আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যা ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন গণভোট চেয়েছিল। তিনি জি-৭ এর “পার্টনারশিপ ফর গ্লোবাল গ্রোথ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার” উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা, যা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা। বর্তমানে তিনি ইউক্রেনের জন্য ৩০০ বিলিয়ন ডলারের “ক্ষতিপূরণ ঋণ” প্রস্তাব করছেন। একইসঙ্গে তিনি একজন দার্শনিক, যার গবেষণা মূলত অর্থবহ জীবন নিয়ে।
হুগো ডিকসন 


















