ম্যাসাচুসেটসে ছোট কারখানার চ্যালেঞ্জ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সাউদার্ন এলাকায় একটি পুরনো ১৮৯০ সালের কারখানায় ১৫ জন শ্রমিক নবজাতকের জন্য বিশেষ হাসপাতাল সরঞ্জাম তৈরি করছেন। একসময় এটি ছিল বড়সড় উৎপাদনকেন্দ্র, কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে টেইশেইরা পরিবার উৎপাদন বন্ধ করে গুদামজাত ও বিতরণ ব্যবসায় চলে যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করার পর মার্কিন অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে আগ্রহ বাড়লেও টেইশেইরা পরিবার সেই সুযোগ নিতে চায়নি। শ্রমিক সংকট এবং অস্থায়ী চাহিদা নিয়ে সন্দেহ তাদের নিরুৎসাহিত করেছে।
ফ্রাঙ্ক টেইশেইরা বলেন, “এটা ঘটবেই না। শুল্ক এক ধরনের ভুল নীতি, যা শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি করবে।”

ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন অর্থনৈতিক যুগে নিয়ে যাবে। তার বার্তা শ্রমজীবী অঞ্চলে ভোটারদের কাছে সাড়া ফেলে, বিশেষ করে ফাল রিভারে — যেখানে প্রায় এক শতাব্দী পর কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী জয় পান।
কিন্তু অর্থনীতিবিদরা শুরু থেকেই সতর্ক করেছিলেন যে শুল্কের ফলে আমেরিকান ব্যবসা ও ভোক্তাদের খরচ বাড়বে, প্রবৃদ্ধি কমবে, আর উৎপাদকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কর্মসংস্থানে ধাক্কা
প্রায় নয় মাস পর বাস্তব পরিস্থিতি ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। শুধুমাত্র গত মাসেই উৎপাদন খাতে ১২ হাজার চাকরি হারিয়েছে। ব্যবসায়িক জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কোম্পানি শুল্কের কারণে খরচ বৃদ্ধি ও মুনাফায় ক্ষতির মুখে।

মাতুকের অভিজ্ঞতা
ফাল রিভারের বিখ্যাত বিছানার চাদর, তোয়ালে প্রস্তুতকারক মাতুক কোম্পানির মালিক জর্জ মাতুক জানান, এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে শুল্ক তাদের খরচ মাসে ১ লাখ ডলারের বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত ও পর্তুগাল থেকে আনা কাপড় এবং লিশটেনস্টাইন থেকে আনা ডাউন এসব শুল্কের আওতায় পড়েছে।
তিনি বলেন, “শুল্ক থেকে কোনো সুবিধা মিলছে না। বরং খরচ বাড়ায় আমাদের দামও বাড়াতে হচ্ছে, যা বিক্রি কমিয়ে দেবে।”
মাতুক কোম্পানি ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু শুল্কের ধাক্কায় তাদের নতুন যন্ত্রপাতি কেনা ও বাজারজাতকরণ ব্যয় কমাতে হয়েছে। তিনি এই পরিস্থিতিকে “মনোবল ভাঙার মতো” বলে উল্লেখ করেছেন।
ভ্যানসন লেদার্সের দৃষ্টিভঙ্গি
মোটরসাইকেলের চামড়ার জ্যাকেট প্রস্তুতকারী ভ্যানসন লেদার্সের মালিক মাইক ভ্যান ডের স্লুইসেন বলেন, তার ব্যবসার খরচ এ বছর প্রায় ১৫% বেড়েছে। যদিও তিনি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, তবুও শুল্কনীতির সমর্থক নন।
তিনি মনে করেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো সহজেই মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু মার্কিন কোম্পানিগুলো রপ্তানিতে নানা বাধার মুখে পড়ে। তার ব্যবসা একসময় ১৬০ জনকে কর্মসংস্থান দিয়েছিল, যা এখন নেমে এসেছে প্রায় ৫০ জনে।
তিনি বলেন, “আমাদের জন্য বাণিজ্যপথ সবসময়ই অসম ছিল। শুল্ক না থাকাই ভালো, কিন্তু তা বাস্তবে সম্ভব নয়।”
স্থানীয়দের প্রত্যাশা
ফাল রিভারের সাধারণ ট্রাম্প সমর্থকরা এখনো ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ৭২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত পরিবহনকর্মী টম টেইশেইরা বলেন, “আমরা উৎপাদন করতে সক্ষম হওয়া উচিত। এটা একদিনে বদলাবে না, সময় লাগবে।”
তিনি জানান, এখনো তিনি বাজারে বড় কোনো মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করেননি। তবে আগামী এক বছরে যদি দাম না কমে, তখনই তিনি ফলাফল বিচার করবেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি নিয়ে আশাবাদ তৈরি হলেও বাস্তবে তা উৎপাদনশীল খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অনেক কোম্পানি খরচ বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ কমাচ্ছে, কর্মসংস্থানও হ্রাস পাচ্ছে। শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা—সবার মধ্যেই অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, যদিও কিছু সমর্থক এখনো সময় দিতে রাজি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















