০৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
গাজায় যুদ্ধের শেষ তিন মাসে নবজাতকের মৃত্যু বেড়েছে ভয়াবহভাবে নির্বাচন সহজ হবে না: তারেক রহমান শিশুদের জন্য বন্ধ হচ্ছে ডিজিটাল দরজা: সোশ্যাল মিডিয়া ও পর্ন সাইটে বয়স যাচাইয়ের বিশ্বব্যাপী ঢেউ সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিতে ভর করে বিদেশে পালানো কর্মকর্তাকে তাড়া করছে বেইজিং বিআর শেঠি মামলা: নতুন সংযুক্ত আরব আমিরাত আইন খুলে দিল ব্যাংক অব বরোদার লেনদেন নথির দরজা হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ভারতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় : নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হুমকি ও হয়রানির অভিযোগ, তদন্ত ও শাস্তির দাবি চট্টগ্রামে মাদকবিরোধী অভিযানে দুই নারী গ্রেপ্তার, বিপুল ইয়াবা উদ্ধার হাদির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক: মেডিকেল বোর্ড যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে মানি লন্ডারিং মোকাবিলায় ‘বেঞ্চ বুক’ উদ্বোধন

ইসরায়েলের দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের উত্থান

হোমেশে নতুন সূচনা

১ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে পশ্চিম তীরের দখলকৃত হোমেশ বসতিতে ছোট্ট একটি শিশুতোষ বিদ্যালয় চালু হয়। এটি সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হলেও এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হোমেশ ছিল সেই বসতিগুলোর একটি, যা ২০ বছর আগে এরিয়েল শারনের “ডিসএনগেজমেন্ট” পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। গাজা ও আংশিক পশ্চিম তীর থেকে সে সময় ইসরায়েল প্রত্যাহার করেছিল।

আজ আবার হোমেশের পুনরায় খোলা বসতি স্থাপনকারীদের জন্য একপ্রকার বিজয়। তারা বহুদিন ধরেই এই জায়গায় ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল। এখন কিছু পরিবার ফেরত আসায় তাদের রাজনৈতিক শক্তি আরও দৃশ্যমান হয়েছে। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী এবং বসতিবাসী বেজালেল স্মোত্রিচ উদ্বোধনে বলেন, “এখানে শিশুদের হাসি-গানই প্রমাণ করবে যে বসতি উপড়ে ফেলার চিন্তা বৃথা।”


গাজা যুদ্ধ ও নতুন প্রভাব

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধ বসতি স্থাপনকারীদের আরও সাহসী করে তুলেছে। স্মোত্রিচসহ ডানপন্থি নেতারা খোলাখুলিভাবে গাজা উপত্যকায় ২১ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে উৎখাত করে ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপনের ডাক দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করছেন, ইসরায়েল গাজায় স্থায়ীভাবে থাকতে চায় না। তবে তিনি কখন বা কীভাবে সেনা প্রত্যাহার করবেন তা স্পষ্ট করেননি।

সরকারি মন্ত্রী ও নেতারা এটিকে একপ্রকার “অলৌকিক সময়” বলে আখ্যা দিচ্ছেন। বাস্তবে গাজায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, ৭০% ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জনগণকে সংকুচিত ঘেরাটোপে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা নতুন সড়ক তৈরি করছে সামরিক প্রয়োজনে বলে দাবি করলেও বসতি স্থাপনকারীরা ইতিমধ্যেই এসব এলাকায় নতুন বসতির মানচিত্র আঁকছে।


পশ্চিম তীরে বসতি বিস্তার

বর্তমানে পশ্চিম তীরে প্রায় ৫ লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করে। সংখ্যার দিক থেকে ফিলিস্তিনি অনেক বেশি হলেও ভূমির নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ শক্ত হচ্ছে ইসরায়েলিদের হাতে। শুধু গত কয়েক বছরে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন সড়ক তৈরি হয়েছে, যা শুধুমাত্র ইসরায়েলিদের জন্য।

সম্প্রতি সরকার তিন হাজার সাতশ পঞ্চাশ নতুন বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোর অধিকাংশ কৌশলগতভাবে স্থাপিত হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সংযোগ ভেঙে যায়। এক ইসরায়েলি আবাসন কর্মকর্তা বলেন, “বাস্তবে চাহিদা কম, তবে উদ্দেশ্য হলো যত বেশি সম্ভব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।”


সহিংস দমন ও উৎখাত

সরকারি নীতির বাইরে বসতি স্থাপনকারীরা প্রায়শই সহিংসতা ব্যবহার করছে। অনেক গ্রামীণ ফিলিস্তিনি পরিবার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সেনাদের নীরব সমর্থনে, যারা প্রায়ই বসতি স্থাপনকারীদের রক্ষা করে। সেনা কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, এগুলো নিম্নপর্যায়ের সেনাদের “অননুমোদিত উদ্যোগ” মাত্র।

পশ্চিম তীরে সেনা অভিযান ক্রমশ গাজার মতো রূপ নিচ্ছে। জেনিন ও তুলকারেমে অভিযান পুরো পাড়া ধ্বংস করে দিয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজায় রক্তপাত বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এই মাসেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আরও কিছু পশ্চিমা দেশ এই পথে হাঁটতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতীকী স্বীকৃতি বাস্তবে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়তে পারবে না। উল্টো এটি ইসরায়েলি ডানপন্থিদের আরও উত্তেজিত করতে পারে।


সংযুক্তির হুমকি

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় কেউ কেউ পশ্চিম তীরকে সরাসরি সংযুক্ত করার দাবি তুলছেন। কেউ প্রস্তাব করছেন আংশিক, আবার কেউ চাইছেন ৮২% পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের আওতায় আনতে। নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছেন না। তিনি এটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ধরে রেখেছেন, যেমনটি গাজা নিয়ে করছেন।


যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ও ক্রমশ সংকুচিত পশ্চিম তীর—দুই ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের জন্য ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের আশা দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে। নেতানিয়াহু তার জোটের অতিরাষ্ট্রবাদী অংশীদারদের খুশি রাখতে গিয়ে কার্যত ফিলিস্তিনিদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছেন এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় যুদ্ধের শেষ তিন মাসে নবজাতকের মৃত্যু বেড়েছে ভয়াবহভাবে

ইসরায়েলের দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের উত্থান

০১:০৮:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হোমেশে নতুন সূচনা

১ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে পশ্চিম তীরের দখলকৃত হোমেশ বসতিতে ছোট্ট একটি শিশুতোষ বিদ্যালয় চালু হয়। এটি সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হলেও এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হোমেশ ছিল সেই বসতিগুলোর একটি, যা ২০ বছর আগে এরিয়েল শারনের “ডিসএনগেজমেন্ট” পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। গাজা ও আংশিক পশ্চিম তীর থেকে সে সময় ইসরায়েল প্রত্যাহার করেছিল।

আজ আবার হোমেশের পুনরায় খোলা বসতি স্থাপনকারীদের জন্য একপ্রকার বিজয়। তারা বহুদিন ধরেই এই জায়গায় ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল। এখন কিছু পরিবার ফেরত আসায় তাদের রাজনৈতিক শক্তি আরও দৃশ্যমান হয়েছে। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী এবং বসতিবাসী বেজালেল স্মোত্রিচ উদ্বোধনে বলেন, “এখানে শিশুদের হাসি-গানই প্রমাণ করবে যে বসতি উপড়ে ফেলার চিন্তা বৃথা।”


গাজা যুদ্ধ ও নতুন প্রভাব

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধ বসতি স্থাপনকারীদের আরও সাহসী করে তুলেছে। স্মোত্রিচসহ ডানপন্থি নেতারা খোলাখুলিভাবে গাজা উপত্যকায় ২১ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে উৎখাত করে ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপনের ডাক দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করছেন, ইসরায়েল গাজায় স্থায়ীভাবে থাকতে চায় না। তবে তিনি কখন বা কীভাবে সেনা প্রত্যাহার করবেন তা স্পষ্ট করেননি।

সরকারি মন্ত্রী ও নেতারা এটিকে একপ্রকার “অলৌকিক সময়” বলে আখ্যা দিচ্ছেন। বাস্তবে গাজায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, ৭০% ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জনগণকে সংকুচিত ঘেরাটোপে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা নতুন সড়ক তৈরি করছে সামরিক প্রয়োজনে বলে দাবি করলেও বসতি স্থাপনকারীরা ইতিমধ্যেই এসব এলাকায় নতুন বসতির মানচিত্র আঁকছে।


পশ্চিম তীরে বসতি বিস্তার

বর্তমানে পশ্চিম তীরে প্রায় ৫ লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করে। সংখ্যার দিক থেকে ফিলিস্তিনি অনেক বেশি হলেও ভূমির নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ শক্ত হচ্ছে ইসরায়েলিদের হাতে। শুধু গত কয়েক বছরে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন সড়ক তৈরি হয়েছে, যা শুধুমাত্র ইসরায়েলিদের জন্য।

সম্প্রতি সরকার তিন হাজার সাতশ পঞ্চাশ নতুন বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোর অধিকাংশ কৌশলগতভাবে স্থাপিত হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সংযোগ ভেঙে যায়। এক ইসরায়েলি আবাসন কর্মকর্তা বলেন, “বাস্তবে চাহিদা কম, তবে উদ্দেশ্য হলো যত বেশি সম্ভব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।”


সহিংস দমন ও উৎখাত

সরকারি নীতির বাইরে বসতি স্থাপনকারীরা প্রায়শই সহিংসতা ব্যবহার করছে। অনেক গ্রামীণ ফিলিস্তিনি পরিবার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সেনাদের নীরব সমর্থনে, যারা প্রায়ই বসতি স্থাপনকারীদের রক্ষা করে। সেনা কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, এগুলো নিম্নপর্যায়ের সেনাদের “অননুমোদিত উদ্যোগ” মাত্র।

পশ্চিম তীরে সেনা অভিযান ক্রমশ গাজার মতো রূপ নিচ্ছে। জেনিন ও তুলকারেমে অভিযান পুরো পাড়া ধ্বংস করে দিয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজায় রক্তপাত বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এই মাসেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আরও কিছু পশ্চিমা দেশ এই পথে হাঁটতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতীকী স্বীকৃতি বাস্তবে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়তে পারবে না। উল্টো এটি ইসরায়েলি ডানপন্থিদের আরও উত্তেজিত করতে পারে।


সংযুক্তির হুমকি

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় কেউ কেউ পশ্চিম তীরকে সরাসরি সংযুক্ত করার দাবি তুলছেন। কেউ প্রস্তাব করছেন আংশিক, আবার কেউ চাইছেন ৮২% পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের আওতায় আনতে। নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছেন না। তিনি এটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ধরে রেখেছেন, যেমনটি গাজা নিয়ে করছেন।


যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ও ক্রমশ সংকুচিত পশ্চিম তীর—দুই ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের জন্য ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের আশা দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে। নেতানিয়াহু তার জোটের অতিরাষ্ট্রবাদী অংশীদারদের খুশি রাখতে গিয়ে কার্যত ফিলিস্তিনিদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছেন এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছেন।