উপন্যাসের কাহিনি ও লেখকের জীবন
বেস্টসেলিং লেখক আর. এফ. কুয়াং (রেবেকা কুয়াং) মাত্র ২৯ বছর বয়সেই একাধারে লেখক ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী। তার নতুন উপন্যাস ‘ক্যাটাবাসিস’-এ দেখা যায় ক্যামব্রিজের শিক্ষার্থী অ্যালিস ল’ এক ভয়ঙ্কর যাত্রায় নেমেছে। তাকে নেমে যেতে হয় পাতালে, উদ্ধার করতে হয় তার নিন্দনীয় একাডেমিক উপদেষ্টাকে, যার মৃত্যুর জন্য হয়তো সে নিজেই দায়ী।
অন্যদিকে কুয়াং নিজে বাস্তব জীবনে সামলাচ্ছেন গবেষণা, পড়াশোনা, শিক্ষকতা ও উপন্যাস লেখা একসঙ্গে। তিনি হাসতে হাসতে স্বীকার করেছেন— “খুব খারাপভাবে সামলাই। পিএইচডি করা খুব কঠিন।”
লেখালেখির ধারাবাহিকতা
কুয়াং এখন পর্যন্ত পাঁচটি বই প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ‘ইয়েলোফেস’ প্রকাশনা জগতের নির্দয় দিক উন্মোচন করেছিল— যেখানে সাংস্কৃতিক আত্মসাৎ ও বর্ণবাদের মতো বিষয় উঠে আসে।
‘ক্যাটাবাসিস’ মূলত একাডেমিক পরিবেশের চাপ থেকে অনুপ্রাণিত। এখানে অ্যালিস ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী পিটার মারডকের পাতালযাত্রা তাদের বাধ্য করে ভালোবাসা, স্মৃতি ও আঘাতের মুখোমুখি হতে।

লেখকের জীবনধারা ও দৈনন্দিন অভ্যাস
কুয়াং বর্তমানে বোস্টনে স্বামীসহ বসবাস করেন। সকালে তিনি সাধারণত সূর্য ওঠার সময় ঘুম থেকে ওঠেন (৬টা থেকে ৭টার মধ্যে)। প্রথম কাজ হয় যোগব্যায়াম, এরপর দৌড়ানো বা স্পিন ক্লাস। তিনি মনে করেন, সকালের শুরুতে কঠিন কিছু দিয়ে করলে দিনটা সহজ হয়ে যায়।
দৌড়ানোর সময় তিনি কখনো রক, কখনো ধ্রুপদী সঙ্গীত শোনেন। তবে এক লেখক বন্ধুর পরামর্শে নিস্তব্ধ পরিবেশেও দৌড়ানো শিখেছেন এবং সেটাকেই সবচেয়ে আনন্দদায়ক মনে হয়েছে।
নাশতায় তিনি পছন্দ করেন দই, ওটমিল, ডিম ও ফল। সম্প্রতি জাপান ভ্রমণের পর থেকে ম্যাচা গ্রিন টি তার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সাধারণত তিনি খোলা পাতার ব্ল্যাক টি, বিশেষ করে আর্ল গ্রে পছন্দ করেন।
লেখালেখির কোনো বিশেষ রীতি নেই
তিনি মনে করেন, যত বেশি নিয়ম বা রীতি যুক্ত করা হবে, লেখালেখি শুরু করাই তত কঠিন হয়ে উঠবে। তাই তিনি ট্রেন, গাড়ি কিংবা লাইব্রেরি— যেখানেই সময় পান, সেখানেই লেখেন। তার লক্ষ্য হলো যেকোনো জায়গায় এবং সময়ে লিখতে পারার অভ্যাস তৈরি করা।
পরকাল নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
‘ক্যাটাবাসিস’ লিখেও তার পরকাল বিষয়ক মতামত খুব একটা বদলায়নি। তিনি খ্রিস্টান পরিবারে বড় হলেও কখনোই চিরস্থায়ী নরক বা স্বর্গে বিশ্বাস করেননি। তার মতে, ভালোবাসাপূর্ণ ও ক্ষমাশীল এক ঈশ্বর অনন্ত শাস্তি দেবেন — এটা অযৌক্তিক।
তিনি সুইডিশ দার্শনিক মার্টিন হ্যাগলুন্ডের বই ‘দিস লাইফ’-এর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত। বইটিতে বলা হয়েছে, চিরকালীন জীবন বিরক্তিকর ও অর্থহীন হয়ে উঠবে। আসল মূল্য রয়েছে সীমাবদ্ধতায়, হারানোর সম্ভাবনায়। তাই কুয়াং এখন প্রতিদিনকে পূর্ণভাবে বাঁচার চেষ্টা করেন, পরকালের আশায় সময় পিছিয়ে না রেখে।

সমালোচনা ও পাঠক প্রতিক্রিয়া
কুয়াং পাঠকদের রিভিউ পড়েন না। তার মতে, প্রকৃত সমালোচনা আসে সম্পাদক, এজেন্ট ও সহলেখকদের কাছ থেকে। তিনি মনে করেন, অজস্র মতামতের ভিড়ে লেখার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। নিজের অন্তরের সমালোচকই তাকে যথেষ্ট কঠোরভাবে মূল্যায়ন করে।
লেখালেখির বাইরে আগ্রহ
ফাঁকে তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেন— লন্ডন রিভিউ অব বুকস, নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকস, দ্য গার্ডিয়ান, বোস্টন গ্লোব ইত্যাদি। এছাড়া তিনি সিনেমার বিশাল ভক্ত এবং গোপনে লেটারবক্সডে সিনেমার রিভিউ লিখে থাকেন।
বর্তমানে তিনি পড়ছেন ‘দ্য আনঅ্যাব্রিজড জার্নালস অব সিলভিয়া প্লাথ’। একইসঙ্গে নতুন ‘সুপারম্যান’ সিনেমা দেখে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ভীষণভাবে আনন্দিত হয়েছেন।
আর. এফ. কুয়াং-এর জীবনে একদিকে একাডেমিক গবেষণা, অন্যদিকে গভীর কল্পকাহিনি রচনা— দুটি ভিন্ন জগৎ একসঙ্গে চলতে থাকে। তবে তার মূল বিশ্বাস স্পষ্ট: জীবন হলো সীমিত সময়ের সম্পদ, তাই এটিকেই সর্বোচ্চভাবে উপভোগ করতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















