সিঙ্গাপুরের ২০২৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা ৩ মে একটি এইচডিবি প্যাভিলিয়নে ভোট দেন। সাম্প্রতিক ‘পারসেপশন অব পলিসিস ইন সিঙ্গাপুর’ জরিপে দুটি সমান্তরাল প্রবণতা ধরা পড়েছে: একদিকে রক্ষণশীল সমর্থন সক্রিয় করা যায়, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বহুত্ববাদের পক্ষে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। সব ধরনের ভোটার ক্রমবর্ধমানভাবে ভারসাম্য রক্ষা, বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি ও সংসদে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্বকে সমর্থন করছে। এই অবস্থানগুলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং পাশাপাশি বিদ্যমান।
গড়পড়তা ২১ থেকে ৩৯ বছর বয়সী সিঙ্গাপুরের মিলেনিয়াল ও জেন জেড ভোটারের রাজনৈতিক ঝোঁক আসলে কী? উন্নত অর্থনীতির বিশ্লেষকদের মতো কি ধরে নিতে হবে যে তারা প্রগতিশীল রাজনীতির দিকে এগিয়ে যায় এবং স্থিতাবস্থা বা “রক্ষণশীলতা” থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা কতটা গুরুত্ব দেয় সুশাসন ও প্রশাসনিক দক্ষতাকে? প্রার্থীর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্যতা বা সংসদে বৈচিত্র্যকে কতটা গুরুত্ব দেয়? রাজনীতিকরা এই প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট উত্তর চান; সঠিক উত্তর তাদের নির্বাচনী সাফল্য নিশ্চিত বা ব্যর্থ করতে পারে। তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে এই তাগিদ আরও প্রবল। কারণ, তারা প্রায়ই নির্বাচনী অস্থিরতার চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে: গভীর দলীয় অনুরাগ গড়ে না ওঠায় নতুন খেলোয়াড়দের জন্য তারা সাফল্যের সুযোগ তৈরি করে আবার হতাশ হলে দ্রুত ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে চলে যায়।

অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের কাছেও এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা একরকম শিল্পের মতো, বিজ্ঞানের চেয়ে। জরিপগুলো, যদিও সীমাবদ্ধ, অন্তত কিছু পরিমাপযোগ্য ইঙ্গিত দেয়। নীতি অধ্যয়ন ইনস্টিটিউটের (আইপিএস) ২০২৫ সালের নির্বাচনের পর প্রকাশিত জরিপ সিরিজ এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আলোকপাত করছে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় ফল হলো: ২০২০ সালের কোভিড-১৯ নির্বাচনের পর থেকে ২১-৩৯ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার প্রতি সমর্থন দেখিয়ে রক্ষণশীল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের হার বেড়েছে। শুধু তাই নয়, সব বয়সী ভোটারদের মধ্যেই রক্ষণশীলদের হার বেড়েছে, কেবলমাত্র ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্বদের মধ্যে সামান্য হ্রাস ছাড়া। গবেষকরা জানান, এই পতন সম্ভবত জরিপের নতুন অনলাইন পদ্ধতির কারণে, যা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউগভের প্যানেলের উপর নির্ভর করেছে।
মোট ভোটারের মধ্যে ২৫ শতাংশ রক্ষণশীল, ২৭ শতাংশ বহুত্ববাদী (যারা নির্বাচন সংস্কার ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদের দিকে ঝোঁকেন), আর ৪৮ শতাংশ দোদুল্যমান ভোটার যাদের মতামত বিচিত্র। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর জরিপে এই হার ছিল যথাক্রমে ১৯ শতাংশ, ২২ শতাংশ এবং ৫৯ শতাংশ।
এ তথ্যগুলো দীর্ঘদিনের কিছু ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। বিশেষত সেই ধারণা যে রক্ষণশীলতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৫ সালে লি কুয়ান ইউ’র মৃত্যু-পরবর্তী আবেগে পিএপি ৬৯.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এবং তখন রক্ষণশীলদের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। ২০২০ সালে সেই হার কমে যাওয়ায় অনেকে ভেবেছিলেন ২০১৫ ছিল শীর্ষ বিন্দু, এরপর শুধু পতন ঘটবে। কিন্তু সর্বশেষ ফলাফল ভিন্ন ছবি দিচ্ছে।

এখন বোঝা যাচ্ছে রক্ষণশীলতা সিঙ্গাপুরে এক ধরনের ভালভের মতো কাজ করে, যেখানে দোদুল্যমান ভোটাররা প্রধান ভাণ্ডার। পরিস্থিতি মিললে তারা স্থিতাবস্থা সমর্থনে ঝুঁকে পড়ে। তবে এ কাহিনি অর্ধেক। কারণ দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা এখনও বহুত্ববাদের পক্ষে। সব ভোটারই ক্রমশ সংসদে ভারসাম্য, বিকল্প মত ও বিরোধী দলের উপস্থিতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
রক্ষণশীলতাকে কী নাড়ায়? সাধারণ ধারণা হলো সংকট। জাতি বিপদে পড়লে ভোটাররা নিরাপত্তার খোঁজে পিএপি-র দিকে ঝোঁকে। কিন্তু ২০২০ সালে মহামারির মধ্যেও পিএপি-র ভোট ভাগ গত পাঁচ নির্বাচনের গড়ের নিচে নেমে গিয়েছিল। তাই অন্য কিছু এখানে কাজ করছে।
আইপিএসের সিনিয়র গবেষক ড. গিলিয়ান কোহ এক ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তার মতে, গত মেয়াদে নীতি বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্মিলিত প্রভাব বিশেষত তরুণ ভোটারদের মধ্যে রক্ষণশীলতা বাড়িয়েছে। নীতির ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে দ্রুত ও বড় পরিসরে জনসাধারণের আবাসনের প্রাপ্যতা ও সামর্থ্য নিশ্চিত করেছে, মানসিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থায়িত্বে গুরুত্ব দিয়েছে, সামাজিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতি করেছে— যেমন প্রতিবন্ধী মানুষের সহায়তা থেকে সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা ৩৭৭এ ধারার অবলুপ্তি—তা প্রভাব ফেলেছে।
রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং তরুণদের প্রতি আন্তরিক উদ্বেগ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এটি তরুণ ভোটারদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করেছে।
ভবন জয়প্রগাস 


















