রিফাইন্ড তেলের ব্যবহার ও ঝুঁকি
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার রান্নাঘরে সয়াবিন ও রিফাইন্ড তেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। সহজলভ্যতা ও কম দামের কারণে বহু মানুষ প্রতিদিন এই তেল ব্যবহার করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই অভ্যাস আমাদের অজান্তেই শরীরে নীরব ঘাতকের মতো কাজ করছে।
কার্ডিওলজিস্ট ডা. অনুরাগ শর্মা সতর্ক করে বলেছেন, রিফাইন্ড তেল নিয়মিত খেলে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি হয় এবং স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এর চূড়ান্ত পরিণতি হলো হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক।

কেন সয়াবিন তেল বেশি ব্যবহৃত?
বাংলাদেশে সয়াবিন তেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাজারে সহজে পাওয়া যায় এবং দামের দিক থেকেও অনেকের নাগালে। কিন্তু এই তেল বেশিরভাগ সময় রিফাইন্ড প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। ফলে এতে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্ষতিকর ফ্যাট তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত সয়াবিন তেল খাওয়ার ফলে শরীরে ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ফ্যাটের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সরিষার তেলের উপকারিতা
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নার অন্যতম উপাদান হলো সরিষার তেল। অনেকে ভাজা-পোড়া বা আচার তৈরিতে এটি ব্যবহার করেন। চিকিৎসকদের মতে, সরিষার তেলে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। তবে এটি অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে।

নারকেল তেল ও ঘি
দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলে নারকেল তেলও জনপ্রিয়। এতে ভালো ফ্যাট থাকে যা দ্রুত শক্তি জোগায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। অন্যদিকে, ঘি আমাদের রান্নার ঐতিহ্যে প্রাচীনকাল থেকেই আছে। এটি ‘ভালো কোলেস্টেরল’ বাড়াতে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত খেলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ঘি খুব সতর্কভাবে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রান্নায় একধরনের তেল সবসময় ব্যবহার না করে পরিবর্তন করে ব্যবহার করা ভালো। যেমন—কখনও সরিষার তেল, কখনও নারকেল তেল বা বাদামের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে শরীর একই ধরনের ক্ষতিকর ফ্যাট দীর্ঘদিন ধরে জমতে পারে না।

জনগণের জন্য সচেতনতার বার্তা
বাংলাদেশে হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসের হার দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, এর অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার। মানুষ যদি শুধু কম দামের কারণে রিফাইন্ড সয়াবিন তেল ব্যবহার বন্ধ না করে, তবে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। তাই এখনই সচেতন হতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিতে হবে।
এই প্রতিবেদন তথ্যের জন্য প্রকাশিত হয়েছে। কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















