তেল উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ রাশিয়ায় সম্প্রতি গ্যাসোলিনের দাম হু-হু করে বেড়ে গেছে। ইউক্রেন একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়ে দেশটির বিভিন্ন রিফাইনারি ক্ষতিগ্রস্ত করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দাম বাড়ার প্রবণতা
আগস্ট মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এক্সচেঞ্জে প্রতি মেট্রিক টন গ্যাসোলিনের দাম দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার রুবল (প্রায় ১,০০৯ মার্কিন ডলার), যা বছরের শুরু থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেও দাম ৮০ হাজার রুবলের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে।
রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ থেকে চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত পাম্পে খুচরা দামে ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা দাম কিছুটা সামাল দিলেও এ বৃদ্ধি সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির চেয়েও বেশি।
অর্থনীতির উপর চাপ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রকৃত অর্থে মাত্র ০.৯ শতাংশ বাড়বে। আগের দুই বছরের তুলনায় এ হার অনেক কম, যখন সামরিক ব্যয়ের জোয়ারে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের বেশি ছিল।
জিডিপির অর্ধেক আসে গৃহস্থালি ভোগব্যয় থেকে। জ্বালানির দামের চাপ অব্যাহত থাকলে তা ভোক্তাদের খরচ কমিয়ে দিয়ে অর্থনীতিকে আরও মন্থর করে তুলতে পারে।

ড্রোন হামলার প্রভাব
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলাই দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। আগস্টে রোসনেফটের নিয়ন্ত্রিত রিয়াজান অঞ্চলের একটি রিফাইনারি ও লুকঅয়েলের ভলগোগ্রাদ অঞ্চলের একটি স্থাপনায় হামলা হয়।
শুধু আগস্টেই অন্তত ১০টি তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনা, পাইপলাইন ও টার্মিনাল হামলার শিকার হয়েছে, যা রাশিয়ার মোট রিফাইনারি সক্ষমতার প্রায় ১৫ শতাংশ। কিছু স্থাপনা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে।
ড্রোন হামলায় ইউরোপে অপরিশোধিত তেল সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত দ্রুজবা পাইপলাইন এবং উস্ত-লুগা প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংকট
মস্কোভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ন্যাশনাল এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ডের বিশেষজ্ঞ ইগর ইউশকভ জানান, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার রিফাইনারি খাতকে আরও বিপদে ফেলেছে। নতুন যন্ত্রপাতি আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেরামত ও সম্প্রসারণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ খরচের চাপও গ্যাসোলিনের দাম বাড়াচ্ছে।
চাহিদা ও ঘাটতি
গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ মৌসুমে সাধারণত গ্যাসোলিনের চাহিদা বাড়ে। এ বছর ড্রোন হামলায় বিমান ও রেল চলাচল ব্যাহত হওয়ায় গাড়ি ব্যবহার আরও বেড়েছে।
কিছু এলাকায় ঘাটতি তীব্র। দূরপ্রাচ্যে, যেখানে রিফাইনারি সংখ্যা সীমিত, সেখানে আগস্টজুড়ে পাম্পে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত ইতোরোপু দ্বী

ভ্লাদিভস্তকের এক বাসিন্দা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরুতে তিনি ৯০ মিনিট ধরে পাম্প খুঁজেছেন। পঞ্চম স্টেশনে গিয়ে আশা পেলেও তার আগে স্টক ফুরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক ঘাটতি আগে কখনও দেখিনি। এতে জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ছে, তবু গাড়ি ছাড়া চলতে পারছি না।”
সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ
সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাড়ালেও তা সরবরাহ স্থিতিশীল করতে যথেষ্ট কার্যকর হয়নি। তবে শীতকাল ঘনিয়ে আসায় চাহিদা কিছুটা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূলত ডিজেল ব্যবহার করে, যা পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। তাই গ্যাসোলিন সংকট সামরিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান সংকট ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার দিকে যাবে না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















