কূটনৈতিক অচলাবস্থা ও বার্তা বিনিময়
ওয়াশিংটনে সপ্তাহান্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরোক্ষভাবে বার্তা দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝালেও, গ্রীষ্মকালীন উত্তেজনা বিশেষ করে ভারতের মধ্যে মানসিক ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, তিনি সবসময় মোদির বন্ধু থাকবেন। তবে তিনি ভারতের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন।
মোদি শনিবার এক্স-এ লিখেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইতিবাচক মন্তব্যকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের ‘সমগ্র ও বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব’কে অগ্রসরমান বলে উল্লেখ করেন।

শুল্ক ও রুশ তেলের কারণে উত্তেজনা
গ্রীষ্মে ট্রাম্প ভারতের ওপর চাপ বাড়ান। তিনি ভারতের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ ও রাশিয়া থেকে তেল কেনার সমালোচনা করেন। ৬ আগস্ট তিনি একটি নির্বাহী আদেশে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে তোলার সংকেত দেন, যেখানে রুশ তেল আমদানির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা রাখা হয়।
লবিং কার্যক্রমের তৎপরতা
এই পরিস্থিতির পরপরই মার্কিন লবিং প্রতিষ্ঠান মারকারির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কাত্রা। ১৩ আগস্ট ভারতীয় দূতাবাস মাসিক ৭৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করে।
লবিংয়ের মূল লক্ষ্য ছিল শুল্ক কমানো এবং এইচ-১বি ভিসা রক্ষা করা। ২০২৪ অর্থবছরে অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসার মধ্যে ৭১ শতাংশই ভারতীয়দের জন্য ছিল।
এছাড়া দূতাবাস খোঁজ নিচ্ছে কেন ট্রাম্প, যিনি প্রথম মেয়াদে মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন, এখন ভারতের প্রতি অনুকূল নন।

কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি
ভারত এ বছর যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ কোয়াডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে এবং আসন্ন মাসগুলোতে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে। ট্রাম্প প্রথমে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তার ভারতে না যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রস্তাব
ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ক্রেতা হয়।
অন্যদিকে সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা একটি নতুন কৌশলগত জোটের প্রস্তাব দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বৃহস্পতিবার ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’-এ লিখেছেন, দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, সরবরাহ চেইন ও গোয়েন্দা সহযোগিতার ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা যেতে পারে।
লবিং শক্তিশালীকরণ
মারকারির সঙ্গে চুক্তি ছাড়াও ভারত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প উপদেষ্টা জেসন মিলারের নেতৃত্বাধীন এসএইচডব্লিউ (SHW) পার্টনার্সের সঙ্গে মাসিক ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের চুক্তি করেছে। এছাড়া শীর্ষ পাঁচ লবিং সংস্থার একটি বিআরজি গ্রুপকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর সুরই শোনা যাচ্ছে। বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক বলেন, শেষ পর্যন্ত ভারতকেই ছাড় দিতে হবে এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে হবে।
এইচ-১বি ভিসা নিয়েও কট্টরপন্থী মহল সমালোচনায় সোচ্চার। ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক সম্মেলনে এক কর্মী দাবি করেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতে চাকরি দখল করছে এবং মজুরি কমিয়ে দিচ্ছে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গুরুত্ব
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম দুই দেশের নেতাদের সাম্প্রতিক বার্তা বিনিময়কে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছে। সংগঠনটির মতে, ২১ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক হলো যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারিত্ব, এবং মোদি ও ট্রাম্প উভয়েই এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ দেখাচ্ছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















