অ্যাপলের শক্তির বিরুদ্ধে প্রতীক খোঁজা
ডেনমার্কের রাজনীতিবিদ মার্গ্রেথে ভেস্টাগার দীর্ঘদিন ধরে অ্যাপলের বাজার নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতীক খুঁজছিলেন। অন্যদিকে, স্পটিফাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল এক শুরু থেকেই অ্যাপলের সঙ্গে সংঘাতে ছিলেন। তাঁর সংগীত ব্যবসার মডেল—সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে অসীম গান শোনার সুযোগ—অ্যাপলের পুরনো ৯৯ সেন্টে একক গান বিক্রির মডেলের সঙ্গে সরাসরি বিরোধ তৈরি করেছিল।
অ্যাপলের লাভজনক ভবিষ্যৎ সংকটে
আজও আইফোন থেকে অ্যাপল বিপুল মুনাফা করছে, কিন্তু তাদের ডিজিটাল জগতের দ্বাররক্ষকের ভূমিকা আর আগের মতো শক্তিশালী নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশ স্মার্টফোনকেন্দ্রিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী টেক কোম্পানিগুলোর দীর্ঘদিনের সমন্বিত লড়াই অ্যাপলকে একচেটিয়া শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এপিক গেমসের জয় এবং প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে এপিক গেমসের প্রতিষ্ঠাতা টিম সুইনি ছিলেন অ্যাপলবিরোধী লড়াইয়ের মুখপাত্র। ২০২5 সালের এপ্রিলে তিনি আদালতে বড় জয় পান—যেখানে রায় হয় যে আইফোনে থাকা অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের সরাসরি ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে ক্রয় সম্পন্ন করতে পারবে। এতে এপিককে আর অ্যাপলকে ৩০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় না।
ইউরোপে স্পটিফাইয়ের ভূমিকা
ড্যানিয়েল এক-এর স্পটিফাই শুধু প্রতিযোগিতায় থেমে থাকেনি, বরং সারা বিশ্বের আইনপ্রণেতা ও নিয়ন্ত্রকদের প্রভাবিত করেছে। এর ফলেই ইউরোপীয় কমিশন ২০২৪ সালের মার্চে অ্যাপলকে ২ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে। একইসঙ্গে নতুন আইন পাশ হয়, যা অ্যাপ স্টোরের ওপর অ্যাপলের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে। এই প্রচেষ্টা এখন অন্যান্য দেশেও অনুসৃত হচ্ছে।
স্পটিফাই বনাম অ্যাপল মিউজিক
২০১৫ সালে টিম কুক যখন অ্যাপল মিউজিক চালু করেন, তখন এর সাবস্ক্রিপশন মূল্য রাখা হয় ৯.৯৯ ডলার—যা অ্যাপ স্টোরে স্পটিফাইয়ের মূল্যের চেয়ে কম। পার্থক্যের একমাত্র কারণ ছিল অ্যাপলের আরোপিত ৩০ শতাংশ কমিশন। এতে স্পটিফাই ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট থেকে অভিজ্ঞ আইনজীবী হোরাসিও গুতিয়েরেজকে নিয়োগ দেয়।
প্রথম বড় সংঘাত
গুতিয়েরেজ যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর স্পটিফাই তাদের অ্যাপে পরিবর্তন আনে, যাতে নতুন ব্যবহারকারীরা আর অ্যাপলের সিস্টেমে অর্থ প্রদান করতে না পারে। পরিবর্তে দেওয়া হয় “ইমেইল মি” বাটন। এতে অ্যাপল তাদের অ্যাপ আপডেট প্রত্যাখ্যান করে। আলোচনা ব্যর্থ হলে গুতিয়েরেজ অ্যাপলের শীর্ষ আইনজীবী ব্রুস সিউয়েলকে কড়া ভাষায় চিঠি পাঠান।
ইউরোপে নতুন আইন প্রণয়ন
ওয়াশিংটনে ব্যর্থ হওয়ার পর স্পটিফাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা নেয়। সেখানে ভেস্টাগার তাদের প্রধান সহযোগী হন। ইউরোপে স্পটিফাই গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ দেখায়—অ্যাপলের নিয়ম না থাকলে অনেক বেশি ব্যবহারকারী সাবস্ক্রিপশনে যুক্ত হতো। এই তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে তারা ইউরোপীয় কমিশনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে।
ডেটা বনাম প্রতিরোধ
কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, অ্যাপলের বিধিনিষেধে স্পটিফাই প্রায় ২০ শতাংশ সম্ভাব্য সাবস্ক্রাইবার হারাচ্ছিল। অন্যদিকে, অ্যাপল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, স্পটিফাই অ্যাপ স্টোর ছাড়া এতদূর আসতে পারত না।
ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট
অবশেষে ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন “ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট” পাশ করে। এতে অ্যাপলকে ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের বাইরে অন্য পেমেন্ট সিস্টেমে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারির সুযোগ আর থাকেনি। তবে এই আইন কার্যকরে দেরি করার অভিযোগে অ্যাপলকে আবারও ৫০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
অ্যাপল এখনো আপিল করে চলেছে এবং তাদের নতুন পরিকল্পনা স্পটিফাইয়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে, আসন্ন আইফোন উন্মোচনের সময় টিম কুকের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। একদিকে নতুন বিক্রির লক্ষ্য, অন্যদিকে অ্যাপ স্টোর নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধ—অ্যাপল এখন যেন ঝুঁকিপূর্ণ বাতাসে ভেসে চলেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 






















