অভিযোগ ও প্রেক্ষাপট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ও ফ্লোরিডায় বিলাসবহুল দুই বাড়িকে একই সঙ্গে ‘প্রধান বাসস্থান’ দেখিয়ে কর ছাড় নিয়েছেন বিল পুলটের বাবা মার্ক পুলটে এবং সৎমা জুলি পুলটে। অথচ বিল পুলটে নিজে ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।
মার্কিন রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে মার্ক ও জুলি পুলটে এই দ্বৈত ‘হোমস্টেড এক্সেম্পশন’ দাবি করে আসছেন। এ ধরনের ছাড় মূলত করদাতার একমাত্র প্রধান বাসস্থানের জন্য দেওয়া হয়।

কর কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ
মিশিগানের ব্লুমফিল্ড টাউনশিপের কর দপ্তর রয়টার্সের অনুসন্ধানের পর জানায়, পুলটে পরিবারের মিশিগান বাড়ির কর ছাড় বাতিল করা হয়েছে। টাউনশিপের মূল্যায়ন পরিচালক ড্যারিন ক্রাটজ জানান, বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, যা বিধিবহির্ভূত। তিনি বলেন, নতুন করে কর বিল তৈরি হবে, তাতে জরিমানাও যুক্ত হবে।
ফ্লোরিডার কর্মকর্তারা জানান, তাদের রাজ্যে ছাড়ের দাবি পুরোনো, তাই বিষয়টি মিশিগানের এখতিয়ারে পড়ে।
পুলটে পরিবারের নীরবতা
মার্ক ও জুলি পুলটে কিংবা তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়টার্সের ফোন বা ইমেইলের জবাব দেননি। বিল পুলটে, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক হন, তিনিও কোনো মন্তব্য করেননি।

লিসা কুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বিল পুলটে ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তিনি একাধিক সম্পত্তিকে প্রধান বাসস্থান হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং ভাড়া দিয়েছেন। এ কারণে কুককে ট্রাম্প প্রশাসন বরখাস্ত করেছে। বিষয়টি বিচার বিভাগে পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পুলটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুককে অভিযুক্ত করে লিখেছেন, “অর্থনৈতিক প্রতারণা গুরুতর অপরাধ। করবেন না।”
কুক অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, বাড়ি সম্পর্কে তাঁর বর্ণনা কোনো প্রতারণা নয়।
পুলটে পরিবারের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব
পুলটে পরিবার মূলত মিশিগান থেকে শুরু হওয়া হাউজিং ব্যবসার মাধ্যমে খ্যাতি পায়। তারা রক্ষণশীল রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সক্রিয়। মার্ক ও জুলি বহু রিপাবলিকান প্রার্থীর নির্বাচনী তহবিলে অর্থ দিয়েছেন।

মার্ক পুলটে ফ্লোরিডায় নিজস্ব হাউজিং কোম্পানি চালান, বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণে বিশেষজ্ঞ। তিনি একটি পারিবারিক ফাউন্ডেশনেরও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। ২০২১ সালে তিনি পাম বিচে একটি সম্পত্তি ১২২.৭ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেছিলেন, যা সে সময় রেকর্ড ছিল। বাড়িটি আগে ট্রাম্পের মালিকানায় ছিল।
কর ছাড়ের আর্থিক প্রভাব
রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত দম্পতি একসঙ্গে দুটি রাজ্যে কর ছাড় দাবি করতে পারেন না, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া। এ কারণে পুলটে পরিবারের দ্বৈত দাবি সন্দেহজনক।
ফ্লোরিডার বোকা রাটনে তাদের বাড়িতে ২০২৫ সালে কর ছাড়ের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ডলার বাঁচানো হয়েছে। বাড়িটি পানির ধারে, বিলাসবহুল সাজসজ্জাসহ বিশাল সম্পত্তি। ২০১৬ সালে তারা এটি ৪.২৫ মিলিয়ন ডলারে কিনেছিলেন।
মিশিগানের বাড়িটি ২০২০ সালে প্রায় ১০ লাখ ডলারে কেনা হয়। সম্প্রতি সেখানে ছাড় বাতিল হওয়ায় রেকর্ডে কর ছাড় শূন্য দেখাচ্ছে।

সমাপনী মন্তব্য
বিল পুলটে ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুককে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ তাঁর নিজের বাবা ও সৎমার বিরুদ্ধে একই ধরনের দ্বৈত কর ছাড় নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি এখন দুই রাজ্যের কর কর্তৃপক্ষের হাতে তদন্তাধীন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















