৬০ বছরের যাত্রার সমাপ্তি
ভারতের মুম্বাইয়ের ফোর্ট এলাকার একটি পুরনো নব্য-গথিক ভবন থেকে প্রকাশিত হতো পারসি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে পুরনো ও প্রভাবশালী সাময়িকীগুলোর একটি – পারসিয়ানা।
১৯৬৪ সালে ডাক্তার পেস্টনজি ওয়ার্ডেন এই সাময়িকীটি চালু করেন। শুরুতে এটি ছিল শহরের পারসি সমাজের খবর-ঘটনার দলিল। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বজুড়ে পারসিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যমে পরিণত হয়।
কিন্তু ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ৬০ বছরের পথচলার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। সাবস্ক্রাইবার কমে যাওয়া, তহবিলের ঘাটতি এবং উত্তরসূরীর অভাবে সাময়িকীটি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পাঠক ও সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
বন্ধের খবরে পারসি সমাজে শোক নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, এটি একটি যুগের অবসান।
একজন তরুণ পাঠক জানান, “পারসিয়ানা না জানলে আপনাকে কখনোই ‘সত্যিকারের পারসি’ বলা হতো না।”
ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশ থেকে পাঠকেরা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কারও মতে, এটি ছিল শুধু একটি সাময়িকী নয়—বরং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জরথুস্ত্রীদের মধ্যে সেতুবন্ধন।

জেহাঙ্গীর প্যাটেলের নেতৃত্ব
১৯৭৩ সালে মাত্র এক রুপিতে সাময়িকীটির দায়িত্ব নেন জেহাঙ্গীর প্যাটেল। তখন থেকে তিনি এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিকতামূলক পত্রিকায় রূপ দেন।
তিনি এটিকে মাসিক থেকে পাক্ষিক করেন, সংবাদ প্রতিবেদন, কলাম ও ব্যঙ্গচিত্র যুক্ত করেন। সাহসীভাবে স্পর্শকাতর পারসি ইস্যু নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দেন।
তার প্রথম বড় প্রতিবেদন ছিল পারসি সমাজে উচ্চ বিবাহবিচ্ছেদের হার নিয়ে, যা পাঠকদের জন্য ছিল চমকপ্রদ।
বিতর্কিত কিন্তু প্রভাবশালী ভূমিকা
১৯৮৭ সালে সাময়িকীটি আন্তঃধর্মীয় বিবাহের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে, যা পারসি সমাজে তীব্র আলোড়ন তোলে। অনেক পাঠক এর বিরোধিতা করলেও পারসিয়ানা এই ধারা চালিয়ে যায়।
সাময়িকীটি পারসি সমাজের জনসংখ্যা হ্রাস, টাওয়ার অব সাইলেন্সের পতন, এবং অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে নিরপেক্ষ ও খোলামেলা আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে।

সমাজের সাফল্য ও উত্তরাধিকার
সমালোচনার পাশাপাশি পারসিয়ানা পারসি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও লিপিবদ্ধ করেছে। সম্প্রতি তারা বিশ্বের একমাত্র পারসি জাদুঘর “আলপাইওয়ালা মিউজিয়াম”-এর উদ্বোধনের খবর প্রকাশ করেছিল।
১৫ জনের সম্পাদকীয় টিম, যাদের অনেকেই ষাট ও সত্তরের দশকে প্যাটেলের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন, এখন বিদায় নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
অফিসজুড়ে ছড়িয়ে আছে পুরনো সংখ্যার স্তূপ, দেয়ালে খসে পড়া রঙ আর ভাঙাচোরা ছাদ। জেহাঙ্গীর প্যাটেল জানিয়েছেন, শেষ সংখ্যাগুলোতে সাময়িকীর দীর্ঘ পথচলা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, “শেষ দিনে হয়তো একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়া হবে। কোনো কেক বা উৎসব থাকবে না। এটি আনন্দের নয়, দুঃখের মুহূর্ত।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















