আকস্মিক সৌভাগ্যের গল্প
১৯৮০-এর দশকে যখন ইন্টারনেটের সূচনা হচ্ছিল, তখন প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলের জন্য বিশেষ ওয়েব ডোমেইন ঠিকানা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য .us, যুক্তরাজ্যের জন্য .uk। সেই তালিকায় ছিল ছোট্ট ক্যারিবীয় দ্বীপ অ্যাঙ্গুইলাও, যার প্রাপ্য হয়েছিল .ai ডোমেইন।
তখন কেউ বুঝতে পারেনি, এই .ai একদিন কোটির অঙ্কে অর্থ এনে দেবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করার ফলে এখন হাজারো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি .ai ডোমেইনে ওয়েবসাইট নিবন্ধন করছে।
কোটি টাকার ডোমেইন বিক্রি
মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ধর্মেশ শাহ সম্প্রতি you.ai ডোমেইন কিনেছেন প্রায় ৭ লাখ ডলারে (প্রায় ৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা)। তিনি জানান, এই ডোমেইনে মানুষের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করে নির্দিষ্ট কাজ করানোর একটি এআই পণ্য চালু করার ভাবনা রয়েছে।
গত পাঁচ বছরে .ai ডোমেইনের সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে এবং গত এক বছরেই তা দ্বিগুণ হয়েছে।
অর্থনীতিতে নতুন ভরসা
অ্যাঙ্গুইলার জনসংখ্যা মাত্র ১৬ হাজার। এর মূল আয় আসে পর্যটন থেকে। ২০২৪ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপটিতে ভ্রমণ করেছেন। তবে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ খাত ঝুঁকির মুখে থাকে।
তাই ডোমেইন বিক্রি থেকে আসা অর্থ এখন অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করছে এবং ঝড়ের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (IMF) এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে।
সরকারি আয়ে বিশাল অবদান
অ্যাঙ্গুইলার ২০২৫ সালের বাজেট খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ডোমেইন বিক্রি থেকে দ্বীপটি আয় করেছে ১০৫.৫ মিলিয়ন পূর্ব ক্যারিবীয় ডলার (৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা মোট রাজস্বের প্রায় ২৩ শতাংশ। পর্যটন থেকে আসে প্রায় ৩৭ শতাংশ।
সরকারের আশা, ২০২৫ সালে এ আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১৩২ মিলিয়ন ডলারে এবং ২০২৬ সালে ১৩৮ মিলিয়নে। বর্তমানে ৮.৫ লাখের বেশি .ai ডোমেইন চালু আছে, যা ২০২০ সালে ছিল মাত্র ৫০ হাজারেরও কম।
ব্রিটেনের ভূমিকা
ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি হিসেবে অ্যাঙ্গুইলা যুক্তরাজ্যের সার্বভৌমত্বের অধীন, তবে অভ্যন্তরীণ শাসন অনেকটাই স্বশাসিত। ২০১৭ সালে হারিকেন ইরমায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলে যুক্তরাজ্য দ্বীপটিকে ৫ বছরের জন্য ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড সাহায্য দিয়েছিল।
ডোমেইন ব্যবস্থাপনায় চুক্তি
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অ্যাঙ্গুইলা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইডেনটিটি ডিজিটালের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন বিশ্বব্যাপী সার্ভারে সব .ai ডোমেইন হোস্ট করছে, যাতে ভবিষ্যতের ঝড় বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ঝুঁকি না থাকে।
প্রতি ডোমেইন নিবন্ধনের খরচ গড়ে ১৫০-২০০ ডলার এবং প্রতি দুই বছরে একই পরিমাণে নবায়ন ফি দিতে হয়। জনপ্রিয় নামগুলো নিলামে লাখ লাখ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, তবে নবায়ন ফি সবার জন্য সমান। আয়ের বেশির ভাগ যায় সরকারের কোষাগারে, আর প্রায় ১০ শতাংশ কেটে নেয় আইডেনটিটি ডিজিটাল।
সর্বাধিক দামী ডোমেইন
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া .ai ডোমেইন হলো you.ai। ধর্মেশ শাহ আরও কিছু ডোমেইনের মালিক হলেও মূল ডোমেইন হিসেবে এটি কিনেছেন। তিনি মনে করেন, শিগগিরই কেউ না কেউ আরও বেশি দামে .ai ডোমেইন কিনবে, কারণ এআই নিয়ে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
তবে তাঁর বিশ্বাস, দীর্ঘমেয়াদে এখনো .com ডোমেইনের মূল্য বেশি টিকে থাকবে।
অন্যান্য নজির ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই পথ একেবারে নতুন নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দেশ টুভালু ১৯৯৮ সালে .tv ডোমেইনের জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভেরিসাইনের সঙ্গে বার্ষিক ২ মিলিয়ন ডলারে চুক্তি করেছিল। পরবর্তী সময়ে তা নিয়ে সমালোচনা হয়।
অ্যাঙ্গুইলা ভিন্নভাবে কাজ করছে—এককালীন অর্থের বদলে আয়ের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। এভাবে টেকসইভাবে আয় বাড়ানোই মূল লক্ষ্য। এ অর্থ দিয়ে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
আজ .ai ডোমেইন নিবন্ধনের সংখ্যা দ্রুত এক মিলিয়নের দিকে এগোচ্ছে। অ্যাঙ্গুইলার মানুষ আশা করছে, এই সৌভাগ্যের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হলে দ্বীপটির ভবিষ্যৎ হবে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ।