বাগেরহাটে টানা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের প্রথম দিন
বুধবার বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন অক্ষুণ্ণ রাখার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের প্রথম দিন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। সকাল থেকে সড়ক অবরোধ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও পথসভায় অংশ নেন সর্বদলীয় যৌথ কমিটির নেতাকর্মীরা। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়।
সকাল ৬টা থেকেই কর্মসূচি অনুযায়ী সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের ডাল ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। জেলার একশোরও বেশি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি, মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফলে বাগেরহাট জেলায় সব ধরনের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ১৬টি রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ থাকে। এ সুযোগে শিশু-কিশোররা ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। তবে চিকিৎসা, পরীক্ষা বা জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষজন মারাত্মক সমস্যায় পড়েন এবং অনেককে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়।

মহাসড়ক অবরোধ ও জনদুর্ভোগ
বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের ফতেপুর, বৈটপুর এবং খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের মাথাভাঙ্গা ও বারাকপুরে সড়ক অবরোধ করা হয়। এমনকি জরুরি প্রয়োজন থাকা মানুষদেরও বাধার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সর্বদলীয় যৌথ কমিটির নেতারা আন্দোলনকারীদের এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলেন।
নেতাদের বক্তব্য ও আন্দোলনের ঘোষণা
সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি ও যৌথ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ সালাম বলেন, “আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। নির্বাচন কমিশনের একতরফা সিদ্ধান্তেই মানুষ কষ্টে পড়েছে। তবে এটি জেলার মানুষের যৌথ দাবি। আমরা একসঙ্গে প্রতিবাদ করছি।”
সারাদিন মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, চিতলমারী, মোল্লাহাট, রামপাল, ফকিরহাট, মংলা ও সদরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। কমিটি জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত না আসলে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

আসন পরিবর্তনের পটভূমি
বাগেরহাট দীর্ঘদিন ধরে চারটি আসনে বিভক্ত ছিল। তবে ৩০ জুলাই আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন একটি আসন কমানোর প্রস্তাব দেয়। এতে জেলা থেকে তিনটি আসন রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত গেজেটে নতুন আসন বিন্যাসে বাগেরহাট-১ (সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মংলা) এবং বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) রাখা হয়। পূর্বে জেলার চারটি আসনের ভিন্ন বিভাজন ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, নতুন বিন্যাসে জনগণের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ
অন্যদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে তারা জানিয়েছেন। বুধবার ছিল টানা তৃতীয় দিনের অবরোধ।
প্রশাসনের নির্দেশনায় যানবাহন বিকল্প রুট ব্যবহার শুরু করেছে। গত শুক্রবার ভাঙ্গা রাউন্ডআবাউটে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করা হয়। প্রশাসনের আশ্বাসের পর মঙ্গলবার থেকে আবার অবরোধ শুরু হয়। আলগি ও হামিরদিসহ ১০টি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে, গাছ ফেলে ও তাবু টাঙিয়ে অবরোধ চালানো হয়।

প্রশাসনের অবস্থান
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান বলেন, আগের দিনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেও প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় গাড়ি আটকে ছিল। পরিবহন মালিকদের বিকল্প রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, “এটি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। স্থানীয়দের স্মারকলিপি আমরা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সমস্যা নয়, তবে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















